Saturday, December 12, 2015

সঙ্খ্যাতাত্বিক বিশ্লেষণঃ ঐতিহাসিক উপন্যাস – শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়

কয়েকমাস আগে সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সিকে সংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে একটা ব্লগপোস্ট লিখেছিলাম। সেটা অনেকেরই বেশ ভালো লেগেছিল। তাই এই নতুন প্রচেষ্টা। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশের গল্পগুলোর সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহাসিক গল্প এবং উপন্যাসগুলোও আমার মত অনেক পাঠকেরই অতি প্রিয়। আর ঐ গল্প-উপন্যাসগুলো নিয়েই এই ব্লগপোস্ট।

কোন লেখাগুলোকে ঐতিহাসিক গল্প-উপন্যাসের শ্রেণীতে ফেলা হবে সেটা অনেকাংশেই পাঠকের দৃষ্টীভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। এই লেখায় শরদিন্দু বন্দ্যোপাধায়ের মোট ৩০টি গল্প-উপন্যাসকে ঐতিহাসিক লেখা হিসেবে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি গল্প এবং পাঁচটি উপন্যাস। ২৫টি গল্পের মধ্যে ১৭টি গল্প রয়েছে শরদিন্দু অম্‌নিবাসের ষষ্ঠ খণ্ডে। সদাশিবের পাঁচটি গল্পসহ আটটি গল্প রয়েছে চতুর্থ খণ্ডে এবং উপন্যাস পাঁচটি রয়েছে শরদিন্দু অম্‌নিবাস তৃতীয় খণ্ডে

রচনাকালের দিক দিয়ে দেখলে ‘অমিতাভ’ এবং ‘রক্ত-সন্ধ্যা’ এই দুটি গল্প সর্বপ্রথম, সময়কাল ১৯৩০। এরপর ১৯৪০ থেকে ১৯৪৬ অবধি সময় বাদ দিলে মোটামুটি প্রতি বছরেই একটা-দুটো ঐতিহাসিক লেখা হয়েছে। শেষ লেখা ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’, যে লেখার জন্য ১৯৬৭ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার পান শরদিন্দু।


লেখার দৈর্ঘের ব্যাপারে বিশেষ বৈচিত্র আছে। গল্পের মধ্যে যেমন ‘রেবা রোধসি’ বা ‘ইন্দ্রতূলক’এর মত ছোট গল্প আছে সেরকমই ‘শঙ্খ-কঙ্কণ’ বা ‘বিষ কন্যা’র মত গল্পও আছে যেগুলোকে খুব সহজেই নভেলা বলা যেতে পারে। অন্যদিকে ‘রুমাহরণ’ গল্পের দৈর্ঘকে বলা যেতে পারে ঠিক মাঝামাঝি।
উপন্যাসগুলোর মধ্যে ‘কুমারসম্ভবের কবি’র দৈর্ঘ সবচেয়ে কম। বাকি উপন্যাসগুলো যদিও দৈর্ঘের দিক দিয়ে কাছাকাছি তবে সর্ববৃহৎ উপন্যাস অবশ্যই 'তুমি সন্ধ্যার মেঘ।'

গল্পগুলোর বিষয়বৈচিত্রের দিকে দেখলে দেখা যাবে বিভিন্ন থিমে গল্পগুলো লেখা হয়েছে। তাদের মধ্যে ‘অষ্টম সর্গ’, ‘প্রাগ্‌জ্যোতিষ’ বা ‘মরু ও সঙ্ঘ’-এর মত প্রেমের গল্প রয়েছে, ‘বিষ কন্যা’ বা ‘তক্ত্‌ মোবারক’-এর মত প্রতিশোধের গল্প রয়েছে আবার আছে ‘মৃৎপ্রদীপ’, যে গল্পের থীম বিশ্বাসঘাতকতা। ‘বাঘের বাচ্চা’, ‘রুমাহরণ’ বা সদাশিবের অসাধারণ গল্পগুলোকে বলা উচিত অ্যাডভেঞ্চার। কিন্তু শুধু অ্যাডভেঞ্চার নয়, অ্যাডভেঞ্চার আর রোমান্সের মিলন ঘটিয়ে শরদিন্দু লিখেছেন ‘চুয়াচন্দন’, ‘কালের মন্দিরা’, ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘ’, ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’র মত অসাধারণ সব সৃষ্টি। তবে একটা কথা সবসময় মাথায় রাখতে হবে, শরদিন্দুর এই গল্পগুলো তাঁর নিজের ভাষায়, “Fictionised History নয়, Historical fiction.”

শরদিন্দু ‘জাতিস্মর’ বিষয়ে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। এই বিষয়ে তাঁর বিভিন্ন প্রবন্ধও রয়েছে। তাঁর প্রথম দিককার বেশ কিছু গল্প জাতিস্মর ভিত্তিক। গল্পগুলো হল ‘অমিতাভ’, ‘রক্ত-সন্ধ্যা’, ‘মৃৎপ্রদীপ’, ‘রুমাহরণ’, ‘বিষ কন্যা’ এবং ‘সেতু’। এই শ্রেণীর গল্প রচনায় দুজন বিদেশী লেখক, জ্যাক লন্ডন ও স্যার আর্থার কোনান ডয়েল, শরদিন্দুকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছিলেন। পরের দিকে তাঁর লেখায় অবশ্য জাতিস্মর সম্পূর্ণ ভাবেই অনুপস্থিত। যদিও আমার নিজের অন্তত ওনার গল্পগুলো পড়ে বারবার এটাই মনে হয়েছে, জাতিস্মর হতে পারলে কি ভালোই না হত! চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের মগধে বা শশাঙ্কোত্তর মাৎস্যন্যায়ের বঙ্গদেশে আমি ছিলাম কিনা বা থাকলে কোন ভূমিকায় ছিলাম সেই নিয়ে দিবাস্বপ্ন দেখতে কার না ভালো লাগে!

