ফটকেমি
এবারের বইমেলার যে বইগুলো এখনো অবধি পড়লাম
সেগুলোর মধ্যে ফটকেমি সবচেয়ে ভালো লেগেছে। নিজেদের ছোটবেলার স্কুলের স্মৃতি তো আমাদের সবার
কাছেই খুব মূল্যবান। আর এই বইয়ের বিশেষ গুন হল পড়তে পড়তে মনে হয় এর অনেকগুলো ঘটনা
যেন আমাদের স্কুলে আমার সামনেই ঘটেছে। আর ফটিক, তার কথা কী বলব। কখনো সে পাগলা
দাশুর মত বুদ্ধিমান, কখনো গাবলুর মত আলাভোলা, কখনো ক্যালভিনের মত দার্শনিক আবার
কখনো ডেনিসের মতই বদমাশ। তার কাণ্ডকারখানা পুরো স্কুলের মাস্টারমশাইদের বিরক্তির
কারণ, অবশ্য মাস্টারমশাইরাও তো ছোট ছিলেন তাই মাঝে মাঝে ফটিকের কথায় মুখ নিচু করে
হাসতেও দেখা যায় তাঁদের।
সব মিলিয়ে ফটিকের ফটকেমির গল্পগুলো আমাদের
হৃদয়ের বড় কাছের। আজকাল চারদিকে যা চলছে তাতে সোজা কথা সোজা ভাবে বললে যে কোন
সময়েই সমূহ ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই ফটিক যখন ক্লাসে মাস্টারমশাইদের
কঠিন প্রশ্নের সরলতম উত্তর দিয়ে বিপদে পড়ে তখন হাসির সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতি
সমর্থনে মাথা নাড়তেই হয়।
গল্পে ফটিক ছাড়াও এসেছেন তার মাস্টার মশাইরা,
হেডমাস্টারমশাই, ক্লাসের ফার্স্ট বয় প্রদীপ, যার সঙ্গে ফটিকের বেশ খানিকটা
রেষারেষিও আছে। এবং আছেন ফটিকের বাবা, প্রায় প্রতি গল্পের শেষের যাঁর ডাক পড়েছে স্কুলে
হেডমাস্টারমশাইয়ের ঘরে।
ডায়েরির ফর্মে লেখা
গল্পগুলোয় লেখকের সাধু ভাষার ওপর দখল সাধুবাদযোগ্য। শুধু তাই নয়, গল্পগুলোর পরিমিত
এবং পরিচ্ছন্ন হাস্যরস আমার মত পাঠকের জন্য বেশ স্বস্তিদায়ক এবং উপভোগ্য।
আরিফবাবুর লেখা এই প্রথম পড়লাম। ভবিষ্যতে তাঁর অন্যান্য লেখা পড়ার ইচ্ছে রইল।
লাকি থারটিন
লাকি থারটিন বইয়ের লেখক
সুমন সরকার আমার প্রেসিডেন্সী কলেজের জুনিয়ার। সুতরাং অগ্রজ হিসেবে তার লেখার
প্রতি একটা পক্ষপাতের সম্ভাবনা থেকেই যায়। কিন্তু তার থেকে বেরিয়ে এসেও
নিরপেক্ষভাবেই বলা যায়, “সুমন তুই বেশ লিখিস।”
আমাদের চারদিকের
দৈনন্দিন জীবনের ঘটনাপ্রবাহ থেকে কয়েকটা বেছে নিয়েই তার রম্যরচনার সংগ্রহ। কখনো
কলকাতার অটো, কখনো পরীক্ষার চোতা, কখনো গুল নিয়ে গুলতানি... আমাদের চেনা-পরিচিত
বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের চারদিকের চেনা মুখগুলোকে নিয়ে লেখা ছোট ছোট গল্প, স্মৃতি,
মজার ঘটনা। তার সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে টিপ্পনী... সব মিলিয়ে বেশ মনে রাখার
মত তেরোটা রম্যরচনা নিয়ে লেখা বই লাকি থারটিন।
আমার বিশেষ করে পছন্দ
হয়েছে বইয়ের শেষ লেখা, ‘তেলি বড়ার চপ’। আমাদের সকলেরই ছোটবেলার এরকম বেশ কিছু
স্মৃতি থাকে। সুমনকে ধন্যবাদ ওর কলমের জোরে আমাদের ছোটবেলার সেইসব চিরন্তন
স্মৃতিগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।