Friday, June 13, 2014

স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন নয়

আজ প্রভাত হইতেই মহারাজ মানিক্যবর্মার শরীরটি ঠিক যুত হইতেছে না। সমগ্র গাত্র ম্যাজম্যাজ করিতেছে, চক্ষু রক্তবর্ণ, মস্তক ভার, নাসিকা যে শুধু বন্ধ তাহাই নহে তাহার সহিত নাসিকা দিয়া একদিক্রমে বারিধারাও বয়ে চলিতেছে। তবে জ্বর যে আসে নাই তাহা রাজবৈদ্য পরীক্ষা করিয়া নিশ্চিত হইয়াছেন।

ঘটনা হইল এইরূপ যে রাজা গতকল্য বৈকালে বৎসরের প্রথম কালবৈশাখীর আনন্দ উপভোগের জন্য আপন গৃহিণীদের সঙ্গে বৃষ্টিধারায় সিক্ত হইয়া সামান্য জলকেলি করেছিলেন। এরপর জবজবে সিক্ত গাত্র এবং ততোধিক জবজবে সিক্ত কেশে একটি নিষিক্ত পরভৃতের ন্যায় কাঁপিতে কাঁপিতে এক পাত্র চা সহযোগে দুই গণ্ডা ভর্জিত বার্তাকু ভক্ষণের লোভ সংবরণ করিতে না পারায় বৃষ্টির জল গাত্রে বসিয়া রাজার সামান্য সর্দি হইয়াছে। মানিক্যবর্মা জানেন ঔষধ খাইলে সর্দির উপসম হয় এক সপ্তাহে আর ঔষধ না খাইলে সারিতে সময় লাগে ঠিক সাতটি দিবস, সেই কারণে ইহা লইয়া তিনি সবিশেষ চিন্তিত নন।

তবে অন্য একটি সমস্যা আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে, যাহার কথাই তিনি এক মনে চিন্তা করিতেছিলেন। প্রবল শ্লেষ্মার কারণে রাজার কথপোকথনে জিহ্বা, তালুব্য বা দন্ত অপেক্ষা নাসিকার প্রভাব ক্রমেই বাড়িয়া চলিয়াছে। এদিকে দ্বিপ্রহরে বয়স্যদের সহিত দৈনন্দিন আলাপের কাল আগতপ্রায়। সেথায় দৈনন্দিন বার্তালাপে  সমস্যা হইবার সমূহ সম্ভাবনা, তথাপি মানিক্যবর্মা ভাবিলেন, হাজার হউক তিনি রাজাধিরাজ, সামান্য সর্দির কারণে এই প্রাত্যহিক কার্যসূচি পরিবর্তনের কোন প্রয়োজন নাই।

রাজার বয়স্য বলিতে মহামন্ত্রী, রাজবৈদ্য, বিদূষক এবং সভাগায়ক। অন্যান্য দিবসের ন্যায় আজও বৈকালে পাঁচ ঘটিকার পূর্বেই এনারা রাজ-উদ্যানে এসে মিলিত হইলেন। এনাদের বয়স একে অপরের কাছাকাছি হইলেও মহামন্ত্রী এনাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ। নিজের সুদীর্ঘ, পক্ক, পাংশুল বর্ণ শ্মশ্রুতে অঙ্গুলি চালনা করিয়া তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “মহারাজ, সকাল থেকেই দেখছি আপনি সুস্থ্য নন। ঐ রেশমের বস্ত্র দিয়ে বারবার নাক মুছছেন। এখন আপনি কেমন আছেন? রাজবৈদ্যের কাছ থেকে কোন ঔষধ নিয়েছেন কি?”

“না মঁন্ত্রীবঁর। এ সামান্য সঁর্দি, নাতিউষ্ণ জলে লবণ সঁহযোগে কুলি কঁরিলেই সেঁরে যাঁবে বঁলে মনে হঁয়।”

কথা বলিয়াই রাজন বুঝিলেন, কন্ঠের অবস্থা খুবই সঙ্গিন। বাকিরাও তাহা বুঝিলেন তবে মহামন্ত্রী এবং রাজবৈদ্য তাঁদের বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীরবতা বজায় রাখিলেও বিদূষক গোলকচন্দ্র স্বভাব বাচাল। বলিলেন, “রাজন যে কত আশ্চর্য্য শক্তির অধিকারী তার তো দেখছি সীমা-পরিসীমা নেই। এই মুহূর্তে রাজন শুধু মনুষ্য নয় প্রেতেদের ন্যায় বাক্যালাপেও সক্ষম।”

সভাগায়ক কুমার ভট্ট সাধারণত উদাস হয়ে সর্বদা নিজ অন্তরে সুর ভাঁজিতে থাকেনঅদ্য ঠিক কি হইল জানা নাই তবে গোলকচন্দ্রের কথা শুনিয়া সহসা অট্টহাস্য করিয়া উঠিলেন তিনি। যদিও তৎক্ষণাৎ তাঁর ভ্রান্তি উপলব্ধি করে লজ্জিত হইয়া নিজ মস্তকের পশ্চাৎ দিকে তুরঙ্গম পুচ্ছের ন্যায় সংক্ষিপ্ত ঝুঁটিতে হস্ত বুলাইতে লাগিলেন তিনি।

কিন্তু যা গোলমাল হইবার তাহা ইতিমধ্যে ঘটিয়া গিয়াছে। রাজা তাঁর রক্তবর্ণ চক্ষুকে আরো আরক্তিম করিয়া তুলিলেন এবং অতঃপর রাজন্যসুলভ খেয়ালের বশবর্তী হইয়া বিদূষককে কিছু না বলিয়া সভাগায়ক কুমার ভট্টের প্রতি রোষকষায়িত হইয়া বলিলেন, “আমার এই দূর্দশায় আপনি আনন্দ পাচ্ছেন সভাগায়ক! আমার আদেশ এই মুহূর্ত থেকে সর্বদা আপনাকে আপনার নাসিকা দিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করতে হবে। এর সামান্যতম অন্যথা হলে আপনার মস্তক ছেদ করে সেটি আমি নিজ গর্ভগৃহে রেখে দেব। আর মস্তক না থাকলে আপনার পক্ষে সঙ্গীতচর্চা বা রাজভোগ ভক্ষণ যে সম্ভব হবে না তা আশা করি আপনি নিজেও বুঝতে পারছেন!”

----------------------------------

একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেল বিখ্যাত গায়ক কুমার শানুর। ঘড়িতে এখন বাজছে রাত চারটে। বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে গিয়ে ভালো করে ঘাড়ে-মাথায় ঠান্ডা জল দিয়ে এসে তাঁর ত্রিশ তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফ্রিজ থেকে বের করে আনা দুটো রসগোল্লা খেতে খেতে ভাবলেন, “বাঁব্বা, এই একটাঁ আঁদেশ যেঁ আঁর কঁত জন্ম বঁয়ে বেঁড়াতে হঁবে কেঁ জানে!”

[কুমার শানু বা তাঁর ভক্তদের যদি এই লেখা কোনভাবে খারাপ লাগে তাহলে তাঁর জন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে রাখলাম।]

"It’s always very easy to give up. All you have to say is ‘I quit’ and that’s all there is to it. The hard part is to carry on”