কয়েকমাস আগে
সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সিকে সংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে একটা ব্লগপোস্ট
লিখেছিলাম। সেটা অনেকেরই বেশ ভালো লেগেছিল। তাই এই নতুন প্রচেষ্টা। শরদিন্দু
বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশের গল্পগুলোর সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহাসিক গল্প এবং
উপন্যাসগুলোও আমার মত অনেক পাঠকেরই অতি প্রিয়। আর ঐ গল্প-উপন্যাসগুলো নিয়েই এই
ব্লগপোস্ট।
কোন লেখাগুলোকে
ঐতিহাসিক গল্প-উপন্যাসের শ্রেণীতে ফেলা হবে সেটা অনেকাংশেই পাঠকের দৃষ্টীভঙ্গির
ওপর নির্ভর করে। এই লেখায় শরদিন্দু বন্দ্যোপাধায়ের মোট ৩০টি গল্প-উপন্যাসকে
ঐতিহাসিক লেখা হিসেবে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি গল্প এবং পাঁচটি উপন্যাস। ২৫টি
গল্পের মধ্যে ১৭টি গল্প রয়েছে শরদিন্দু অম্নিবাসের ষষ্ঠ খণ্ডে। সদাশিবের পাঁচটি
গল্পসহ আটটি গল্প রয়েছে চতুর্থ খণ্ডে এবং উপন্যাস পাঁচটি রয়েছে শরদিন্দু অম্নিবাস
তৃতীয় খণ্ডে।
রচনাকালের দিক দিয়ে
দেখলে ‘অমিতাভ’ এবং ‘রক্ত-সন্ধ্যা’ এই দুটি গল্প সর্বপ্রথম, সময়কাল ১৯৩০। এরপর
১৯৪০ থেকে ১৯৪৬ অবধি সময় বাদ দিলে মোটামুটি প্রতি বছরেই একটা-দুটো ঐতিহাসিক লেখা
হয়েছে। শেষ লেখা ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’, যে লেখার জন্য ১৯৬৭ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার
পান শরদিন্দু।
লেখার দৈর্ঘের
ব্যাপারে বিশেষ বৈচিত্র আছে। গল্পের মধ্যে যেমন ‘রেবা রোধসি’ বা ‘ইন্দ্রতূলক’এর মত
ছোট গল্প আছে সেরকমই ‘শঙ্খ-কঙ্কণ’ বা ‘বিষ কন্যা’র মত গল্পও আছে যেগুলোকে খুব
সহজেই নভেলা বলা যেতে পারে। অন্যদিকে ‘রুমাহরণ’ গল্পের দৈর্ঘকে বলা যেতে পারে ঠিক মাঝামাঝি।
উপন্যাসগুলোর মধ্যে
‘কুমারসম্ভবের কবি’র দৈর্ঘ সবচেয়ে কম। বাকি উপন্যাসগুলো যদিও দৈর্ঘের দিক দিয়ে
কাছাকাছি তবে সর্ববৃহৎ উপন্যাস অবশ্যই 'তুমি সন্ধ্যার মেঘ।'
গল্পগুলোর
বিষয়বৈচিত্রের দিকে দেখলে দেখা যাবে বিভিন্ন থিমে গল্পগুলো লেখা হয়েছে। তাদের
মধ্যে ‘অষ্টম সর্গ’, ‘প্রাগ্জ্যোতিষ’ বা ‘মরু ও সঙ্ঘ’-এর মত প্রেমের গল্প রয়েছে,
‘বিষ কন্যা’ বা ‘তক্ত্ মোবারক’-এর মত প্রতিশোধের গল্প রয়েছে আবার আছে
‘মৃৎপ্রদীপ’, যে গল্পের থীম বিশ্বাসঘাতকতা। ‘বাঘের বাচ্চা’, ‘রুমাহরণ’ বা সদাশিবের
অসাধারণ গল্পগুলোকে বলা উচিত অ্যাডভেঞ্চার। কিন্তু শুধু অ্যাডভেঞ্চার নয়,
অ্যাডভেঞ্চার আর রোমান্সের মিলন ঘটিয়ে শরদিন্দু লিখেছেন ‘চুয়াচন্দন’, ‘কালের
মন্দিরা’, ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘ’, ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’র মত অসাধারণ সব সৃষ্টি। তবে
একটা কথা সবসময় মাথায় রাখতে হবে, শরদিন্দুর এই গল্পগুলো তাঁর নিজের ভাষায়, “Fictionised
History নয়, Historical fiction.”