শরদিন্দু তাঁর ঐতিহাসিক গল্প-উপন্যাসে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়কালকে ছুঁয়ে গেছেন। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে, মৌর্য-গুপ্ত যুগকে ছুঁয়ে শরদিন্দুর লেখা পৌঁছেছে মোগল যুগেও। কোন কোন গল্পে এই সময়কাল অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে উল্লেখিতযেমন ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’ উপন্যাসের শুরুতেই বলা হয়েছে,
 “বৈশাখ মাসের অপরাহ্ণ। ১৩৫২ শকাব্দ সবে মাত্র আরম্ভ হইয়াছে
আবার ‘রক্ত-সন্ধ্যা’ বা ‘বাঘের বাচ্চা’ গল্পের মূল চরিত্রগুলো যেমন ভাস্কো ডা গামা বা শিবাজির সময়কাল ইতিহাসের পাতা থেকে সহজেই তুলে নেওয়া যায়। এবং অধিকাংশ গল্পেই সেই সুবিধা রয়েছে। যদিও ‘রুমাহরণ’ বা ‘প্রাগ্‌জ্যোতিষ’এর মত যেসব গল্পের সময়কাল অতি প্রাচীন সেগুলোতে আমাকেও আন্দাজেই কাজ চালাতে হয়েছে।


গল্পের কাল এবং পাত্র নিয়ে কথা হল যখন তখন স্থান নিয়েও কিছু কথা থেকে যায়। শরদিন্দুর ঐতিহাসিক গল্পের অধিকাংশই ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। তার মধ্যে পাটলিপুত্র এসেছে অনেকবার। বঙ্গদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আছে একাধিক গল্প, যেমন, ‘গৌড়মল্লার’, ‘চুয়াচন্দন’ এবং ‘ময়ূরকূট’। ছত্রপতি শিবাজি এবং সদাশিবের সব গল্পের পটভূমিই মহারাষ্ট্র। আবার ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’ উপন্যাস বা ‘রক্ত-সন্ধ্যা’ গল্পের পটভূমি দক্ষিণ ভারত। আবার ‘ইন্দ্রতূলক’ হল আর্যদের মধ্য এশিয়া থেকে ভারতে আসার গল্প। নিচের ম্যাপে বিশদে সমস্ত গল্পের স্থান চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। যদিও ‘আদিম’ গল্পের পটভূমি প্রাগৈতিহাসিক মিশর, ‘মরু ও সঙ্ঘ’ গল্পটি লেখা হয়েছে মধ্য এশিয়ার পটভূমিতে। ‘রুমাহরণ’-এর ভৌগোলিক সীমা কিছুটা ধোঁয়াটে।

শরদিন্দুর ঐতিহাসিক রচনাগুলো বাংলা সাহিত্যের কিছু অসাধারণ মণি-মানিক্য। শরদিন্দুর নিজেরও অত্যন্ত পছন্দের ছিল এই লেখাগুলো। এগুলির প্রসঙ্গে নিজের ডায়েরিতে লিখেছিলেন (তারিখ ২৩.২.১৯৫১)-

“আমি আমার অনেকগুলি গল্পে প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধরিবার চেষ্টা করিয়াছি। কেহ কেহ বলেন এইগুলি আমার শ্রেষ্ঠ রচনা। শ্রেষ্ঠ হোক বা না হোক, আমি বাঙ্গালীকে তাহার প্রাচীন tradition-এর সঙ্গে পরিচয় করাইয়া দিবার চেষ্টা করিয়াছি। এ চেষ্টা আর কেহ করেন না কেন? বাঙ্গালী যতদিন না নিজের বংশগরিমার কথা জানিতে পারিবে ততদিন তাহার চরিত্র গঠিত হইবে না; ততদিন তাহার কোন আশা নাই। যে জাতির ইতিহাস নাই তাহার ভবিষ্যৎ নাই।”

শেষ কথাগুলো বোধহয় শুধু বাঙালী নয়, এই দেশের অধিকাংশ লোকের ক্ষেত্রেই সত্যি।

Friday, November 13, 2015

Sehwag: The Legend and the Motivator

This blog post is part of the #madeofgreat contest organized by Indiblogger and Tata Motors. Check their page: http://madeofgreat.tatamotors.com/

***************
If you are a sports-loving teenager between mid nineties to early 2000s’ in India then there is great chance that you are dedicated follower of the game of cricket. I was no different. Borrowing one of the old advertisement slogans of the nineties, I can say, I used to ‘Eat Cricket, drink cricket, sleep cricket’ and was in love with game.
 I was lucky to watch some of the game’s greats in peak of their cricketing career during my growing up period. There were stalwarts like Sachin Tendulkar, Sourav Ganguly, Rahul Dravid, VVS Laxman and Anil Kumble, the cherished ‘fav five’ of Indian cricket! And then there were global superstars like Brian Lara, Glen Mcgrath,Adam Gilchrist, Wasim Akram, Allan Donald... just to name a few. They were great sportsmen, great characters and nice human beings on and off the fields. There are so many stories about these players, stories of hard work, determination and above all about their love of the game.
Among these hosts of cricketing legends the one player who stands out for me with his greatness is Virendra Sehwag. Generally a humble person, I always found him as a simple guy with great attitude. I believe that in life attitude is the key. You may not always have to be the best in your job to be successful if you have the right attitude. And this is true for every aspect of life like academics, performing arts or sports.
Sehwag or ‘Viru’ as he is lovingly called by his friends and fans has this simple approach in his game, especially when he is batting. ‘If there is a ball to be hit it should be hit’ this is his motto in life. This approach may not be successful all the time but when it works it can get you magical results.
And Viru has provided so many magical memories for us. I can list down his great innings starting from his debut test century in South Africa to his triple centuries in Multan and to his feat of starting all the group league matches of the 2011 World Cup with a boundary first ball. But this is not a list of his great performances with bat and ball. Neither am I going to bore you with statistical analysis of his runs and wickets. Because as I have said, sometimes how you have scored the runs is important than how many runs you have scored.
Rather I am going to emphasize the impact of a man who has inspired me to have a simple approach in life. Who has educated me not to think too much and enjoy whatever I am doing. I know that if I am sincere about my effort, do my homework right and if true to myself then success should not be far away in life. There are so many moments where I have seen Viru accomplish this in most difficult of situations and took India towards victory. All with a smiling tension free face against deadliest of bowling attacks from around the world.
With his retirement from international cricket last month it felt like another part of my adolescent years are gone. But the memories are there to cherish forever. His fierce cuts and pulls and above all the life lesson of being simple and effortless will remain with me forever.
For me Virendra Sehwag is truly #madeofgreat who is legend of the great game we all love. He has faced every difficult situation in the cricket field with simple but determined mindset while humming peppy Kishore Kumar song despite all the pressure of expectation from the people of a cricket crazy nation.

Virendra Sehwag was an exceptional cricketer and a true Hero. A youth icon in every sense! Thank you for the memories.
***************
P.S. What do you think of Tata Motor's association with Lionel Messi? Answer as comment and best comment might win you a prize of Amazon voucher worth 750/- rupees.

