প্রথমেই বলেনি যে, তোরা যদি ভাবিস যে তোদের ঋতুদাকে নিয়ে লিখছি তাহলে কিন্তু ভুল করছিস। ওকে নিয়ে আপাতত কিছু লিখতে চাই না। তবে হ্যাঁ, ঋতুদা হলেন গিয়ে প্রথম মানুষ যিনি আমাকে সত্যজিৎ রায়ের মৃত্যুর ভাল দিকটি বুঝিয়ে দিয়েছেন। ভেবে দেখ, সত্যজিৎ রায় জীবিত আর তাঁকে নিজের অনুষ্ঠানে ডেকে ঋতুপর্ণ শুরু করলেন, “মানিকদা বল...’’! মরণ!!
তার চেয়ে বরং পার্ণ মিত্রকে নিয়ে লিখতে বেশি পছন্দ করতুম। কিন্তু মুশকিল হল যে, খবরের কাগজে ভদ্রমহিলার ছবি দেখে ওনাকে বেশ উষ্ণ লাগলেও ওনার কোন সিনেমা এখন দেখা হয়ে ওঠেনি। সুতরাং পার্ণ মিত্রও বাদ।
তাহলে পরে রইল আদি অকৃত্তিম আদিরস। পর্ণোগ্রাফি ও তৎসংলগ্ন আলোচনা।
প্রথমেই পাঠকদের একটা প্রশ্ন করতে চাই। ‘Pornography’-র বাংলা কি? এই প্রশ্নটা অনেকদিন ধরেই মাথায় ঘুরছে। ‘প্রাপ্ত-বয়স্কদের সিনেমা’ এবং ‘নীলছবি’ এই দুটিই যথাক্রমে ‘Adult movie’ এবং ‘Blue Film’-র সরাসরি বাংলা অনুবাদ। লিখতে গিয়ে অভিধানে দেখলাম ‘Pornography’ মানে ‘অশ্লীল রচনা, চিত্র প্রমুখ’। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক জমল না। তার বদলে বরং চালু ভাষায় ‘পানু’ শব্দটা অনেক বেশি আকর্ষণীয়, ইংরেজিতে যাকে বলে, Catchy!
তা পানু কি? কাকে বলে? খায়, চোতা বানায় না মাথায় দেয়? এসব প্রশ্নের উত্তর যাঁরা জানেন না তাঁরা বরং কষ্ট করে এই লেখাটা না পড়ে অন্য কোন লেখায় চলে যান। আমি একটুও দুঃখ পাব না। কিন্তু ঐ সব দুষ্টু-মিষ্টি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তাঁদের নির্মল শিশু মনকে দূষিত করতে আমার ভীষণ লজ্জা করবে।
এই লেখা বরং তাঁদের জন্য যারা ছোটবেলায় বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে ডাক্তার-ডাক্তার খেলা দিয়ে শুরু করে, ছোটখাট পত্রিকা হাত বদল করতে করতে, শনি-রবিবার পাড়ার কেবলের গভীর রাতের সিনেমা আর রেন টিভি দেখে, তারপরে অন্তরজালের পৃথিবী-র বিভিন্ন প্রাপ্তবয়স্ক পাতায় ঘোরাঘুরি করে, নলবন, পামেলা অ্যান্ডারসনের মধুচন্দ্রিমা ভিডিও দেখে হাত পাকিয়েছেন (No pun intended)। যারা বার কতক হ্যাকারের আক্রমণ সহ্য করেও টরেন্ট থেকে পানু নামান অথবা পানু দেখে দেখে বিরক্ত হয়ে পানু দেখা থেকে অবসর নিয়েছেন এবং হয়তো নিজেরাই করে থাকেন। সেই সমস্ত পানুপ্রিয় জনগণের জন্যই আমার এই লেখা উৎসর্গিত।
তবে যদি ভেবে থাকেন এই লেখায় আমি আমার জীবনের পানু দেখার ঘটনাগুলো তুলে ধরব তাহলে ভুল করবেন। আমি কালিদাস নই এবং নিজের ডালে কুড়ুল মারার কোন ইচ্ছাই আমার নেই। বরং পানু নিয়ে বেশ কিছু মজার গল্প আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্যই এই লেখা।