শরদিন্দু ‘জাতিস্মর’
বিষয়ে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। এই বিষয়ে তাঁর বিভিন্ন প্রবন্ধও রয়েছে। তাঁর প্রথম
দিককার বেশ কিছু গল্প জাতিস্মর ভিত্তিক। গল্পগুলো হল ‘অমিতাভ’, ‘রক্ত-সন্ধ্যা’,
‘মৃৎপ্রদীপ’, ‘রুমাহরণ’, ‘বিষ কন্যা’ এবং ‘সেতু’। এই শ্রেণীর গল্প রচনায় দুজন
বিদেশী লেখক, জ্যাক লন্ডন ও স্যার আর্থার কোনান ডয়েল, শরদিন্দুকে যথেষ্ট প্রভাবিত
করেছিলেন। পরের দিকে তাঁর লেখায় অবশ্য জাতিস্মর সম্পূর্ণ ভাবেই অনুপস্থিত। যদিও
আমার নিজের অন্তত ওনার গল্পগুলো পড়ে বারবার এটাই মনে হয়েছে, জাতিস্মর হতে পারলে কি
ভালোই না হত! চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের মগধে বা শশাঙ্কোত্তর মাৎস্যন্যায়ের বঙ্গদেশে আমি
ছিলাম কিনা বা থাকলে কোন ভূমিকায় ছিলাম সেই নিয়ে দিবাস্বপ্ন দেখতে কার না ভালো
লাগে!
শরদিন্দু তাঁর
ঐতিহাসিক গল্প-উপন্যাসে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়কালকে ছুঁয়ে গেছেন। প্রাগৈতিহাসিক যুগ
থেকে শুরু করে, মৌর্য-গুপ্ত যুগকে ছুঁয়ে শরদিন্দুর লেখা পৌঁছেছে মোগল যুগেও। কোন
কোন গল্পে এই সময়কাল অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে উল্লেখিত। যেমন ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’ উপন্যাসের শুরুতেই বলা হয়েছে,
“বৈশাখ মাসের অপরাহ্ণ। ১৩৫২ শকাব্দ সবে মাত্র
আরম্ভ হইয়াছে।”
আবার ‘রক্ত-সন্ধ্যা’
বা ‘বাঘের বাচ্চা’ গল্পের মূল চরিত্রগুলো যেমন ভাস্কো ডা গামা বা শিবাজির সময়কাল
ইতিহাসের পাতা থেকে সহজেই তুলে নেওয়া যায়। এবং অধিকাংশ গল্পেই সেই সুবিধা রয়েছে।
যদিও ‘রুমাহরণ’ বা ‘প্রাগ্জ্যোতিষ’এর মত যেসব গল্পের সময়কাল অতি প্রাচীন সেগুলোতে
আমাকেও আন্দাজেই কাজ চালাতে হয়েছে।
গল্পের কাল এবং
পাত্র নিয়ে কথা হল যখন তখন স্থান নিয়েও কিছু কথা থেকে যায়। শরদিন্দুর ঐতিহাসিক
গল্পের অধিকাংশই ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। তার মধ্যে পাটলিপুত্র এসেছে অনেকবার।
বঙ্গদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আছে একাধিক গল্প, যেমন, ‘গৌড়মল্লার’, ‘চুয়াচন্দন’ এবং
‘ময়ূরকূট’। ছত্রপতি শিবাজি এবং সদাশিবের সব গল্পের পটভূমিই মহারাষ্ট্র। আবার
‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’ উপন্যাস বা ‘রক্ত-সন্ধ্যা’ গল্পের পটভূমি দক্ষিণ ভারত। আবার
‘ইন্দ্রতূলক’ হল আর্যদের মধ্য এশিয়া থেকে ভারতে আসার গল্প। নিচের ম্যাপে বিশদে সমস্ত
গল্পের স্থান চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। যদিও ‘আদিম’ গল্পের পটভূমি প্রাগৈতিহাসিক
মিশর, ‘মরু ও সঙ্ঘ’ গল্পটি লেখা হয়েছে মধ্য এশিয়ার পটভূমিতে। ‘রুমাহরণ’-এর ভৌগোলিক
সীমা কিছুটা ধোঁয়াটে।
শরদিন্দুর ঐতিহাসিক
রচনাগুলো বাংলা সাহিত্যের কিছু অসাধারণ মণি-মানিক্য। শরদিন্দুর নিজেরও অত্যন্ত
পছন্দের ছিল এই লেখাগুলো। এগুলির প্রসঙ্গে নিজের ডায়েরিতে লিখেছিলেন (তারিখ
২৩.২.১৯৫১)-
“আমি আমার অনেকগুলি গল্পে প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধরিবার চেষ্টা
করিয়াছি। কেহ কেহ বলেন এইগুলি আমার শ্রেষ্ঠ রচনা। শ্রেষ্ঠ হোক বা না হোক, আমি
বাঙ্গালীকে তাহার প্রাচীন tradition-এর সঙ্গে পরিচয় করাইয়া দিবার চেষ্টা করিয়াছি। এ
চেষ্টা আর কেহ করেন না কেন? বাঙ্গালী যতদিন না নিজের বংশগরিমার কথা জানিতে পারিবে
ততদিন তাহার চরিত্র গঠিত হইবে না; ততদিন তাহার কোন আশা নাই। যে জাতির ইতিহাস নাই
