~~ তীর্থস্থান ~~
সব ধর্মের মানুষই এক এক সময়ে
তীর্থ করতে বিভিন্ন চেনা-অচেনা জায়গায় পৌঁছে যান। আমার আর শ্রেয়সীর ধর্ম হল ক্রিকেট।
সুতরাং লর্ডস আর ওভালের মত ক্রিকেটীয় তীর্থক্ষেত্র দেখে নেওয়ার পর সময় হল একটু দূরের
এক তীর্থস্থানে যাওয়ার। এবং এটার কথা দেশে থাকতে শ্রেয়সীই মনে করিয়েছিল!
সুতরাং দিন তিনেক লন্ডনে কাটিয়ে
পরের দিন আমরা বেরিয়ে পড়লাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্য টনটনের উদ্দেশ্যে। ভিক্টোরিয়া কোচ
স্টেশান থেকেই ঠিক সময় মত বাস ছেড়ে ঘন্টা চারেকের মধ্যে দিল টনটন।
সামারসেট কাউন্টির ভেতরে এই টনটনে আসার কারণ শুধু ক্রিকেট মাঠটা একবার দেখা। কেন
টনটনের ক্রিকেট মাঠ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান সেটা বোঝার জন্য নিচের
লিংকটা রইল। http://www.espncricinfo.com/series/8039/scorecard/65213/india-vs-sri-lanka-21st-match-icc-world-cup-1999 এছাড়াও সামারসেটের হয়ে ঐ মাঠে ভিভ রিচার্ডস এবং ইয়ান বথামের
কিছু স্মরনীয় পারফর্মেন্স আছে। গাভাস্কারও একটা মরশুম খেলেছিলেন সামারসেটের হয়ে।
বাসস্ট্যান্ড
থেকে মাঠটা কাছেই। সুতরাং গুগল ম্যাপের ভরসায় হাঁটা লাগালাম টন নদীর পাশের পার্কের
মধ্যে দিয়ে। কাঁধে রুকস্যাক, পাশে শ্রেয়সী, টনটন আসার প্ল্যানটা যার
মস্তিষ্কপ্রসুত। অন্য স্যুটকেসটা পাবলাভেরই নিচের বেসমেন্টে রেখে এসেছিলাম। পার্কের
মধ্যে দিয়ে হেঁটে এসে একটা বড় মোড় পেরিয়েই প্রথমে পড়ল মাঠের ধারের বিখ্যাত
গির্জাটা। সেটাকে বাঁয়ে রেখে আর ২-৩ মিনিট হাঁটতেই এসে পড়লাম সামারসেট ক্রিকেট
ক্লাবের ক্যুপার আসোসিয়েটস কাউন্টি গ্রাউন্ডের মেন গেটের সামনে। চারদিকে বিশেষ
লোকজন নেই। কয়েকটা গাড়ী পার্ক করা ছিল। আমি আর শ্রেয়সী একটু পাশ দিয়ে হেঁটে মাঠের
নামার জায়গা পেয়ে গেলাম। মাঠের ভেতরে দুজন গ্রাউন্ডসম্যান পিচ দেখভাল করছিলেন।
আমাদের মাঠে নামতে দেখেও তাঁরা কিছু বলেননি। আমিই ভদ্রতা করে কাছের জনকে জিজ্ঞেস
করলাম যে পিচের কাছে যাওয়া যাবে কিনা, তাতে বলল, "please stay off the pitch" সুতরাং আমরা ঐ মাঠের ওখানেই
ছবি তোলা শুরু করলাম। মাঠ এবং মাঠের পাশের গির্জাটারই বেশী ছবি তোলা হল, তার সঙ্গে
আমাদের ছবিও। দুজনেই আবার ঐ ৯৯ সালের দুই নায়কের এক-একজনের ছবি দেওয়া টিশার্ট পড়ে
এসেছিলাম। টনটনের মাঠে দাঁড়িয়ে তোলা সেই ছবিগুলো পরে একজনকে দেখানোরও সুযোগ
পেয়েছিলাম। আশা করি ভবিষ্যতে অন্যজনকেও দেখানোর সুযোগ পাব।
এইভাবে মিনিট
দশেক ছবি-টবি তুলে মাঠের বাইরে বেরিয়ে খুঁজতে গেলাম মাঠের লাগোয়া ক্রিকেট
মিউজিয়ামটা। কিন্তু সোমবার বলে সেটা বন্ধ। তার বদলে লাগোয়া ছোট্ট দোকানটায় ঘুরে টুকটাক