পানুর রেটিং ব্যাপারটা চিরকালই বেশ মজার লাগে আমার। সেই চিরকালীন X, XX, XXX থেকে শুরু করে 7X অবধি শুনেছিলাম যার অনেকগুলিই নাকি তৈরি মানুষের সঙ্গে মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রানী যেমন ঘোড়া, কুকুর অথবা রাখি সাওয়ান্তকে দিয়ে! তবে, এই নিয়ে একটা মজার গপ্পো এই ফাঁকে বলেনি। আমায় যারা চেনেন তাঁরা জানেন যে, আমি অত্যন্ত দ্রুত কথা বলি এবং আমার কথা একবারে বোঝা হয়তো খুব সহজ নয়। এহেন আমি একবার গড়িয়াহাটের ফুটপাতের নকল সিডির দোকানে ‘শ্রেক থ্রি’ নামক অ্যানিমেশান সিনেমাটি খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। অনেকগুলো দোকানে বিফল হওয়ার পর এক দোকানদার আমার মুখে ‘শ্রেক থ্রি’ শুনে গম্ভীরভাবে মাথা নেড়ে বলল, “আছে।“ তারপর আমায় এক কোনায় নিয়ে গিয়ে তার ব্যাগ থেকে বেশ কিছু পানু সিনেমার সিডি বের করে ফেলল। এসব তো চাইনি বলায় লোকটা বেজায় ব্যাজার হয়ে বলল,”বললেন তো সেক্স থ্রি, তাই 3X পানু দেখাচ্ছিলাম!!”
বোঝ ব্যাপারখানা! তবে এরকম ভুল হয়েই থাকে! আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু আইআইটিকে-র ল্যান থেকে পানু নামাতে এতোটাই এক্সপার্ট হয়ে উঠেছিল যে, শেষের দিকে গেমস নামাতে গেলেও পানু নামিয়ে ফেলত!!
আহা, সেই আইআইটি-র দিনগুলোতে পানু ব্যাপারটা বেশ মজাদার ছিল। যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই জানতে পেরেছিলুম যে, আমাদের এক সহপাঠীর কাছে নাকি ৪০-৫০ GB পানু আছে এবং সেই পানুগুলো নাকি XX- XXX আলাদা করে ফোল্ডার বানিয়ে রাখা আছে। বুঝতেই পারছেন, সেই মুহূর্তেই আমাদের কাছে তার সম্মান এবং গুরুত্ব যথেষ্ট পরিমানে বৃদ্ধি পেয়ে যায়। সে নিজেও যথেষ্টই দয়ালু ছিল এবং বন্ধুদেরকে অত্যন্ত খুশি মনেই সে তাঁর হোস্টেলের ঘরে পানু দেখার আমন্ত্রণ জানাত। এমনকি কোন কোন সময় সে না থাকলেও লোকে তাঁর ঘরে গিয়ে ফোল্ডারগুলো খুলে দেখতে পারত।
হোস্টেলে তার ঘরে প্রায়েই পানু দেখার আসর বসত, যে আসরে একবার আমাদের মেসে কর্মরত এক যুবক আমাদের আর-এক বন্ধু (যে সন্ধ্যেবেলা জগিং করতে গিয়ে এক প্রোফেসরের পোষা কুকুরের কামড় খেয়ে শয্যাশায়ী ছিল)-র জন্য খাবার নিয়ে ঢুকে পরেছিল। বুদ্ধিমান যুবকের দল তাকে দেখেই পানুটা বন্ধ করে দিলেও সেটার এক ঝলক তার চোখে পরে যায়। সুতরাং খাবার দেওয়ার পর দেখলাম সে আর যায় না। জিজ্ঞেস করায় লজ্জা লজ্জা মুখ করে সে বলল, “ভাইয়া, থোড়া চালাইয়ে না!!” সে এক কাণ্ড!
