বাংলা মেগা
সিরিয়ালের উপকারিতা নিয়ে কমাস আগে একটা পোস্ট করেছিলাম। এটা তারই দ্বিতীয় পর্ব। আর
এর অনেকটাই উঠে এসেছে ফেসবুকের 'বাংলা আড্ডা/কুইজ' গ্রুপের আড্ডা থেকে। তাই এই লেখার
জন্য ঐ গ্রুপের বন্ধুদের একটা মস্ত বড় ধন্যবাদ প্রাপ্য।
আগের লেখায় এই
সময়কার বাংলা মেগা সিরিয়ালগুলোর যে সব বৈশিষ্ট উল্লেখ করেছিলাম সেগুলোর মত এই
লেখাও পুরোটাই আমার ব্যক্তিগত মতামত। কেউ একমত না হলে দয়া করে রেগে যাবেন না। বরং
কমেন্টে লিখবেন, খুশী হব।
(সূত্রঃ ঈন্টারনেট) |
লক্ষ্য করেছি যে, বাংলা সিনেমার প্রাক্তন নায়ক নায়িকাদের জন্য এই সিরিয়ালগুলোর
চেয়ে উপকারী আর কিছু হয় না। তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রেই এই বাংলা সিরিয়ালগুলোই তাঁদের
ব্যস্ত থাকার একমাত্র উপায়। বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগের সেইসব দিকপাল
অভিনেতা-অভিনেত্রীরা এই সব সিরিয়ালে অপ্রয়োজনীয় দাদু-দিদা বা বাড়ির গৃহকর্তার
ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। যদিও এঁদের চরিত্রগুলোর আদৌ কোন প্রয়োজন আছে কিনা সেটাই
দর্শকের পক্ষে বুঝে ওঠা চাপ। যা করার তা তো নায়িকা আর খলনায়িকারাই করেন তবু বোঝানো
হয় যে সংসারে এঁদের নাকি প্রচণ্ড দাপট। নানা রকম বোকা বোকা সিদ্ধান্ত এরা মাঝে
মধ্যে নিয়ে থাকেন সেটা সত্যি কথা। যেমন নায়িকার তৃতীয় বিয়ের সময় তার প্রথম বরের বাবা
ঘোষণা করেন যে, সেই বিয়ে তাঁদের বাড়ি থেকে হবে! কেন হবে? ওনার কীসের ইন্টারেস্ট?
বাকিরা আপত্তি তুলছে না কেন? এইসব প্রশ্নের উত্তর চাইলে সিরিয়ালের পরিচালক বা
আপনার বাড়ির যারা নিয়মিত ঐ সিরিয়ালের দর্শক তাঁরা নির্ঘাত আপনাকে কান ধরে ঘরের
বাইরে নিল ডাউন করিয়ে দেবেন।
এ ব্যাপারে সন্তু বাবু আর সাবিত্রী দেবীর অভিজ্ঞতাই সবচেয়ে বেশী। তার মধ্যে
হঠাৎ একটি সিরিয়ালের লেখক/লেখিকারা বোধ হয় নায়ক-নায়িকাদের এতগুলো করে বিয়ে দিয়েও
নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করে উঠতে পারছিলেন না। তাই গল্পের স্রোতে ভাসতে
ভাসতে সাবিত্রী দেবীর চরিত্রটির চল্লিশ বছর আগে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া বর আবার গল্পে
ফিরে এলেন। শুধু তাই নয়, তাঁদের আবার মালা বদল করে বিয়েও হল!
সবচেয়ে দুঃখের কথা, সাবিত্রী দেবীর স্বামীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে প্রথমবার
বাংলা মেগা সিরিয়ালের জগতে পা দিলেন সৌমিত্র চ্যাটার্জী! সিরিয়ালের টি আর পি যে
বাড়ল তাতে সন্দেহ নেই কিন্তু আমার মত সৌমিত্র ভক্তরা আঁতকে উঠে চোখে-কানে গঙ্গাজল
দিলাম! ভদ্রলোক যখন সিমেন্ট, ব্যাথার ওষুধ এমনকি হনুমান চল্লিশা মহা যন্ত্রেরও
বিজ্ঞাপন করেছিলেন তখন বাঙ্গালী সেই পঞ্চাশ-ষাট দশকের রোমান্টিকতা থেকে সেটাকে খুব
একটা পাত্তা দেয়নি। কিন্তু তাই বলে মেগা সিরিয়াল! ঠিক হজম হল না সৌমিত্রবাবু, ক্ষমা
করবেন।
বাংলা সিরিয়ালের নায়ক-নায়িকাদের ছদ্মবেশ নেওয়ার ক্ষমতা হলিউডের বাঘা বাঘা
মেক-আপ আর্টিস্টকেও হার মানাবে! তারা যত ছাপোষাই হোক না কেন বিপদে পড়লেই ছদ্মবেশের
আশ্রয় নেয়। আর শুধু তাই নয়, ছদ্মবেশ যেমনই হোক, হালকা কিম্বা ভারী, সিরিয়ালের আর
অন্য কোন চরিত্ররা কোনদিনই তাদের চিনে উঠতে পারে না! একটা গোঁফ লাগালেই (নায়িকাদের
কথা বলছি না) বা কপালে একটা টিপ আর দু-চারটে চন্দনের ফোঁটা লাগালেই (নায়িকাদের
কথাই বলছি) তাদের আর কেউ চিনতে পারে না!
