Wednesday, September 30, 2015

পুজো আসছে – ৪

শাড়ি

একটি পাড়াতুতো কথোপকথন।

-      এবার পুজোয় কটা শাড়ি হল মিসেস বোস?
-      বেশি হয়নি মিসেস সরকার। এই তো কয়েকটা কোটা, তাঁত, চারটে সিল্ক, একটা জামদানী, একটা বোমকাই... ওয়াইন কালারের...
-      বাহ্‌... বেশ অনেকগুলো। 
-      হ্যাঁ। ওহ্‌ বলা হয়নি, একটা কাঁথা স্টিচও কিনেছি।
-      চমৎকার।
-      তার সঙ্গে তো বুঝতেই পারছেন আত্মীয়-স্বজন, আমার দিদি-বউদি... পাশের মন্দির... 
-      আপনি বাড়ির পাশের মন্দিরে শাড়ি দান করেন বুঝি?
-      আরে মায়ের পুজোতে দিতে হবে না?
-      কিন্তু সেটাতো পুরুত ঠাকুর নিয়ে যাবেন... বোধহয় বেচে দেবেন।
-      সে যাকগে... আমার তো মাকে পুজো দেওয়া নিয়ে কথা... ওসব কথা ছাড়ুন... আপনার এবার কটা শাড়ি হল?
-      ঐ, আপনার মতই, চার-পাঁচটা। সঙ্গে আত্মীয়দের জন্য তো আছেই। আর ঐ গণেশের মার জন্য একটা শাড়ি।
-      বাব্বা! এই তো আমায় দূর্গাপুজোতে শাড়ি দেওয়া নিয়ে জ্ঞান দিলেন!
-      ইয়ে... গণেশের মা হল এই আমার-আপনার বাড়িতে যে লোকটা পুজোর আগে ক্যানিং থেকে বাগান পরিষ্কার করতে আসে তার বউ!

Friday, September 18, 2015

পুজো আসছে – ৩

পূজাবার্ষিকী

সকাল থেকে অবিশ্রান্ত বৃষ্টি হয়ে চলেছে। কিন্তু তার মধ্যেই রোজকার মত তৈরি হয়ে ছাতা মাথায় অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়তে হয়েছেমাসের শুরু, এখন কামাই করার উপায় নেই। প্রচুর কাজ জমে থাকে এই সময়।
বৃষ্টিতে আধভেজা হয়ে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দেখি বেশী লোকজন নেই। গাড়ি-ঘোড়াও বিশেষ চলছে না। এমনকি বৃষ্টির চোটে রোজকার ফুলওয়ালা আর ম্যাগাজিনের দোকানদার পর্যন্ত আজ বসেননি। মনে পড়ল, এই ম্যাগাজিনওয়ালা কদিন আগে জোর করে আমাকে এ বছরের পূজাবার্ষিকীটা গচিয়ে দিয়েছেন। জুলাই মাসে প্রকাশিত পূজাবার্ষিকী! ভাবা যায়!
হঠাৎ দেখি পাশে একটা ছেলে। টিংটিঙে রোগা আর লম্বা। খোঁচাখোঁচা চুল, বয়স এই এগারো-বারো হবেপরণে স্কুল ইউনিফর্ম। সাদা জামা আর খাকী প্যান্ট, পিঠে বইয়ের ব্যাগ। বাব্বা, এই বৃষ্টির মধ্যেও স্কুলে যাচ্ছে! হঠাৎ শুনি ছেলেটা নিজের মনেই কীসব বলছে আর ফিকফিক করে হাসছে। ভালো করে কান পেতে শুনলাম, ছেলেটা গাইছে,
মাথার ঊর্দ্ধে আছে মাদল
নিম্নে উতলা পদযুগল
গড়গড়িয়ে চলিছে বল।
চল চল চল।।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-      এটা পড়েছ?
-      এটা তো তুলসী! সেই বলরাম গড়গড়ি।
-      কী ভালো না?
-      দুর্দান্ত!
-      অবশ্য আগের বারের পুজোবার্ষিকীর সবকটা উপন্যাসই ভীষণ ভালো ছিল! ‘কাকাবাবু বনাম চোরাশিকারি’, ‘কুঞ্জপুকুরের কাণ্ড’, ‘রাবণবধ’ আর ‘গৌর-নিতাই’টা পড়েছিলে তো? ওটা কিন্তু দারুণ!
-      কী আবোল তাবোল বকছ! এগুলো তো অনেক বছর আগে বেড়িয়েছিল। গতবারে তো সেই এক মিতিনমাসী, দীপকাকু আর ভেলকুনমামা
-      ইস্‌... কী বিচ্ছিরি সব নাম! ওসব আমি পড়ি না! এবারও সব ভালো ভালো উপন্যাস বেরোবে। আমি বিজ্ঞাপন দেখেছি। ‘পাতালঘর’, ‘মিনু চিনুর ট্রফি’... আরো কত্ত।
-      কিন্তু এ বছরের পূজাবার্ষিকী তো বেরিয়ে গেছে...