পানুর একটা খুব পরিচিত ছকে পিজ্জা-ডেলিভারির লোকটিই সাধারণত পানুর নায়ক হয়। তবে আমাদের কেসটায়, খাবার ডেলিভারির লোকটিই পানু দেখতে ধরে ফেলেছিল এবং আবার নিজেই দেখতে চেয়েছিল।
পর্ণোগ্রাফি দেখতে বা পড়তে গিয়ে ধরা পরে যাওয়া নিয়ে অনেক মজার গপ্পোই শুনেছি তবে আমার সবচেয়ে প্রিয় যে গল্পটি, সে গল্পের নায়ক হোস্টেলে থাকত। হঠাৎ তার মা চলে আসায় সে তার ঘরের পানু পত্রিকাগুলো তার বিছানার চাদরের তলায় লুকিয়ে ফেলে। কিন্তু সে কি আর জানত যে তার মা যাওয়ার সময় তার বিছানার চাদরটা কাচবার জন্য নিয়ে যেতে চাইবেন! এর পর কি হয়েছিল সেটা নিজেরাই বুঝে নিন।
পানু দেখতে গিয়ে ধরা পড়ার অসংখ্য গল্পই আছে। বাবা-মায়ের বা খুড়তুতো দাদা, মাসতুতো দিদিদের কাছে ধরা পড়া, স্কুল-কলেজে শিক্ষকদের কাছে ধরা পড়া ছাড়াও আছে গার্লফ্রেন্ডের কাছে ধরা পড়া। আর বিশ্বাস করুন, কোন কোন ক্ষেত্রে সেটাই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। কিছু কিছু মেয়ে জন্ম থেকে জ্ঞানের সাগর হয়, এবং তার বয়ফ্রেন্ডের নৈতিক চরিত্র নিয়ে মন্তব্য করতে এক ফোঁটাও পিছপা হয়না। সুতরাং পানু দেখতে ধরা পড়ার পর দু ঘন্টার বক্তৃতা, কান্নাকাটি ও নানা রকম প্রতিজ্ঞা করার পরেই তাদের থেকে ছাড় মেলে।
তবে আজকালকার অনেক মহিলাই বেশ আধুনিকা, তারা অবশ্য তাদের বয়ফ্রেণ্ডের সঙ্গেই পানু দেখা পছন্দ করে। এমনকি আমি সেই গার্লফ্রেন্ডটিকেও চিনি যে তার বয়ফ্রেন্ড পানু দেখে শুনে বলেছিল, “আজকে থেকে পানু দেখা বন্ধ! নাহলে আমি আর আছি কি করতে!!”
পানু দেখতে গিয়ে ধরা পড়ার সাম্প্রতিকতম ঘটনাটা ঘটেছে কর্ণাটকের বিধানসভায়, যেখানে রাজ্যের শাসক দল বিজেপির তিন পদস্থ মন্ত্রী বিধানসভার কাজ চলাকালীন নিজেদের সেলফোনে পানু দেখতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছেন এবং ফলস্বরূপ তাঁদের পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন আবার ‘শিশু ও নারীকল্যান’ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত! ধরা পড়ার পর সাম্প্রতিক অনেক ঘটনার মত এটা নিয়েও মিডিয়াতে প্রচুর হইচই হয়েছে, হচ্ছে। কেউ বলেছে নৈতিক চরিত্রের অধঃপতন, কেউ বলেছে নোংরামি আবার কোন কোন বিজেপি সমর্থকদের মতে এ সবই বেকার মিডিয়ার লাফঝাঁপ, ঘটনাটা মোটেই তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।
সোজা, সরল কথাটা হল, কেউ তাঁর নিজের বাড়িতে দিনের মধ্যে ২৪ ঘন্টা পর্ণোগ্রাফি দেখলেও কারুর কিছু বলার নেই। এটি সেই মানুষটির ব্যক্তিগত ব্যাপার এবং সেখানে নাক গলাবার অধিকার কারো নেই। একদম!
কিন্তু, আমার আপত্তি হচ্ছে কাজের সময় কাজের জায়গায় বসে পানু দেখায়। আজকে একজন চাকুরে লোক যদি তাঁর অফিসে পর্ণো দেখতে গিয়ে ধরা পড়েন, তাহলে হয় তাঁর চাকরিটা যাবে নয় বড়সড় কোন শাস্তি পাবেন। মন্ত্রীদের জন্য বিধানসভা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজের জায়গা, যেখানে সাধারণ জনগণের উন্নতির জন্য আলোচনা হয় সেখানে বসে রাজ্যের মন্ত্রীরা পানু দেখছেন সেটা একেবারেই অভিপ্রেত নয়। আর সেইজন্যই এটি একটি বড় ঘটনা এবং ভবিষ্যতেও এই ধরনের ঘটনা ঘটা একবারেই কাম্য নয়।
এই তথাকথিত ‘পর্ণোগেট’ নিয়ে ইন্টারনেটে প্রচুর মজার জোকস চালু হয়েছে। ফেসবুক এবং টুইটারে গুচ্ছ গুচ্ছ ‘Funny One-Liner’ প্রকাশিত হয়েছে এই নিয়ে। তবে সবচেয়ে নির্মম জোকসটা হয়তো না বুঝেই করেছেন গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পরিকর। নিজের রাজ্যের ভোটের প্রচারে বেরিয়ে এই ঘটনার স্বপক্ষে তাঁর মন্তব্য, “ওনারা তো শুধু পর্ণোগ্রাফি দেখছিলেন, নিজেরা তো আর করেননি!!”