এই প্রসঙ্গে একটা পুরনো গল্প মনে
পড়ে গেল। আদিত্য চোপড়া মহাশয়ের ক্লাসিক সিনেমা ‘রব্ নে বানা দি জোড়ি’ সময়ের ঘটনা।
কোন এক শুক্রবার আমার অফিসের তদানিন্তন টিম ডিরেক্টর বাকিদের সঙ্গে খেজুরে
করছিলেন। আমায় জিজ্ঞেস করলেন,“লাস্ট উইকেন্ডে কী করলে?”
তাঁকে জানালুম যে, উপরে উল্লেখিত
সিনেমাটা দেখেছি। উনি উৎসাহিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কেমন হয়েছে? রোমান্টিক সিনেমা?”
“না তো... আমার মনে হল হরর্
সিনেমা।”
“হরর্ সিনেমা! কেন?”
“আপনিই বলুন, আমি আমার চশমাটা খুলে
ফেললে আর চুলটা খোঁচাখোঁচা করে আঁচড়ালেই আমার গার্ল ফ্রেন্ড আর আমাকে চিনতে পারবে
না! এটা হরর্ সিনেমা নয়?”
ভদ্রলোক আমাকে আর ঘাঁটাননি তারপর।
ও, বাংলা সিরিয়ালের কূট-কাচালি নিয়ে তো আগেই বলেছি, আজকাল আবার দেখছি বিষের
ব্যবহার খুব বেড়ে গেছে। যে পারছে যখন তখন অন্যের পায়েসে (হ্যাঁ পায়েসেই শুধু...
কেন জানি না!) বিষ মিশিয়ে দিচ্ছে। আর কে না জানে প্রখর রুদ্র, জেমস বন্ড ও বাংলা
সিরিয়ালের নায়িকাদের কেউ কখনো মেরে ফেলতে পারে না। তাই হয়ে বিষ মেশানো বাটি বদলে
যাচ্ছে নয় গল্পের খলনায়কের হৃদয় পরিবর্তনের ফলে সে ঐ বিষ মেশানো পায়েস খলনায়িকাকেই
খাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
তবে একটি সাম্প্রতিক সিরিয়াল একঘেয়েমির দিক দিয়ে সবাইকে হার মানিয়েছে। নিজের
ইচ্ছে না হলেও ওটি আমাকে দেখতে হয় এবং দেখতে দেখতে আমার ইচ্ছে করে গল্পের লেখক বা
লেখিকাকে ধরে ঠ্যাঙ্গাতে (যেমন অজিত বিওমকেশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেরকমভাবে)।
(সূত্রঃ ইন্টারনেট) |
এই গল্পের দুই নায়িকা-এক নায়ক। দুই নায়িকা আবার বোন... সহোদরা না সৎ জানি না,
জিজ্ঞেস করে লজ্জা দেবেন না। যা বুঝেছি, নায়কের বাড়ির লোকের ইচ্ছে বড় বোনের সঙ্গে
নায়কের বিয়ে ঠিক করেছে, কিন্তু নায়ক আর ছোট বোন প্রেম করছে (ইচ্ছে করেই...)। বড়
বোন সেই ব্যাপারে বেশ ক্রুদ্ধ। তাই সেও নায়কের সঙ্গে প্রেম করার চেষ্টা করছে।
নায়িকাদের বাড়ির লোক বোধহয় এই কনফ্লিক্টের কথা জানে কিন্তু তাঁদের সেটা নায়কের
বাড়ির লোককে সেটা জানানোর ইচ্ছে হয়নি (এরকম তো কতই হয়!)। ফলে নায়কের বাড়ির লোক বড়
বোনকেই ভাবী বউমা ভেবে ন্যাকামি করে যাচ্ছে। এদিকে নায়ক-নায়িকা এবং বড় বোন
ব্যাপারটা কাউকে বলছেও না, কেন বলছে না সেটা ভগবানবাবুও জানেন বলে মনে হয় না,
সুতরাং তিনজনেই ইচ্ছে করে সারাক্ষণ মুখ ব্যাজার করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এবার বলুন, বড়মন্ত্রীর রাজকন্যার গুলিসুতো খেয়ে ফেলাটা কি এর চেয়েও জটিল?