Saturday, May 27, 2017

ইন্দোনেশিয়ার ডায়রি - ২

প্লেনযাত্রা ঘটনাবিহীন ছিল। নতুন দেশ ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়ার সময় রাত সাড়ে দশটায় নেমে দেখা হল আমাদের ড্রাইভার এবং গাইড ফরজির সঙ্গে!
প্রথমেই ফরজির সঙ্গে আমাদের প্ল্যানটা একবার ফাইনাল করে নিলাম। প্রথমে আমরা ডিনার করব, তারপর প্রায় ঘন্টা তিনেক ড্রাইভ করে পৌঁছব মাউন্ট ব্রোমোর কাছে। সেখানে একটা স্পটে আমাদের গাড়ি ছেড়ে একটা জিপ নিয়ে যেতে হবে আর এক ঘন্টা। জিপ পৌঁছে দেবে পেনানজাকান হিলের তলায়। সেখান থেকে একজন গাইড নিলে সে আমাদের রাস্তা দেখিয়ে সুবিধামত ভিউপয়েন্টে নিয়ে যাবে, যেখান থেকে ব্রোমো পাহাড়ের উপর সূর্যোদয়ের সময় আলোর খেলা দেখা যাবে! ব্রোমো নামটা কিন্তু এসেছে ব্রহ্মা থেকেই। ব্রোমোর সঙ্গে সেখানে আছে বাতুর এবং সুমেরু পর্বত, যে সুমেরু পর্বতে নাকি ভগবানদের ঘরবাড়ী। সূর্যোদয়ের পর সেই জীপে করেই আরো একটা-দুটো জায়গা দেখার পর আমরা গাড়ীতে ফিরে আসব। তারপর গাড়ী নিয়ে চলে যাবো মাদিকারিপুরা জলপ্রপাত। তবে শেষ অবধি গাড়ী যাবে না, সেখানে জঙ্গলের মধ্যে বাইকে চড়ে যেতে হবে জলপ্রপাতের কাছে। সেসব দেখে ফাইনালি ও আমাদের নামিয়ে দেবে এয়ার পোর্টে।