সুতরাং আমার প্রিয় সুবোধ পাঠক-পাঠিকারা, যাঁরা পানু দেখেন কিন্তু পানু সিনেমায় অভিনয় করেন না তাঁরা নিঃসঙ্কোচে পানু দেখতে থাকুন। কারন আপনারা ভাল লোক, আদর্শ নাগরিক, আপনারা পানু দেখছেন কিন্তু করছেন না। এবং এইসব ভাল লোকেদের মধ্যে আমি নিজেকেও গন্য করে প্রচণ্ডভাবে গর্বিত হচ্ছি।
পুনশ্চঃ লেখাটা ওখানেই শেষ করে দেওয়ার পর মনে হল, লেখার শেষের দিকটা কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেল। হয়তো কেউ কেউ পড়তে পড়তে ঐ জায়গাটা বাদ দিয়ে যেতে পারেন বা ঘুমিয়ে পড়তে পারেন। তাই তাঁদের জন্য সবার শেষে আর একটা ছোট্ট গপ্পো।
এটাও এক বন্ধুর কাছে শোনা। সেই বন্ধুটির আর একজন বন্ধুর অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল টিভিতে লোকাল কেবলের চালানো শনি-রবিবারের গভীর রাতের সিনেমাগুলো দেখার, কিন্তু তার বাবা-মা র জন্য কোনদিনই সে দেখতে পেত না। অবশেষে এক দিন ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় এবং তার বাবা-মা তাকে বাড়িতে একা রেখে অন্য কোথাও যান একদিনের জন্য। সন্ধ্যে থেকেই সে চরম উত্তেজিত, সময় যেন কাটছেই না তার। এগারোটা, বারোটা, সাড়ে বারোটা এমন করে ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলে কিন্তু সিনেমা আর শুরু হয় না। কেবল চ্যানেল চালিয়ে রেখে একঘেয়েমিতে শেষ অবধি টিভির সামনেই ঘুমিয়ে পড়ে সে। রাত আড়াই-টের সময় হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে সে দেখে সামনে টিভি চলছে, সেখানে সিনেমা-র শেষের নাম দেখানো চলছে! সেদিনকার মত রাতের সিনেমা শেষ হল তখুনি!!
জমকালো লিখেছো!! 'পানু' নিয়ে এতো সহজ লেখা দারুণ আনন্দ দিলো... চালিয়ে যাও!
ReplyDeletehmmm bapok!! suru korle purota na pore uthte iche korbe na, dt is d best part .. lovely!
ReplyDeleteosadharon hoeche. ekta ghotona mone porlo. sunechilam IITKGP te ekta chele saradin ghore bose light off kore panu dekhto. ta ekdin hotel super ghore dhuke poray se tarahurote computer ta off na kore sudhu monitor ta off kore. Super dhuke dekhen ondhokar ghor, ar background e oi awaz. bakita bujhtei parchis
ReplyDeletehaha too good hoyechhe...seisob IIT'r ghoTona! mone achhe sei LAN'e monitoring bere jawaar por sobaai 'Bhajan' folder'e panu rakhto? :D
ReplyDeleteHna, seita ar likhlam na... Kanur goppota-o darun... erokom aro goppo share hok!!
ReplyDeleteShreya, Thank You Babu... double thank you lekhata tor office-e prochar korar jonyo!!
ReplyDeleteKanad-er golpo shune ekta chintadhara mathay elo: panu mp3 hoy ki?
ReplyDeleteAbhishekda, Dhritarashtra ke jigges kore dekha jete pare!!
ReplyDeleteDhonyobaad Sunando, tomar comment ta keno jani na etodin spam-e chhilo!!
ReplyDeleteদেখেছো নিশ্চয়ই...
ReplyDeletehttp://kothatobolarjonyei.blogspot.in/2012/05/blog-post_10.html
এই যে... আমার কিন্তু গোঁসা হয়েছে...
ReplyDeleteব্লগ রোলে আমাদের নাম নেই কেন?
:(