Saturday, October 31, 2015

I am genuinely curious

Inspired By - you-know-who!

What do Politicians do? I am genuinely curious. Call Press Conference. Speak random trash. Get trolled. Ok work done for the day.

What does Arnab Goswami do? I am genuinely curious. Organize talk show. Shout at people. Then shout more. Ok work done for the day.

What do Wives do? I am genuinely curious. Shout at husband in the day. Then shout in the evening. Then in night. Ok work done for the day.

What do Bengali TV Serials do? I am genuinely curious. Random drama. Then absurd drama. Then tear drops. Ok work done for the day.

What does Chetan Bhagat do? I am genuinely curious. Tacky books happened. Then tackier film scripts happened. Then tackiest tweets. Ok work done for the day.

From my friend Kanad Basu,

What does Jose Mourinho do? I am genuinely curious. Lose a match. Blame the referee. Get sent to the stands. Ok work done for the day.

Wednesday, September 30, 2015

পুজো আসছে – ৪

শাড়ি

একটি পাড়াতুতো কথোপকথন।

-      এবার পুজোয় কটা শাড়ি হল মিসেস বোস?
-      বেশি হয়নি মিসেস সরকার। এই তো কয়েকটা কোটা, তাঁত, চারটে সিল্ক, একটা জামদানী, একটা বোমকাই... ওয়াইন কালারের...
-      বাহ্‌... বেশ অনেকগুলো। 
-      হ্যাঁ। ওহ্‌ বলা হয়নি, একটা কাঁথা স্টিচও কিনেছি।
-      চমৎকার।
-      তার সঙ্গে তো বুঝতেই পারছেন আত্মীয়-স্বজন, আমার দিদি-বউদি... পাশের মন্দির... 
-      আপনি বাড়ির পাশের মন্দিরে শাড়ি দান করেন বুঝি?
-      আরে মায়ের পুজোতে দিতে হবে না?
-      কিন্তু সেটাতো পুরুত ঠাকুর নিয়ে যাবেন... বোধহয় বেচে দেবেন।
-      সে যাকগে... আমার তো মাকে পুজো দেওয়া নিয়ে কথা... ওসব কথা ছাড়ুন... আপনার এবার কটা শাড়ি হল?
-      ঐ, আপনার মতই, চার-পাঁচটা। সঙ্গে আত্মীয়দের জন্য তো আছেই। আর ঐ গণেশের মার জন্য একটা শাড়ি।
-      বাব্বা! এই তো আমায় দূর্গাপুজোতে শাড়ি দেওয়া নিয়ে জ্ঞান দিলেন!
-      ইয়ে... গণেশের মা হল এই আমার-আপনার বাড়িতে যে লোকটা পুজোর আগে ক্যানিং থেকে বাগান পরিষ্কার করতে আসে তার বউ!

Friday, September 18, 2015

পুজো আসছে – ৩

পূজাবার্ষিকী

সকাল থেকে অবিশ্রান্ত বৃষ্টি হয়ে চলেছে। কিন্তু তার মধ্যেই রোজকার মত তৈরি হয়ে ছাতা মাথায় অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়তে হয়েছেমাসের শুরু, এখন কামাই করার উপায় নেই। প্রচুর কাজ জমে থাকে এই সময়।
বৃষ্টিতে আধভেজা হয়ে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দেখি বেশী লোকজন নেই। গাড়ি-ঘোড়াও বিশেষ চলছে না। এমনকি বৃষ্টির চোটে রোজকার ফুলওয়ালা আর ম্যাগাজিনের দোকানদার পর্যন্ত আজ বসেননি। মনে পড়ল, এই ম্যাগাজিনওয়ালা কদিন আগে জোর করে আমাকে এ বছরের পূজাবার্ষিকীটা গচিয়ে দিয়েছেন। জুলাই মাসে প্রকাশিত পূজাবার্ষিকী! ভাবা যায়!
হঠাৎ দেখি পাশে একটা ছেলে। টিংটিঙে রোগা আর লম্বা। খোঁচাখোঁচা চুল, বয়স এই এগারো-বারো হবেপরণে স্কুল ইউনিফর্ম। সাদা জামা আর খাকী প্যান্ট, পিঠে বইয়ের ব্যাগ। বাব্বা, এই বৃষ্টির মধ্যেও স্কুলে যাচ্ছে! হঠাৎ শুনি ছেলেটা নিজের মনেই কীসব বলছে আর ফিকফিক করে হাসছে। ভালো করে কান পেতে শুনলাম, ছেলেটা গাইছে,
মাথার ঊর্দ্ধে আছে মাদল
নিম্নে উতলা পদযুগল
গড়গড়িয়ে চলিছে বল।
চল চল চল।।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-      এটা পড়েছ?
-      এটা তো তুলসী! সেই বলরাম গড়গড়ি।
-      কী ভালো না?
-      দুর্দান্ত!
-      অবশ্য আগের বারের পুজোবার্ষিকীর সবকটা উপন্যাসই ভীষণ ভালো ছিল! ‘কাকাবাবু বনাম চোরাশিকারি’, ‘কুঞ্জপুকুরের কাণ্ড’, ‘রাবণবধ’ আর ‘গৌর-নিতাই’টা পড়েছিলে তো? ওটা কিন্তু দারুণ!
-      কী আবোল তাবোল বকছ! এগুলো তো অনেক বছর আগে বেড়িয়েছিল। গতবারে তো সেই এক মিতিনমাসী, দীপকাকু আর ভেলকুনমামা
-      ইস্‌... কী বিচ্ছিরি সব নাম! ওসব আমি পড়ি না! এবারও সব ভালো ভালো উপন্যাস বেরোবে। আমি বিজ্ঞাপন দেখেছি। ‘পাতালঘর’, ‘মিনু চিনুর ট্রফি’... আরো কত্ত।
-      কিন্তু এ বছরের পূজাবার্ষিকী তো বেরিয়ে গেছে...