পরিকল্পনা মত মোটামুটি ঠিকঠাক একটা খাবার জায়গায় নিয়ে যেতে বলে আমরা রওনা দিলাম। রাতে ভালোই ডিনার হল। নাসি গোরেং, ওখানকার স্থানীয় বিফ কারি এবং ভাত ইত্যাদি। এখানে একটা মজার অভিজ্ঞতা হল। লম্বা যাত্রার আগে আমরা সকলেই একবার বাথরুমটা ঘুরে যাবো ভাবছিলাম। ওখানকার বাথরুমটা ছিল পেয়িং টয়লেট। তা সেখানে ঘুরে আসার দক্ষিণা ২০০০ রুপিয়া! ব্যাপারটা কিছুই নয়, বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার রুপিয়ার ক্রয়মূল্য খুবই কম। ভারতীয় এক টাকা ওখানকার ২০০ টাকা। দেশের সবচেয়ে ছোট নোট ১০০০ রুপিয়ার, সেখান থেকে ১ লাখ রুপিয়া অবধি আছে। সঙ্গে ৫০০ আর ১০০০ রুপিয়ার কয়েন!
অতঃপর রাতের অন্ধকারে গাড়ীর ফ্রি ওয়াইফাইতে গান চালিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম ব্রোমো পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শহরের রাস্তা ছেড়ে গাড়ী ফাঁকা রাস্তা ধরল। দুদিকে গাছপালা, ছোট ছোট বাড়ীঘর। কথামত তিনটে নাগাদ ভিড়ে-ভিড়াক্কার একটা জায়গায় পৌঁছলাম। জানা গেল, এখান থেকেই জিপ নিতে হবে। গাড়ী থেকে বেরিয়ে বুঝলাম ঠাণ্ডা ভালোই। সেটা মাথায় রেখে গরম কাপড় যথেষ্ট আনা হয়েছিল। সেগুলো ভালো করে চড়িয়ে আমরা উঠে বসলাম আমাদের লাল রঙের জীপে।
দেবাদ্রির ক্যামেরা থেকে 
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হালকা কুয়াশার মধ্যে দিয়ে গাড়ী চলল। আমি তখন প্রায় ঘুমন্ত। ওই জিপেই চট করে একটা পাওয়ার ন্যাপ মেরে নিলাম। জিপ এসে  থামল এক পাহাড়ের নিচে। ঐ রাত তিনটেও সেখানে কী ব্যস্ততা! একের পর এক জীপ থেকে আমাদের মত অন্য দলবল এসে নামছিল। সঙ্গে টর্চ হাতে গাইডের দল, চা-কফি-সিগারেট বিক্রেতার দল। সেরকম এক গাইড ঠিক করে মিনিট পাঁচসাত অন্ধকারের মধ্যে পেনানজাকান পাহাড়ে উঠে একটা সুবিধামত জায়গায় ঘাসের ওপর মাদুর পেতে বসিয়ে দিয়ে গাইড বাবাজি কেটে পড়ল। যাওয়ার আগে চা-কফিওয়ালা ডেকে আনবে বলেছিল, কিন্তু সেটা শেষ অবধি আসেনি।
চারদিক তখনও অন্ধকার, সামনে পাহাড়ের ঢাল নেমে গেছে। তার সামনে অনেকটা ধোঁয়া ধোঁয়া জায়গা আর আরো সামনে জমাট অন্ধকার। বুঝলাম ঐ ধোঁয়াগুলো কুয়াশা আর জমাট অন্ধকারগুলো পাহাড়। কোনটা ব্রোমো সেটাও দেখিয়ে দিয়ে গেল আমাদের গাইড।
তারপর বসেই আছি। আশেপাশে বিভিন্ন দেশের আরো মানুষ আসছেন। কেউ আমাদের পাশেই বসছেন। কেউ আরো এগিয়ে যাচ্ছেন। দেবা আর ড্যুডও ঘুরে দেখে এল সামনে বেটার ভিউপয়েন্ট আছে কিনা। বসে ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে গুলতানি চলছে। আস্তে আস্তে অন্ধকার হালকা হচ্ছিল। দূরে ব্রোমো পাহাড় আর তার ওপরে একটা মেঘের স্তর মনে হচ্ছিল। তারপর আস্তে আস্তে বুঝলাম ঐ মেঘ/ধোঁয়ার গঠনটা খুব ধীরে ধীরে চেঞ্জ হচ্ছে। যাইহোক আস্তে আস্তে ভোরের আলো ফুটলেও কুয়াশার জন্য সূর্যের দেখা পাওয়া গেল না। কুয়াশার মধ্যে ব্রোমো পাহাড়ের ধোঁয়া দারুণ লাগছিল কিন্তু সূর্যোদয় দেখার মজাটা পাওয়া গেল না। যাই হোক শ খানেক ছবি এবং দুশ-আড়াইশো সেলফি তোলার পর পাহাড় থেকে নামা হল।
দেবাদ্রির ক্যামেরা থেকে
পরবর্তী গন্তব্য কোথায় জানতাম না। একটু পরে দেখি একটা বিশাল বড় মাঠের ধারে গাড়ী এসে নামিয়ে দিয়েছে। গাড়ী থেকে নেমে দেখি পুরো মাঠটার রঙ কালো এবং সেটা গিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার পর থেকে ব্রোমো পাহাড় উঠে গেছে যার মাথা থেকে একটানা ধোঁয়া বেরিয়ে চলেছে এবং সেটা সেখান থেকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। বুঝলাম ঐ আগ্নেয়গিরির লাভা আর ছাইয়ের কারণেই মাঠটা পুরো কালো। নেমে, মেয়ের দল টুক করে ফ্রেশ হয়ে এলো। আমরা এলোমেলো ঘুরছিলাম তারপর বুঝলাম ঐ মাঠের মধ্যে দিয়ে হেঁটে গিয়ে পাহাড়ের গায়ে বানানো সিঁড়ি দিয়ে উঠলে একবারে আগ্নেয়গিরির মুখ অবধি পৌঁছনো যাবে। কিন্তু সেই পাহাড়ের সিঁড়ি অবধি হেঁটেও যাওয়া যায় বা ঘোড়ায় করে যাওয়া যায়। সবাই মিলে শেষ অবধি ঘোড়াই নেওয়া হল। ছটি ঘোড়া এবং ঘোড়ার মালিকদের সঙ্গে আমরা চললাম ঘোড়ায় চলে।
আমার প্রথম অশ্বারোহণ। ভাগ্য ভালো, আমার ঘোড়া পাঞ্জের বেশ শান্তশিষ্ট ছিল। দুলকি চালে নিয়ে গেল তবে বেশ এবড়োখেবড়ো সরু রাস্তার মধ্যে দিয়ে মানুষ ও ঘোড়া একসঙ্গে যাচ্ছে বলে ব্যাপারটা বেশ চাপের। আমার সামনেই দুটো মেয়ে একটু অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটছিল। হঠাৎ ঘুরে দেখে পাঞ্জের প্রায় ওদের ঘাড়ের ওপরে, তাড়াতাড়ি সরতে গিয়ে একজন পরেই গেল। তাদের কাটিয়ে আমরা এগোলাম। দলবলের মধ্যে সবার আগে ওই সিঁড়ির কাছে আমিই পৌঁছলাম। ঘোড়া থেকে নামার পর ঘোড়ার মালিকই বলল, "ফোন দাও, ছবি তুলে দিচ্ছি।"
দস্যু সর্দারনী
একে একে বাকিরাও এল, শ্রেয়সীর কাছ থেকে জানা গেল যে, শ্রেয়সীর ঘোড়া খুবই দুষ্টু এবং মাঝে মাঝেই নাকি বেগরবাঁই করেছে তবে সেটা আরোহীর সঙ্গদোষে কিনা জানা গেল না!