জিনিসপত্তর দেখছি, দোকানের ভদ্রলোক শ্রেয়সীর টিশার্ট থেকে রাহুল দ্রাভিডকে বুঝতে
পেরে জানালেন সম্প্রতি নাকি রাহুল ভারতের আন্ডার-১৯ টিম নিয়ে সামারসেট ঘুরে গেছে।
তখন নাকি এই দোকান থেকে নিজের ছেলেদের জন্য গ্লাভস ইত্যাদি কিনেও নিয়ে গেছে।
মাঠ থেকে বেরিয়ে
ফেরার পথে পড়ল 'রিং অফ বেলস' রেস্তোরা। সেখানে টুক করে ব্রিটিশ স্টাইলের স্টেক,
বার্গার এবং বিয়ার দিয়ে লাঞ্চ করে আমরা আবার হাঁটা লাগালাম বাসস্ট্যান্ডের দিকে।
আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ম্যানচেস্টার। কিন্তু বাসে টনটন থেকে ম্যানচেস্টার যাওয়াটা
সহজ নয়। তাই আমরা যে বাসে টিকিট কেটেছিলাম সেটা যাচ্ছিল প্রথমে টনটন থেকে
ব্রিস্টল, তারপর ব্রিস্টল থেকে বার্মিংহাম, সবশেষে বার্মিংহাম থেকে ম্যানচেস্টার।
ব্রিস্টল আর
বার্মিংহামে মাত্র ঘন্টা খানেক ব্রেক ছিল বলে কোথাও যাওয়ার সুযোগ ছিল না।
ব্রিস্টলে রাজা রামমোহন রায়ের সমাধিটা দেখার খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু সেটা আর হল না।
তার বদলে বাস স্ট্যান্ডের বাইরে কিছুটা ঘুরে এসেছিলাম। বার্মিংহামে সেই চেষ্টাও
করিনি। যাই হোক, এই ধরণের ঘোরার ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যেই গণ্ডগোল হওয়ার চান্স থাকে।
আমাদেরও সেটাই হল বার্মিংহাম থেকে ম্যানচেস্টার যাওয়ার রাস্তায়। হাইওয়েতে কিছু
একটা মেরামতি চলছে বলে প্রচণ্ড জ্যাম। সেটা বাসে অ্যানাউন্স করে আমাদের জানিয়েও
দেওয়া হল এবং বাস চলল শামুকের গতিতে। শেষ অবধি রাত নটার বদলে আমরা ম্যানচেস্টারের
বাসস্টেশানে গিয়ে নামলাম প্রায় রাত এগারোটার সময়।
আর ম্যানচস্টারে
যেহেতু ক্লাবে যাওয়াটাই উদ্দেশ্য ছিল তাই হোটেলটা বুক করা হয়েছিল বাসস্ট্যান্ড
থেকে বেশ খানিকটা দূরে ক্লাবের কাছে। উবেরও
পাওয়া গেল না। এখানে আমাদের বাঁচিয়ে দিল সিটিম্যাপার। প্রথমে দেখে নিলাম কোথা থেকে
বাস পাচ্ছি হোটেলের জন্য। পিকাডেলি গার্ডেন্সের বাসের ড্রাইভার জানালো যে কীসব কাজ
চলছে বলে বাস পুরোটা যাবে না, শেষে প্রায় আধ ঘন্টা হাঁটতে হবে। সারাদিন ঘুরে তখন
শরীর আর চলছে না। কপালজোরে সিটিম্যাপার দেখিয়ে দিল যে মাঝের একটা স্টপে নামলে একটা
অন্য রাস্তা দিয়ে পনেরো মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাবো। সুতরাং সেটাই করা হল। যদিও
সেটুকু হাঁটতেও শ্রেয়সী ঝামেলা করছিল। অত রাত্তিরে টেম্পারেচারও কমে গেছিল অনেকটা।
যাইহোক রাস্তাতেই একটা সুপার মার্কেট থেকে
প্যাকড ইন্ডিয়ান স্টাইল চিকেন কারি আর রাইস কিনে নিলাম। ওটা না পেলে রাত্তিরে
বিস্কুট খেয়েই কাটাতে হত। হোটেলে ঢুকে চটপট এন্ট্রি করে ঘরে চলে গেলাম। শুয়েও
পড়লাম তাড়াতাড়ি।