বলতে বলতে একটা বাস আসছে দেখে চট করে ছাতাটা বন্ধ করে সেটায় উঠে পড়লাম। ছেলেটা কিন্তু উঠল না। একটু পরে বৃষ্টির তোড়ে ওকে আর দেখতে পেলাম না। তারপর চিনতে পারলাম ওকে।

ওই ছেলেটা কুড়ি বছর আগের আমি!
---------------------

Tuesday, September 15, 2015

পুজো আসছে - ২

পুজো আসছে - ১

পুজোর ট্যাগ লাইন

পুজোর ছ মাস আগে থেকেই বিভিন্ন পুজো কমিটির পোস্টার-ব্যানারে রাস্তাঘাট ছয়লাপ। নাকতলা থেকে আহারিটোলা, দেশপ্রিয় পার্ক থেকে মহম্মদ আলি পার্ক, কেউ বাদ নেই। আর সেই সব পোস্টার-ব্যানার উজ্জ্বল করে আছে, বিভিন্ন পুজোর ট্যাগ লাইন। কেউ বলছে তাদের পুজোর থিমের কথা, কেউ আওয়াজ দিচ্ছে বাকিদের! 
আগামী বছরের দূর্গা পুজোর জন্য রইল কিছু নতুন ধরনের ট্যাগ লাইন আর তাদের অন্তর্নিহীত তাৎপর্য!

(এই অ্যালবামের কিছু ছবি নিজস্ব সংগ্রহ থেকে নেওয়া আর কিছু ছবির উৎস ইন্টারনেট)








Saturday, September 12, 2015

পুজো আসছে - ১

ক্যালেন্ডার

-      মা এ বছরের নতুন ক্যালেন্ডার এসেছে?
-      হ্যাঁ। ওই তো তোর বাবা কাল অফিস থেকে এনে বাইরের ঘরের কর্নার টেবিলের ওপর রেখেছে?
-      আরে দূর! ওটা তো ডেট ক্যালেন্ডার!
-      তো? তুই তো ডেটই দেখবি, নাকি?
-      আরে বাবা, আমার বাংলা তারিখ দেওয়া ক্যালেন্ডার চাই। তোমার মুদির দোকান... কী নাম... অন্নপূর্ণা ভাণ্ডার প্রতি বছর দেয় না! সেটা চাই।
-      বাংলা তারিখ দিয়ে আবার তোর কী কাজ? এটা বাংলার কোন মাস বল আগে!
-      জানি না। ভুলে গেছি! কিন্তু দুর্গা পুজোটা কবে পড়েছে, সেটা দেখতে হবে তো! 

Saturday, September 5, 2015

হ্যাপি টিচার্স ডে

-      তাই বলে আপনি শিক্ষক দিবসে আপনার কৃতজ্ঞতা জানাতে এক কৌটো মকাইবাড়ির চা নিয়ে এসে হাজির হবেন!
-      আরে মশাই... আপনার কাছ থেকে কি আজ থেকে শিখছি! সেই উটের পাকস্থলী দিয়ে শুরু! ঠিক কিনা?
-      হ্যাঁ সেটা ঠিক...
-      তারপর থেকে তো পদে পদে আপনার কাছ থেকে শিখেই চলেছি। উটে কী করে চড়তে হয়, বুমের‍্যাং কী করে কাজ করে, টোয়েন্টি নাইন কী করে খেলতে হয়... এসব ভুললে চলবে কেন?
-      আপনার মত সঙ্গী পাওয়া সত্যিই কঠিন লালমোহনবাবু!
-      তারপর ধরুন বোম্বাইয়ের বোম্বেটে... থুড়ি জেট বাহাদুর! সেটায় আপনার অবদান আমি কী করে ভুলি ফেলুবাবু?
-      আপনার কলমের জোর না থাকলে কী আর এসব হত...
-      সব চেয়ে বড় কথা, আপনাদের সঙ্গে থেকে আর এত জায়গায় ঘুরে আমার মনের যে প্রসার ঘটেছে সেটা কী কিছুই নয়?
-      একদম ঠিক বলেছেন মিস্টার জটায়ু। কিন্তু আজকের দিনে আপনার জন্যেও যে আমার কাছে একটা উপহার আছে।
-      আমার জন্য? উপহার? বলেন কী মশাই?
-      আলবাৎ! আপনি কী ভাবছেন? আপনার থেকে কিছু শিখতে পারিনি আমি? আপনার মত নিঃস্বার্থভাবে বন্ধুদের জন্য বিপদের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়তে কজন পারে মশাই? আপনার মত ফুর্তিবাজ কজন হতে পারে? কে বলেছে আপনার সহজ সরল জীবন থেকে কিছু শেখার নেই?
-      এবার আমার লজ্জা করছে ফেলুবাবু!
-      লজ্জা পাবেন না। বরং এটা নিন। আমার পয়েন্ট থ্রি টু কোল্ট রিভলবারটা। আপনার অস্ত্রের সংগ্রহে এটা জায়গা পাক।
-      বলছেন কী!
-      হ্যাঁ... আজকাল যা সব দেখছি তাতে এসব আর আমার দরকার নেই।

Thursday, August 27, 2015

বাংলা মেগা সিরিয়াল - আরো কিছু কথা

বাংলা মেগা সিরিয়ালের উপকারিতা নিয়ে কমাস আগে একটা পোস্ট করেছিলাম। এটা তারই দ্বিতীয় পর্ব। আর এর অনেকটাই উঠে এসেছে ফেসবুকের 'বাংলা আড্ডা/কুইজ' গ্রুপের আড্ডা থেকে। তাই এই লেখার জন্য ঐ গ্রুপের বন্ধুদের একটা মস্ত বড় ধন্যবাদ প্রাপ্য
আগের লেখায় এই সময়কার বাংলা মেগা সিরিয়ালগুলোর যে সব বৈশিষ্ট উল্লেখ করেছিলাম সেগুলোর মত এই লেখাও পুরোটাই আমার ব্যক্তিগত মতামত। কেউ একমত না হলে দয়া করে রেগে যাবেন না। বরং কমেন্টে লিখবেন, খুশী হব।