আগ্নেয়গিরির মুখ অবধি যাওয়ার সিঁড়িটা বেশ সরু। তাতে করে একজন একজন করে ওঠা আর উল্টোদিক থেকে একজন করে নামা। তার মধ্যে কেউ একজন উঠতে উঠতে ছবি তুলতে দাঁড়িয়ে পড়লেই পেছনে ট্রাফিক জ্যাম। যাই হোক, ওপরে ওঠার পরের দৃশ্যটা অবিস্মরণীয়। ওপরে যে খুব বেশী জায়গা তা নয়। সেই তুলনায় লোক প্রচুরই। কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই আগ্নেয়গিরির পেটের মধ্যে কী হচ্ছে দেখা যাচ্ছে। সঙ্গে একটা অবিশ্রান্ত গুম-গুম আওয়াজ। কিছুটা সময় ওখানে কাটানো হল, ছবি-টবিও তোলা হল। একটা ভাঙাচোরা রেলিং মত আছে, সেটাতেই হেলান দিয়ে বসা হল। সেখানে আবার একটা ছোট গনেশ মূর্তি খুঁজে বের করলাম। বুঝলাম এখানে পুজোও হয়। মিনিট পনেরো পরে আস্তে আস্তে নেমে এলাম সিঁড়ি দিয়ে। ততক্ষণে খুব খিদে এবং জল তেষ্টা পেয়ে গেছে। খাবার ভালো কিছু পাওয়া গেল না। বাকি রাস্তাটাও পায়ে হেঁটেই নামলাম। নিচে এসে সামান্য বিস্কুট জাতীয় খাবার আর জল কিনে খাওয়া হল। তারপর আবার জীপ পৌঁছে দিল আমাদের গাড়ীর কাছে। তখন বাজে প্রায় নটা।
দেবাদ্রির ক্যামেরা থেকে। অগ্নুৎপাতের ফলে তৈরি খাঁজ!

