Saturday, June 27, 2020

ক্রিকেট ইতিহাসের মহারথীরা - ২

দ্বিতীয় পর্বের লেখায় থাকুক কিছু অস্ট্রেলিয়ান মহারথীদের কথা। ক্রিকেটের আদিযুগের অনেকটাই ছিল শুধু অ্যাংলো-অস্ট্রেলিয় ক্রিকেটযুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধের অস্ট্রেলিয় পঞ্চপাণ্ডব আজকের লেখায়।
বিশ্ব-ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার ফাস্টবোলারদের সুনাম আজকের নয়। আমি নিজে টিভিতে প্রথম দেখেছিলাম ক্রেগ ম্যাকডরমট, মার্ভ হিউজ, ব্রুস রিড আর মাইক হুইটনিকে। সেটা ভারতের ১৯৯১ ট্যুর। তার পর থেকে গ্লেন ম্যাকগ্রাথ, পল রাইফেল, জেসন গিলেসপি, ব্রেট লি হয়ে হালের মিচেল স্টার্ক অবধি কম ফাস্ট বোলার দেখিনি। আর তাছাড়া ষাটের দশকের ম্যাকেঞ্জি-কনোলি বা তার পরের লিলি-থমসনদের ব্যাপারটা তো আছেই। কিন্তু আজকের লেখার প্রথম ব্যাক্তিত্ব হলেন ‘দ্যা ডেমন বোলার’। ফ্রেড্রিক স্পফোর্থ, ক্রিকেটের একেবারে প্রথম যুগের সুপারস্টার।
১৮৭৭ সাল থেকে ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে খেলেছেন ১৮টি টেস্ট। তাতে ১৮.৪১ গড়ে ৯৪টি উইকেট। আর ফার্স্টক্লাস ক্রিকেটে ৮৫০ এর বেশী উইকেট। ১৮৭৭ সালের জেমস লিলিহোয়াইটের দলের বিরুদ্ধে ভিক্টোরিয়া এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের মিলিত দলের প্রথম খেলা, যা পরবর্তীতে ক্রিকেটের প্রথম টেস্ট ম্যাচ হিসেবে বিবেচিত হবে তাতে স্পফোর্থের জায়গা ছিল নিশ্চিত। কিন্তু উইকেট কিপার হিসেবে নিজের বন্ধু বিলি মিডউইন্টারের বদলে জ্যাক ব্ল্যাকহ্যাম জায়গা পাওয়ার প্রতিবাদ হিসেবে ছেড়ে দিয়েছিলেন সেই সুযোগ।
বোর্ডের সঙ্গে ঝামেলা মিটে যাওয়ার ফলে দ্বিতীয় খেলাতেই ফিরে আসেন স্পফোর্থ, যদিও অস্ট্রেলিয়া সেই খেলায় জেতেনি কিন্তু এর পরে স্পফোর্থের খেলায় সাফল্যের ভাগই বেশী। প্রথম বোলার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৫০ উইকেট এবং টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম হ্যাট-ট্রিকের গৌরব তাঁরই। এছাড়া আছে ১৮৮২ সালের সেই বিখ্যাত টেস্ট ম্যাচ। যাকে বলা হয় ‘Spofforth’s match’। তাঁর ৯০ রানে নেওয়া ১৪ উইকেটের জোরেই দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৮৪ রান ডিফেন্ড করতে পেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। জন্ম হয়েছিল অ্যাসেজের।
স্পফোর্থকে যদি যুধিষ্ঠির ধরেনি তাহলে ভীম নিশ্চই ট্রাম্পার। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে যখন ইংল্যান্ডের মাঠের রাজার সন্মান হাতবদল হয়েছে গ্রেস থেকে রঞ্জীর কাছে, অস্ট্রেলিয়ায় তখন ব্যাটিং শিল্পে রাজত্ব করছেন ভিক্টর ট্রাম্পার। ডন ব্র্যাডম্যানের আগে অস্ট্রেলিয়ার শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান। ট্রাম্পারের ব্যাটিংয়ের সৌন্দর্য নিয়ে বহু লেখা আছে, যার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সম্ভবত অস্ট্রেলিয় লেগ-স্পিনার আর্থার মেইলির ট্রাম্পারকে প্রথম বল করার অভিজ্ঞতা। যেখানে এক অসামান্য বলে ট্রাম্পারকে আউট করে মেইলির মনে হয়েছিল ‘I felt like a boy who had killed a dove.’