(সূত্রঃ ঈন্টারনেট)
লক্ষ্য করেছি যে, বাংলা সিনেমার প্রাক্তন নায়ক নায়িকাদের জন্য এই সিরিয়ালগুলোর চেয়ে উপকারী আর কিছু হয় না। তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রেই এই বাংলা সিরিয়ালগুলোই তাঁদের ব্যস্ত থাকার একমাত্র উপায়। বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগের সেইসব দিকপাল অভিনেতা-অভিনেত্রীরা এই সব সিরিয়ালে অপ্রয়োজনীয় দাদু-দিদা বা বাড়ির গৃহকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। যদিও এঁদের চরিত্রগুলোর আদৌ কোন প্রয়োজন আছে কিনা সেটাই দর্শকের পক্ষে বুঝে ওঠা চাপ। যা করার তা তো নায়িকা আর খলনায়িকারাই করেন তবু বোঝানো হয় যে সংসারে এঁদের নাকি প্রচণ্ড দাপট। নানা রকম বোকা বোকা সিদ্ধান্ত এরা মাঝে মধ্যে নিয়ে থাকেন সেটা সত্যি কথা। যেমন নায়িকার তৃতীয় বিয়ের সময় তার প্রথম বরের বাবা ঘোষণা করেন যে, সেই বিয়ে তাঁদের বাড়ি থেকে হবে! কেন হবে? ওনার কীসের ইন্টারেস্ট? বাকিরা আপত্তি তুলছে না কেন? এইসব প্রশ্নের উত্তর চাইলে সিরিয়ালের পরিচালক বা আপনার বাড়ির যারা নিয়মিত ঐ সিরিয়ালের দর্শক তাঁরা নির্ঘাত আপনাকে কান ধরে ঘরের বাইরে নিল ডাউন করিয়ে দেবেন।
এ ব্যাপারে সন্তু বাবু আর সাবিত্রী দেবীর অভিজ্ঞতাই সবচেয়ে বেশী। তার মধ্যে হঠাৎ একটি সিরিয়ালের লেখক/লেখিকারা বোধ হয় নায়ক-নায়িকাদের এতগুলো করে বিয়ে দিয়েও নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করে উঠতে পারছিলেন না। তাই গল্পের স্রোতে ভাসতে ভাসতে সাবিত্রী দেবীর চরিত্রটির চল্লিশ বছর আগে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া বর আবার গল্পে ফিরে এলেন। শুধু তাই নয়, তাঁদের আবার মালা বদল করে বিয়েও হল!
সবচেয়ে দুঃখের কথা, সাবিত্রী দেবীর স্বামীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে প্রথমবার বাংলা মেগা সিরিয়ালের জগতে পা দিলেন সৌমিত্র চ্যাটার্জী! সিরিয়ালের টি আর পি যে বাড়ল তাতে সন্দেহ নেই কিন্তু আমার মত সৌমিত্র ভক্তরা আঁতকে উঠে চোখে-কানে গঙ্গাজল দিলাম! ভদ্রলোক যখন সিমেন্ট, ব্যাথার ওষুধ এমনকি হনুমান চল্লিশা মহা যন্ত্রেরও বিজ্ঞাপন করেছিলেন তখন বাঙ্গালী সেই পঞ্চাশ-ষাট দশকের রোমান্টিকতা থেকে সেটাকে খুব একটা পাত্তা দেয়নি। কিন্তু তাই বলে মেগা সিরিয়াল! ঠিক হজম হল না সৌমিত্রবাবু, ক্ষমা করবেন।

বাংলা সিরিয়ালের নায়ক-নায়িকাদের ছদ্মবেশ নেওয়ার ক্ষমতা হলিউডের বাঘা বাঘা মেক-আপ আর্টিস্টকেও হার মানাবে! তারা যত ছাপোষাই হোক না কেন বিপদে পড়লেই ছদ্মবেশের আশ্রয় নেয়। আর শুধু তাই নয়, ছদ্মবেশ যেমনই হোক, হালকা কিম্বা ভারী, সিরিয়ালের আর অন্য কোন চরিত্ররা কোনদিনই তাদের চিনে উঠতে পারে না! একটা গোঁফ লাগালেই (নায়িকাদের কথা বলছি না) বা কপালে একটা টিপ আর দু-চারটে চন্দনের ফোঁটা লাগালেই (নায়িকাদের কথাই বলছি) তাদের আর কেউ চিনতে পারে না!

এই প্রসঙ্গে একটা পুরনো গল্প মনে পড়ে গেল। আদিত্য চোপড়া মহাশয়ের ক্লাসিক সিনেমা ‘রব্‌ নে বানা দি জোড়ি’ সময়ের ঘটনা। কোন এক শুক্রবার আমার অফিসের তদানিন্তন টিম ডিরেক্টর বাকিদের সঙ্গে খেজুরে করছিলেন। আমায় জিজ্ঞেস করলেন,“লাস্ট উইকেন্ডে কী করলে?”
তাঁকে জানালুম যে, উপরে উল্লেখিত সিনেমাটা দেখেছি। উনি উৎসাহিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কেমন হয়েছে? রোমান্টিক সিনেমা?”
“না তো... আমার মনে হল হরর্‌ সিনেমা।”
“হরর্‌ সিনেমা! কেন?”
“আপনিই বলুন, আমি আমার চশমাটা খুলে ফেললে আর চুলটা খোঁচাখোঁচা করে আঁচড়ালেই আমার গার্ল ফ্রেন্ড আর আমাকে চিনতে পারবে না! এটা হরর্‌ সিনেমা নয়?”
ভদ্রলোক আমাকে আর ঘাঁটাননি তারপর।

ও, বাংলা সিরিয়ালের কূট-কাচালি নিয়ে তো আগেই বলেছি, আজকাল আবার দেখছি বিষের ব্যবহার খুব বেড়ে গেছে। যে পারছে যখন তখন অন্যের পায়েসে (হ্যাঁ পায়েসেই শুধু... কেন জানি না!) বিষ মিশিয়ে দিচ্ছে। আর কে না জানে প্রখর রুদ্র, জেমস বন্ড ও বাংলা সিরিয়ালের নায়িকাদের কেউ কখনো মেরে ফেলতে পারে না। তাই হয়ে বিষ মেশানো বাটি বদলে যাচ্ছে নয় গল্পের খলনায়কের হৃদয় পরিবর্তনের ফলে সে ঐ বিষ মেশানো পায়েস খলনায়িকাকেই খাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