বলতে বলতে একটা বাস আসছে দেখে চট করে ছাতাটা বন্ধ করে সেটায় উঠে পড়লাম। ছেলেটা কিন্তু উঠল না। একটু পরে বৃষ্টির তোড়ে ওকে আর দেখতে পেলাম না। তারপর চিনতে পারলাম ওকে।

ওই ছেলেটা কুড়ি বছর আগের আমি!
---------------------

Tuesday, September 15, 2015

পুজো আসছে - ২

পুজো আসছে - ১

পুজোর ট্যাগ লাইন

পুজোর ছ মাস আগে থেকেই বিভিন্ন পুজো কমিটির পোস্টার-ব্যানারে রাস্তাঘাট ছয়লাপ। নাকতলা থেকে আহারিটোলা, দেশপ্রিয় পার্ক থেকে মহম্মদ আলি পার্ক, কেউ বাদ নেই। আর সেই সব পোস্টার-ব্যানার উজ্জ্বল করে আছে, বিভিন্ন পুজোর ট্যাগ লাইন। কেউ বলছে তাদের পুজোর থিমের কথা, কেউ আওয়াজ দিচ্ছে বাকিদের! 
আগামী বছরের দূর্গা পুজোর জন্য রইল কিছু নতুন ধরনের ট্যাগ লাইন আর তাদের অন্তর্নিহীত তাৎপর্য!

(এই অ্যালবামের কিছু ছবি নিজস্ব সংগ্রহ থেকে নেওয়া আর কিছু ছবির উৎস ইন্টারনেট)








Saturday, September 12, 2015

পুজো আসছে - ১

ক্যালেন্ডার

-      মা এ বছরের নতুন ক্যালেন্ডার এসেছে?
-      হ্যাঁ। ওই তো তোর বাবা কাল অফিস থেকে এনে বাইরের ঘরের কর্নার টেবিলের ওপর রেখেছে?
-      আরে দূর! ওটা তো ডেট ক্যালেন্ডার!
-      তো? তুই তো ডেটই দেখবি, নাকি?
-      আরে বাবা, আমার বাংলা তারিখ দেওয়া ক্যালেন্ডার চাই। তোমার মুদির দোকান... কী নাম... অন্নপূর্ণা ভাণ্ডার প্রতি বছর দেয় না! সেটা চাই।
-      বাংলা তারিখ দিয়ে আবার তোর কী কাজ? এটা বাংলার কোন মাস বল আগে!
-      জানি না। ভুলে গেছি! কিন্তু দুর্গা পুজোটা কবে পড়েছে, সেটা দেখতে হবে তো! 

Saturday, September 5, 2015

হ্যাপি টিচার্স ডে

-      তাই বলে আপনি শিক্ষক দিবসে আপনার কৃতজ্ঞতা জানাতে এক কৌটো মকাইবাড়ির চা নিয়ে এসে হাজির হবেন!
-      আরে মশাই... আপনার কাছ থেকে কি আজ থেকে শিখছি! সেই উটের পাকস্থলী দিয়ে শুরু! ঠিক কিনা?
-      হ্যাঁ সেটা ঠিক...
-      তারপর থেকে তো পদে পদে আপনার কাছ থেকে শিখেই চলেছি। উটে কী করে চড়তে হয়, বুমের‍্যাং কী করে কাজ করে, টোয়েন্টি নাইন কী করে খেলতে হয়... এসব ভুললে চলবে কেন?
-      আপনার মত সঙ্গী পাওয়া সত্যিই কঠিন লালমোহনবাবু!
-      তারপর ধরুন বোম্বাইয়ের বোম্বেটে... থুড়ি জেট বাহাদুর! সেটায় আপনার অবদান আমি কী করে ভুলি ফেলুবাবু?
-      আপনার কলমের জোর না থাকলে কী আর এসব হত...
-      সব চেয়ে বড় কথা, আপনাদের সঙ্গে থেকে আর এত জায়গায় ঘুরে আমার মনের যে প্রসার ঘটেছে সেটা কী কিছুই নয়?
-      একদম ঠিক বলেছেন মিস্টার জটায়ু। কিন্তু আজকের দিনে আপনার জন্যেও যে আমার কাছে একটা উপহার আছে।
-      আমার জন্য? উপহার? বলেন কী মশাই?
-      আলবাৎ! আপনি কী ভাবছেন? আপনার থেকে কিছু শিখতে পারিনি আমি? আপনার মত নিঃস্বার্থভাবে বন্ধুদের জন্য বিপদের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়তে কজন পারে মশাই? আপনার মত ফুর্তিবাজ কজন হতে পারে? কে বলেছে আপনার সহজ সরল জীবন থেকে কিছু শেখার নেই?
-      এবার আমার লজ্জা করছে ফেলুবাবু!
-      লজ্জা পাবেন না। বরং এটা নিন। আমার পয়েন্ট থ্রি টু কোল্ট রিভলবারটা। আপনার অস্ত্রের সংগ্রহে এটা জায়গা পাক।
-      বলছেন কী!
-      হ্যাঁ... আজকাল যা সব দেখছি তাতে এসব আর আমার দরকার নেই।
"It’s always very easy to give up. All you have to say is ‘I quit’ and that’s all there is to it. The hard part is to carry on”