Sunday, May 21, 2017

ইন্দোনেশিয়া ডায়েরি - ১

আমি মালয়শিয়ায় আসার পর থেকেই দলবলের সঙ্গে মালয়শিয়া এবং তার আশেপাশের জায়গাগুলো ঘোরার প্ল্যান বানানো চলছিল। তর্ক-বিতর্কের বহু বিষয় ছিল। যেমন কবে যাওয়া হবে, কোথায় যাওয়া হবে, কী কী দেখা হবে ইত্যাদি। প্রায় মাসখানেক বহু হোয়াটস্যাপ চ্যাট, কনফারেন্স কল এবং ইন্টারনেট সার্চের পর ফাইনালি একটা প্ল্যান দাঁড় করানো গেল।
কিন্তু প্ল্যানের আগে কারা কারা এই ঘোরার প্ল্যানের পার্ট ছিল সেটা লিখে ফেলি।
আমি আর দেবাদ্রি তো ছিলামই মালয়শিয়া থেকে।
কলকাতা থেকে আসছিল আমার অর্ধাঙ্গিনি শ্রেয়াসী, যাকে নিয়ে আমার ব্লগেও আগেও লেখা হয়েছে। সঙ্গে ছিল পাঠভবনের পাঁঠা ওরফে ঈশিতা ওরফে ভাইটু যাকে দার্জিলিং ঘুরতে গিয়ে আমাদের সঙ্গী বিকাশ বলত 'বাইটু'!
দিল্লী থেকে আসছিল দলের সবচেয়ে হাল্কা-ফুল্কা সদস্য দেবনাথ ওরফে ড্যুড!
হায়দ্রাবাদ থেকে আসছিল কঙ্কনা। যার বয়স আঠেরোর বেশী বাড়ে না এবং যে সুস্থভাবে ফিরে যাওয়ায় ওর অফিস আহ্লাদিত হয়ে ওকে এমন একটা পুরষ্কার দিয়েছে যে ঘোরার পুরো খরচাই নাকি উঠে গেছে!
ঘোরার প্ল্যানে কেএল ছাড়াও ছিল সুরাবায়া এবং বালি। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে যাওয়া হবে সুরাবায়া। সুরাবায়া ইস্ট জাভার অন্তর্গত এবং ইন্দোনেশিয়ার ম্যাপে বালির সামান্য ওপরে অবস্থিত। সেখানে যাওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মাউন্ট ব্রোমো আগ্নেয়গিরি এবং মাদিকারিপুরা জলপ্রপাত দর্শন। সেখানে থেকে পরের গন্তব্য বালি, সেখানে স্কুবা ডাইভিং করা হবে এবং বালির বিভিন্ন অসাধারণ সুন্দর  ঐতিহাসিক মন্দিরগুলো দেখে কেএল ফেরা হবে।
ফ্লাইট এবং হোটেল বুকিং পুরোটাই অনলাইন করা হয়েছে এয়ার এশিয়া এবং বুকিং ডট কমের সাইট থেকে। এছাড়া শ্রেয়াসী 'ডিসকভার ইন্দোনেশিয়া' বলে একটি গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে একদিনের ব্রোমো-মাদিকারিপুরা ঘোরার প্ল্যান-গাড়ী ফাইনাল করে ফেলেছিল। আর দেবা ঠিক করে ফেলেছিল স্কুবার গ্রুপ। সেও অনলাইন!
দেবাদ্রির ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে শ্রেয়সীর তোলা ছবি
যাই হোক, এপ্রিল মাসের ২৭ তারিখ কলকাতা-দিল্লী-হায়দ্রাবাদ থেকে দলবল চলে এল কুয়ালালামপুরে। পরের দিন সন্ধ্যেবেলার ফ্লাইট সুরাবায়ার উদ্দেশ্যে আর তারপরেই শুরু অ্যাডভেঞ্চার!
ভুল! অ্যাডভেঞ্চার শুরু হল প্লেনে ওঠার আগেই! ব্যাপারটা হল, আমি আমার অফিসে বলে ২৮ তারিখের একটা হাফ-ডে যোগার করেছিলাম, শুক্রবার ছিল তাই খুব বেশী চাপ হয়নি। কিন্তু দেবার বিকেল পাঁচটার সময় একটা স্ট্যাটাস আপডেট কল ছিল যেটা অনেক চেষ্টা করেও ও কাটাতে পারেনি। এদিকে প্লেনের সময় সাতটা পঁয়ত্রিশ, এবং ইন্টারন্যাশানাল ফ্লাইট তাই তার এক ঘন্টা আগে চেক-ইন বন্ধ হয়ে যাবে! সুতরাং ব্যাপারটা দাড়িয়েছিল যে, ছটা নাগাদ অফিস থেকে বেরিয়ে কোনভাবে ওকে ছটা পঁয়ত্রিশের মধ্যে এয়ারপোর্ট এসে পৌঁছতে হবে! আর ওর অফিস থেকে এয়ারপোর্ট যাওয়ার সবচেয়ে তাড়াতাড়ি উপায় হল কেএল সেন্ট্রাল এসে এয়ারপোর্ট শাটল্‌ ট্রেন নেওয়া যেটা করলেও ৪৫ মিনিট লেগেই যাবে। তার মধ্যে আবার দুপুরে এক প্রস্থ ঝোড়ো বৃষ্টি হয়ে গেল। প্রচণ্ড টেনশান মাথায় নিয়ে আমি, শ্রেয়াসী, ভাইটু আর কঙ্কনা এবং অধিকাংশ ব্যাগ নিয়ে চারটে নাগাদ এয়ারপোর্টের দিকে যাত্রা শুরু করলাম। ড্যুড গেল দেবার অফিস, ওর মিটিং হয়ে গেলে ওকে নিয়ে একসঙ্গে চলে আসবে।