তবে একটি সাম্প্রতিক সিরিয়াল একঘেয়েমির দিক দিয়ে সবাইকে হার মানিয়েছে। নিজের ইচ্ছে না হলেও ওটি আমাকে দেখতে হয় এবং দেখতে দেখতে আমার ইচ্ছে করে গল্পের লেখক বা লেখিকাকে ধরে ঠ্যাঙ্গাতে (যেমন অজিত বিওমকেশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেরকমভাবে)।
(সূত্রঃ ইন্টারনেট)
এই গল্পের দুই নায়িকা-এক নায়ক। দুই নায়িকা আবার বোন... সহোদরা না সৎ জানি না, জিজ্ঞেস করে লজ্জা দেবেন না। যা বুঝেছি, নায়কের বাড়ির লোকের ইচ্ছে বড় বোনের সঙ্গে নায়কের বিয়ে ঠিক করেছে, কিন্তু নায়ক আর ছোট বোন প্রেম করছে (ইচ্ছে করেই...)। বড় বোন সেই ব্যাপারে বেশ ক্রুদ্ধ। তাই সেও নায়কের সঙ্গে প্রেম করার চেষ্টা করছে। নায়িকাদের বাড়ির লোক বোধহয় এই কনফ্লিক্টের কথা জানে কিন্তু তাঁদের সেটা নায়কের বাড়ির লোককে সেটা জানানোর ইচ্ছে হয়নি (এরকম তো কতই হয়!)। ফলে নায়কের বাড়ির লোক বড় বোনকেই ভাবী বউমা ভেবে ন্যাকামি করে যাচ্ছে। এদিকে নায়ক-নায়িকা এবং বড় বোন ব্যাপারটা কাউকে বলছেও না, কেন বলছে না সেটা ভগবানবাবুও জানেন বলে মনে হয় না, সুতরাং তিনজনেই ইচ্ছে করে সারাক্ষণ মুখ ব্যাজার করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এবার বলুন, বড়মন্ত্রীর রাজকন্যার গুলিসুতো খেয়ে ফেলাটা কি এর চেয়েও জটিল?

Sunday, August 9, 2015

আহত কলম

(আমরা কেউ ধর্মে বিশ্বাস করি, কেউ হয়ত ধর্মকে পরিত্যাগ করিনি কিন্তু ধর্ম নিয়ে মাথাও ঘামাই না, কেউ কট্টর নাস্তিক আবার কেউ বা ধর্মনিরপেক্ষ - কিন্তু একটা জায়গায় আমাদের গভীর মিল আছে, আমরা সবাই বাকস্বাধীনতায় প্রবল ভাবে বিশ্বাসী। আর সেই জন্যই রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাস, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়রা যে কথাগুলো বলতে চেয়ে প্রাণ হারালেন সে কথাগুলো যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব, ওনাদের সঙ্গে আমাদের মতাদর্শের মিল আছে কি নেই সেটা এই মুহূর্তে অবান্তর প্রশ্ন। কথাগুলো পৌঁছে দেওয়ার অভিপ্রায়েই সা্রা বিশ্ব জুড়ে একাধিক ব্লগার কীবোর্ডে বসেছেন, সেই লেখাগুলো সঙ্কলিত করে দেওয়া হল পাঠকদের জন্য - তালিকাটি দেখা যাবে এই ব্লগপোস্টের শেষে।)
--------------------

আজ থেকে প্রায় সাড়ে সাত বছর আগে যখন আমি এই ব্লগটা লিখতে শুরু করি তখন ব্লগের প্রথম পোস্টে লিখেছিলাম,

I will write about the earth and the sea, I will write about the winter and the autumn, I will write about the mountain and the desert, I will write about Tiger Prawn and Paav bhaji, I will write about the casinos of Las Vegas and slums of Kolkata, I will write about Harry Potter's wand and Sherlock Holmes' pipe, I will write about Marlon Brando and Rajinikanth, I will write about friendship and love, I will write about the Taj Mahal and the Pyramids, I will write about George Bush and Steve Bucknor. I will write about life and death.

এখন এটা পড়লে মনে হয় ঐ সময় উদ্ধতভাবে এই ঘোষণা করা ঠিক হয়নি। কিন্তু তখন বয়স অল্প ছিল, হয়তো সময়টাও অন্য রকম ছিল, তাই মনে মনে ভাবতাম, যে কোন মানুষ নিজের ব্লগে, নিজের অন্তরঙ্গ মুহূর্তে নিজের ইচ্ছে মত যা খুশী লিখতে পারে।
কিন্তু আজ আমি জানি যে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই ভাবনাটাই প্রচণ্ড বড় ভুল। আজ ভারতীয় উপমহাদেশে বসে (হয়তো পৃথিবীর যেকোন জায়গাতে বসেই) নিজের ইচ্ছে মত যেকোন বিষয় নিয়ে আর লেখা যায় না। নিজের ইচ্ছে হলেই ধর্মের অসারতা, মৌলবাদ, কুসংস্কার, রাজনৈতিক নেতাদের শঠতা, ব্যবসায়ীদের মুনাফা লোটার ভাঁওতাবাজি নিয়ে কলম ধরা যায় না। তবু যারা সাহস করে লিখে যান তাঁদের মূল্য চোকাতে হয় নিজেদের রক্ত দিয়ে।
রাজীব, অভিজিৎ, ওয়াশিকুর, অনন্ত, নীলাদ্রিরা শুধু চেয়েছিলেন তাঁদের ভাবনাকে নিজেদের লেখার মাধ্যমে তুলে ধরার। তাঁদের লেখার প্রধান বিষয় ছিল ধর্মান্ধতা আর কুসংস্কারের কুপ্রভাব। আর তাই একের পর এক কিছু বুদ্ধিভ্রষ্ট, ধর্মান্ধ ঘাতকের চপার নেমে এসেছে তাঁদের ওপর।
(সূত্রঃ www.facebook.com/bongpen.net)
কিছু মানুষ (হ্যাঁ, এরা মানুষই... অস্বীকার করার জায়গা নেই) এবং তাদের কার্যকলাপ আজ মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানাচ্ছেশুধুমাত্র ধর্মের দোহাই দিয়ে, ধর্মবিশ্বাসে আঘাত লাগার অজুহাতে একের পর এক মানুষ মারতে এদের আটকায় না। প্রশাসন এদের নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম। আর আমরা, সাধারণ মানুষ কাঁটাতারের বেড়ার এদিকে বসে নিজেদের ল্যাপটপে একের পর এক ঘটনার খবর দেখতে দেখতে ক্লান্ত। প্রথমে আমাদের রাগ হয়েছিল, মনে হয়েছিল ফেসবুকে, মিছিলে প্রতিবাদ করে এর প্রতিরোধ করা যাবে। কিন্তু এখন আমরা জানি আমাদের জমে থাকা রাগের কোন মূল্য নেই, ফেসবুকে হাজার হাজার আপডেট দিয়ে, পোস্ট দিয়ে কিচ্ছু হবে না। তাই আমাদের সেই রাগ ক্রমেই আশঙ্কায় পরিণত হচ্ছে। আজ সত্যিই ভয় পাওয়ার জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি আমরা।
কারণ আমি জানি এইভাবে একের পর এক হত্যা করেও লেখকের কলমকে থামানো যায় না। তাই এই অন্ধ ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে লেখা থেমে থাকবে না। কিছু সাহসী, মুক্তমনা মানুষ বারবার তাঁদের যুক্তির বেড়াজালে ধর্মীয় কুসংস্কারের নগ্ন স্বরূপ তুলে ধরবেন। আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব। মনপ্রাণ দিয়ে তাঁদের সমর্থন করব। কিন্তু আমাদের মনের এক কোণায় সব সময় জমে থাকবে ভয়। আবার কয়েক মাস পর হয়তো পরবর্তী মৃত্যুর বর্ণনা শুনে শিউরে উঠতে হবে আমাদের।