তাহার ভবিষ্যৎ নাই।”
শেষ কথাগুলো বোধহয় শুধু বাঙালী নয়, এই দেশের অধিকাংশ লোকের ক্ষেত্রেই সত্যি।
Darun laglo lekhata! Statistical bisleson jokhon, main protagonist meye Na chele, setao aste parto! Aar Ei golpo ba uponyas niye Ki kokhono betar natok, cinema,comics,tv soap hoyeche ki- setao aste parto! Asha kori Baroda o bislesito hobe!
ReplyDeleteHna... Nari purush bishleshon kora jeto, kintu bolo dekhi, 'Tumi Sondhyar Megh' er main protagonist Joubanashri na bigrohopal? Erokom onekgulo bola jae.
DeleteNatok, cinema, comics konta ki hoyeche sei niye research amar sotyi i nei... jante parle sotyi i bhalo lagto
Maru o Sangha betar natok o hoyechilo abar hindi cinema! Trisagni! Nana Patekar chilen!
DeleteRight. Cinema ta youtube e achhe.
Deleteshorodindu niye radio natok akashbanir anek aachhe.even shodashib niye chhoToder jonyo dharabahik bajano hoy je kono pujo ba goromer chhuTir somoye.fm rainbow (107) te roj dupur duTo theke naTok baje.okhane request korle (22484042) listner er pocchonder naTok.o bajano hoy
Deleteshorodindu niye radio natok akashbanir anek aachhe.even shodashib niye chhoToder jonyo dharabahik bajano hoy je kono pujo ba goromer chhuTir somoye.fm rainbow (107) te roj dupur duTo theke naTok baje.okhane request korle (22484042) listner er pocchonder naTok.o bajano hoy
DeleteCompletely, absolutely awesome. Sorodindu+graphs and charts is like a magic recipe for people like me.
ReplyDeleteEnjoy! :D
Deleteদারুণ বিশ্লেষণ। :)
ReplyDeleteGreat analysis. Seriously just outstanding. Even for the people jara Saradindur bomkesh ar Tungovodrar tire chara serokom bhabe poreni (like me) tader kache eta akta guideline.
ReplyDelete:)
DeleteGreat analysis. Seriously just outstanding. Even for the people jara Saradindur bomkesh ar Tungovodrar tire chara serokom bhabe poreni (like me) tader kache eta akta guideline.
ReplyDeleteLekhar bishoy bostu choyon ebong, lekhatir pichone apnar porishrom er jonyo sadhubad janai. biseshoto manchitro onujayi golper shreni-binyas ti amar pochonder talikay sheershey thakbe.
ReplyDeleteProshongoto ekti arji roilo, uponyas er somoykal nirnoy er somoy jodi onar i lekha uponyas modhyostho kono uddhriti tule dite parten, tahole amra jara, deerghodin age kaler modiray ba tungobhodrar tir e katiye esechi, ghure aste partam ek jholok. Etukui.
Onek dhonyobaad! 'Tungabhadra Teere' golper shurur somoykal nirnoyer jonyo Sharadindur uddhriti kintu lekhar modhye achhe. onyo uponyas guli khetre eki jinis korle hoeto ektu ekgheye lagto.
DeleteI have never seen so thorough analysis! I love this!!
DeleteI want to invite to sharadindu.wikia.com to help create a great fandom community and encyclopedia there.
You may start at sharadindu.wikia.com/wiki/Timeline and make edits there.
Hoping for a best,
an avid reader.
Thanks for your response. I will look into this and let you know!
Delete