এর সঙ্গেই ট্রাম্পারের কিছু আসামান্য ইনিংস যেমন লর্ডসের ১৩৫, ১৯০২ সালে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসবে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে টেস্টের প্রথম সেশনেই শতরান, এগুলো তো আছেই। তাঁর এই দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিংয়ের কিছু নমুনা পেলে মন্দ লাগত না।
অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের অর্জুন কে সেই প্রশ্নের একটাই উত্তর? ৯৯.৯৪। আর কিছু না, ডনকে শুধু হেডিংলিতে ব্যাট করতে দেখলেই আমার চলত।
চার নম্বরে আসবেন ‘The Golden boy’ কিথ মিলার। ব্যাটিংশৈলীর দিক দিয়ে যাকে ব্র্যাডম্যানের চেয়েও এগিয়ে রেখেছিলেন লালা অমরনাথ। অল-রাউন্ড পারফর্মেন্স, বড় শট খেলার ক্ষমতা এবং নিজের সুঠাম চেহারার জন্য মিলার সব সময়ই ছিলেন দর্শকদের ফেভারিট। আর এর সঙ্গেই তাঁর বিদ্রোহী মনোভাব এবং স্পষ্টবক্তা হওয়ার কারণেই সুদর্শন এই খেলোয়াড় নিজের একটা আলাদা জায়গা করে নিয়েছিলেন।
কিথ মিলারের অসাধারণ ড্রাইভের বেশ কিছু ভিডিও আছে বাজারে, এবং খেলা ছাড়াও আছে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারের ভিডিও। কিন্তু আজকের দিনেও এই বিগ ব্যাশ, আইপিএলের যুগেও মিলারের জনপ্রিয়তায় ভাঁটা পড়ত বলে মনে হয় না।
অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা অল-রাউন্ডারের লড়াইয়ে রিচি বেনো বা কিথ মিলার এগিয়ে থাকলেও আমার এই তালিকায় বেনোর বদলে আসবে অ্যালান ডেভিডসন। বাঁহাতি লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং বাঁহাতি ওপেনিং বোলার ডেভিডসন বেনোর সঙ্গে একই সময় অস্ট্রেলিয়ায়র হয়ে নিয়মিৎ খেলেছেন। ৪৪টি টেস্ট খেলে ১৮৬ উইকেটের সঙ্গে সঙ্গে ১৩২৮ রানও করেছিলেন। কিন্তু ডেভিডসন আমার মনে জায়গা করে নিয়েছেন যেদিন থেকে ১৯৬১ সালের ব্রিসবেন টাই টেস্টের বিস্তৃত বর্ণনা পড়েছিলাম শঙ্করীপ্রসাদের লেখায়। বল হাতে ১১ উইকেট এবং ব্যাট হাতে ১২৪ রান করেছিলেন ডেভিডসন। তার মধ্যে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে করেছিলেন টেস্টে তাঁর সর্বোচ্চ ৮০ রান। ২৩৩ তাড়া করতে গিয়ে নিজে ব্যাট করতে এসেছিলেন যখন অস্ট্রেলিয়া ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে। প্রথমে কেন ম্যাকে আর তার পর রিচি বেনোর সঙ্গে পার্টনারশিপে দলকে নিয়ে গেছিলেন জয়ের দোরগোড়ায়। ডেভিডসনের ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬/৬৪ এর চমৎকার ভিডিও আছে ইউটিউবে কিন্তু ওয়াসিম আক্রমের আগের বাঁহাতে শ্রেষ্ঠ বোলারকে এইটুকু দেখে মন ভরে না।
"It’s always very easy to give up. All you have to say is ‘I quit’ and that’s all there is to it. The hard part is to carry on”