প্রথম ব্লগে আরও একটা ভুল লিখেছিলাম। ‘মৃত্যু’ নিয়ে লেখা মোটেই সহজ কাজ নয়।

--------------------

Saturday, August 1, 2015

ব্যোমকেশ বক্সী – কিছু সংখ্যা

সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সীর সহিত আমার প্রথম পরিচয় হইয়াছিল সন তেরশ’ একত্রিশ চোদ্দশ সালে।

তার আগেই ভদ্রলোকে্র এবং তাঁর স্রষ্টার নাম শুনেছিলাম, সদাশিব আর জেনারেল ন্যাপলার গল্প পড়াও হয়ে গেছিল। কিন্তু টেলিভিশানের পর্দায় ভদ্রলোককে দেখার পর থেকে ব্যোমকেশের বই পড়ার জন্য খেপে  উঠলাম। তখন আমার বছর দশেক বয়স। বই পেয়েও গেলাম হাতের কাছে, ‘শরদিন্দু অম্‌নিবাস – প্রথম খণ্ড’। সেই শুরু, তারপর গত বাইশ বছর ধরে সেইসব গল্প-উপন্যাস উল্টেপাল্টে কতবার যে পড়লাম তার হিসেব রাখা শক্ত।
আর পড়তেই পড়তেই মনে হল ব্যোমকেশকে অংকের হিসেবে সামান্য কাটা-ছেঁড়া করে দেখলে মন্দ হয় না আর সেইসব কিছু সংখ্যা নিয়েই এই লেখা।

মোট গল্প বত্রিশটি। ‘পথের কাঁটা’ দিয়ে শুরু, ‘লোহার বিস্কুট’ দিয়ে শেষ। এই প্রসঙ্গে এটাও উল্লেখযোগ্য যে ব্যোমকেশ সমগ্র বা শরদিন্দু সমগ্রতে 'সত্যান্বেষীে' আগে থাকলেও সময়কালের দিক দিয়ে 'পথের কাঁটা' লেখা হয়ে গেছে এক বছর আগেই। ১৯৩২ সালে 'পথের কাঁটা' এবং 'সীমন্ত-হীরা লেখার পর শরদিন্দু যখন ঠিক করেন যে ব্যোমকেশ চরিত্র নিয়ে নিয়মিত লিখবেন তখন তিনি 'সত্যান্বেষী' গল্পে ব্যোমকেশ এবং অজিত চরিত্র দুটিকে দাঁড় করান এবং তাঁদের আলাপ ঘটান। শেষ গল্পটি, ‘বিশুপাল বধ’, শরদিন্দুর মৃত্যুর কারণে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। মাঝে পনেরো বছরের অনুপস্থিতি কিন্তু সেটা বাদ দিলে মোটামুটি নিয়মিত লেখা।


ব্যোমকেশের গল্পগুলোর দৈর্ঘ্যের কম বেশী আছে। ‘রক্তমুখী নীলা’ বা ‘লোহার বিস্কুট’ খুবই ছোট গল্প। আবার ‘চিড়িয়াখানা’ বা ‘আদিম রিপু’ পড়তে বসলে উপন্যাসের কথা মনে হয়। ‘রক্তের দাগ’ বা ‘ব্যোমকেশ ও বরদা’কে বলা যেতে পারে দৈর্ঘ্যের দিকে দিয়ে আদর্শ ব্যোমকেশের গল্প।


সেই ‘পথের কাঁটা’ থেকেই অজিত ব্যোমকেশের গল্প লিখে আসছিলেন কিন্তু ১৯৬৪ সাল নাগাদ অজিতের বইয়ের দোকানের ব্যস্ততা আর ব্যোমকেশের নতুন বাড়ি তৈরির দেখভাল গুরুদায়িত্বের  কারণে শরদিন্দু তাঁকে ‘নিষ্কৃতি’ দিলেন। ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত ‘বেণীসংহার’ বইয়ের ভূমিকায় লিখলেন,


          “অজিতকে দিয়ে ব্যোমকেশের গল্প লেখানো আর চলছে না। একে তো তার ভাষা সেকেলে হয়ে গেছে, এখনো চলতি ভাষা আয়ত্ত করতে পারেনি, এই আধুনিক যুগেও ‘করিতেছি’, ‘খাইতেছি’ লেখে। উপরন্তু তার সময়ও নেই। পুস্তক প্রকাশকের কাজে যে-লেখকেরা মাথা গলিয়েছেন তাঁরা জানেন, একবার মা-লক্ষ্মীর প্রসাদ পেলে মা-সরস্বতীর দিকে আর নজর থাকে না। তাছাড়া সম্প্রতি অজিত আর ব্যোমকেশ মিলে দক্ষিণ কলকাতায় জমি কিনেছে, নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে; শীগ্‌গিরিই তারা পুরনো বাসা ছেড়ে কেয়াতলায় চলে যাবে। অজিত একদিকে বইয়ের দোকান চালাচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ি তৈরির তদারক করছে; গল্প লেখার সময় কোথায়?
          দেখেশুনে অজিতকে নিষ্কৃতি দিলাম। এখন থেকে আমিই যা পারি লিখব।


ব্যোমকেশের গল্পের বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে ব্যোমকেশ, অজিত, সত্যবতী, পুঁটিরাম ছাড়াও অনেকেই একাধিক গল্পে উপস্থিত। ‘উপসংহার’ গল্পে ‘সত্যান্বেষী’র অনুকূল গুহ প্রতিশোধের নেশায় ব্যোমকেশ বোস হয়ে ফিরে এসেছেন। পুলিশের ইনফর্মার বিকাশের সাহায্য ব্যোমকেশ নিয়েছে চারবার। আবার বিভিন্ন পুলিশ কর্তাদের মধ্যে অনেকেই একাধিকবার ব্যোমকেশের কেসে জড়িয়ে পড়েছেন বা ব্যোমকেশকে ডেকে পাঠিয়েছেন।