রাস্তার জ্যাম কাটিয়ে মোটামুটি সাড়ে পাঁচটা নাগাদ এয়ারপোর্টে ঢুকে গেলাম। কিন্তু সেখানে আমাদের জানিয়ে দেওয়া হল যে, শুধু যে কজন এসেছে তাদের পাসপোর্ট দেখে সেই বোর্ডিং পাসগুলো দেওয়া হবে। বাকিরা যখন এসে পৌঁছবে তখন বোর্ডিং পাস পাবে। কী আর করা, আমরা আমাদের বোর্ডিং পাস নিয়ে, ইমিগ্রেশান, সিকিউরিটি চেক করে গেটের সামনে পৌঁছলাম, তখন প্রায় ছটা বাজে। দেবারা তখনো কেএল সেন্ট্রালের পথে। আমরা চারজন গম্ভীর মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এর মধ্যে এক জায়গায় সিকিউরিটি চেকিং হওয়ার পর একটা গোদা ব্যাগ ফেলে এসেছিলাম, সেটা আবার দৌড়ে গিয়ে নিয়ে এলাম। কিন্তু দেবাদের পৌঁছনোর টেনশানে ওটার চাপ মাথায় রেজিস্টারই হল না। ছটা দশ নাগাদ শুনলাম দেবারা ট্রেনে উঠেছে। যে ট্রেন এয়ারপোর্ট পৌঁছতে ৩৩ মিনিট সময় নেবে। আমাদের গোটা আষ্টেক ব্যাগের দায়িত্ব কঙ্কনাকে দিয়ে তখন আমি, শ্রেয়সী আর ভাইটু এদিকওদিক র‍্যান্ডম অ্যাটেন্ডেন্টকে ধরে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছি। সাড়ে ছটা বাজল, দেবারা আপডেট দিচ্ছে যে আর একটু পরেই এয়ারপোর্ট। ছটা তেতাল্লিশ, দেবা আর ড্যুড এয়ারপোর্টে নেমে চেক-ইন লবির দিকে ছুটছে। এর মধ্যে এক দাত-ক্যালানে সিকিউরিটি অ্যাটেন্ডেন্ট আমাদের বুঝিয়েছে, "সি, ইওর ফ্রেন্ডস আর লেট, রাইট? সো ইটস দেয়ার ফল্ট, রাইট?" আর দশবার করে খালি বলে, "আর দে ইন এয়ারপোর্ট?" লাস্টে আমি "একে দিয়ে হবে না, কাটা!" বলে মেয়েগুলোকে অন্যদিকে নিয়ে গেলাম।
ছটা পঞ্চাশ... দেবারা আর ফোন ধরছে না, আমরাও ওদের ছুটোছুটির মধ্যে আর ফোন করছি না।
এর মধ্যে শ্রেয়সী এবং ভাইটু এয়ার এশিয়ার একটি ছেলেকে দাঁড় করিয়ে সমস্যার কথা বলল, সে শুনে 'দেখছি' বলে কেটে পড়ল। আমি তখন মনে মনে ভাবছি যে, ওদের পরের ফ্লাইটে আসতে বলে আমরা এগিয়ে পড়ব কিনা!
পাঁচ মিনিট পর আবার এয়ার এশিয়ার ছেলেটি এসে আমাদের ডেকে নিয়ে গেল। আমরা তিনজন গেলাম একজিট গেটের কাছে। সেখানে একটা কম্পুটারের ব্ল্যাক স্ক্রিনে কয়েকটা নাম দেখিয়ে বলল, "এখানে তোমার বন্ধুদের নাম আছে?"
আমরা দেখে বললাম, না। ছোকরা ম্যাটার অফ ফ্যাক্টলি বলল, "ওহ্‌ তাহলে তোমাদের বন্ধুদের চেক ইন হয়ে গেছে!"
সেই শুনে আমাদের আর দেখে কে! শ্রেয়সী ওই একজিট গেটের সামনে যে জয়োল্লাস ও নাচটা শুরু করল সেটা সাধারণতঃ বিরাট কোহলি টেস্ট সিরিজে স্টিভ স্মিথকে আউট করার পর করে থাকে! লোকজন বেশ ঘাবড়ে গেছিল, আমি 'সরি-টরি' বলে ম্যানেজ করলাম। কঙ্কনাকে গিয়ে সুখবর দিতে দিতে দেখি লম্বা প্যাসেজের শেষপ্রান্ত থেকে বিশ্বজয়ীর হাসি দিতে দিতে দুই মক্কেল আসছে!!

জানা গেল, 'জানে তু ইয়া জানে না' স্টাইলে অনেক দৌড়দৌড়ি করে এবং ঝামেলার পর তারা তাদের বোর্ডিং পাস পেয়েছে। যাই হোক, সব ভালো যার শেষ ভালো! আমাদের ভ্রমনের যদিও সবে শুরু!

... চলবে
"It’s always very easy to give up. All you have to say is ‘I quit’ and that’s all there is to it. The hard part is to carry on”