ব্যোমকেশ শার্লক হোমস নয়, তাই শার্লকের মত ব্যোমকেশের অধিকাংশ কেসেই মক্কেল তার দরজায় এসে কড়া নাড়েনি। হ্যাঁ তার মক্কেলদের মধ্যে জমিদার, ব্যবসায়ী, জহুরী, কয়লাখনির মালিক অনেকেই আছেন কিন্তু তা ছাড়াও অনেক গল্পেই ব্যোমকেশ হঠাৎ করে কোন কেসে জড়িয়ে পড়েছে। সে ‘অগ্নিবাণ’ হোক বা ‘চিত্রচোর’। সেইদিক দিয়ে ফেলুদার সঙ্গে বেশ মিল আছে। সেই ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’ও যে কত জায়গায় ছুটি কাটাতে গিয়ে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল তার হিসেব রাখা শক্ত।

আবার ‘অর্থমনর্থম্‌’ বা ‘দুর্গরহস্য’-র মত গল্পে পুলিশের বিধুবাবু বা পুরন্দর পাণ্ডেরাই ব্যোমকেশকে ডেকে পাঠিয়েছেন। অনেকে সময় কেন্দ্রীয় সরকারও ব্যোমকেশের শরণাপন্ন হয়েছিল, যেমন ‘অমৃতের মৃত্যু’। যদিও অধিকাংশ সরকারী কেসেই গোপনীয়তার কারণে ব্যোমকেশ অজিতকে সঙ্গী করেনি আর তাই অজিতেরও সেগুলো লেখা হয়ে ওঠেনি। নাহলে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের সঙ্গে ব্যোমকেশের ঠিক কি আলোচনা হয়েছিল সেটাও হয়তো জানা যেত।

এই প্রসঙ্গে টুক করে দেখে নিলাম ব্যোমকেশের গল্পের বিভিন্ন পুলিশ চরিত্রদের। অনেকেই একাধিকবার গল্পে ছিলেন। আর রাখালবাবু তো শেষ পাঁচটি গল্পেই উপস্থিত।


অন্যান্য গোয়েন্দাদের মত ব্যোমকেশও মাঝে মধ্যেই ছদ্মনাম বা ছদ্মবেশের সাহায্য নিয়েছে। যদিও দিগিন্দ্রনারায়ণ ধরে ফেলেছিলেন এবং অজিতের সরলতার সুযোগে অপদস্থ করতেও ছাড়েননি। ব্যোমকেশ নিশ্চয়ই এই ঘটনা ভুলে যায়নি। তাই ‘হেঁয়ালির ছন্দে’ বনমালীবাবুর ওপরে একই পদ্ধতি লাগিয়েছিল।

ফেলুদা-তোপসের মত না হলেও ব্যোমকেশের ঘোরাঘুরি কম হয়নি। প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কেসই কলকাতায় হলেও ‘চিত্রচোর’ বা ‘বহ্নি-পতঙ্গের’ মত স্মরণীয় গুল্পগুলো কলকাতার বাইরেই। আবার ‘চিড়িয়াখানা’ গল্পে কলকাতা আর ২৪ পরগণা (সম্ভবত দক্ষিণ) সমানভাবেই উপস্থিত।

এবার আসা যাক ব্যোমকেশের গল্পের অপরাধীদের কথায়। একজন গোয়েন্দার জনপ্রিয়তা অনেকটাই নির্ভর করে তার বিপক্ষের সুচতুর মস্তিষ্কের ওপর। বুনো ওল না হলে কি আর বাঘা তেঁতুল হওয়া যায়। আর ব্যোমকেশের গল্পে আছে প্রফুল্ল রায়, অনুকূল গুহ, ভুজঙ্গধর-বনলক্ষ্মীর মত অবিস্মরণীয় সব চরিত্র।
ব্যোমকেশের অধিকাংশ কেসেই অপরাধীরা খুন করতে পিছপা হয়নি। তবে অনুকূলবাবুর মত অনেকেই কোকেন গ্যাং চালাতে চালাতেই দরকার মত ভাটিয়া লোকটাকে বা অশ্বিনীবাবুকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। আবার ‘খুঁজি খুঁজি নারি’ গল্পে অপরাধী কেউ ছিল না। গল্পের রহস্য লুকিয়ে ছিল একটি গুপ্ত উইল খুঁজে বের করার মধ্যে।

শধু পুরুষ নয়, মহিলা অপরাধীদেরও সম্মুখীন হতে হয়েছে ব্যোমকেশকে। ‘অদ্বিতীয়’র প্রমিলা পাল তো স্মরণীয়। যে একই সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী শান্তা সেন-তপন সেন সেজে বসবাস করত এবং ধরা পড়ে যাওয়ার পর ছুরি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে গেছিল ব্যোমকেশের ওপর। আবার ভুজঙ্গধর-বনলক্ষ্মী, রতিকান্ত-শকুন্তলা বা হৈমবতী-বিজয় বিশ্বাসের মত জোড় বেঁধে অপরাধের পথে পা বাড়ানোর নজিরও কম নয়।


ব্যোমকেশের গল্পগুলোর ম্যাচুরিটি বোঝা যায় এই গল্পের অপরাধীদের পরিণতি দেখলে। ধরা হয়তো প্রায় সবাই পড়েছেন। কিন্তু অন্তত ৭টি গল্পে অপরাধীদের কোন শাস্তি হয়নি। এমনকি ‘রক্তের দাগ’ গল্পের ঊষাপতি বা ‘হেঁয়ালির ছন্দ’ গল্পের ভূপেশবাবুর প্রতি ব্যোমকেশের প্রচ্ছন্ন সমর্থনই ছিল। আবার প্রফুল্ল রায়, ভুজঙ্গধর-বনলক্ষ্মী বা সন্তোষ সমাদ্দারদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা গেলেও তাদের ধরার আগেই তারা পালাতে পেরেছে পৃথিবী থেকে। 
সত্যান্বেষী ব্যোমকেশকে নিয়ে সাংখ্যতাত্বিক বিশ্লেষণ এই পর্যন্তই।



"It’s always very easy to give up. All you have to say is ‘I quit’ and that’s all there is to it. The hard part is to carry on”