ওয়েস্ট ইন্ডিজ মানেই ছবির মত সুন্দর কিছু সমুদ্রতীর, জলদস্যু এবং ক্রিকেট। আর আমাদের ছোটবেলা পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ মানে শুধুই ক্রিকেট নয় নয়নাভিরাম, রোমান্টিক ক্রিকেট। আর তাই যখন আমার না দেখা স্পেশাল খেলোয়াড়দের তালিকা বানাতে বসি, সেই তালিকা সহজে শেষ হয় না। সেই প্রথম যুগের লিয়ারী কনস্ট্যানটাইন, জর্জ হেডলি থেকে শুরু করে ফ্রাঙ্ক ওরেল, এভার্টন উইকস, ক্লাইড ওয়ালকট, রোহণ কানহাই, আল্ভিন কালিচরণের মত ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে হোল্ডিং, রবার্টস, গার্নারের মত ফাস্ট বোলার, কত রথি-মহারথীদের খেলাই লাইভ দেখে উঠতে পারিনি। মার্শালের খেলা দেখেছি শুধু ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ আর তার আগের ত্রিদেশীয় সিরিজে।
‘ফায়ার ইন ব্যাবিলনের’ দেশ হলেও, বইয়ের পাতায় পড়া যে সমস্ত ক্যারিবিয়ানের খেলোয়াড়দের খেলা আমি দেখতে চাই তাঁদের মধ্যে প্রথমেই থাকবেন এক রহস্যময় স্পিন মানিকজোড়। ১৯৫০ সালে যাঁদের মাপা স্পিন বোলিং ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এনে দিয়েছিল ইংল্যান্ডের মাটিতে তাঁদের প্রথম সিরিজ জয়। যাঁদের নিয়ে লর্ড বিগিনার লিখেছিলেন,
“With those little pals of mine
Ramadhin and Valentine!”
Ramadhin and Valentine!”
ছোট্টখাট্ট, গম্ভীর চেহারার রামাধিন আর ভ্যালেন্টাইনকে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড় বা ফ্যানেরা কেউই সিরিজের শুরুতে বিশেষ গুরুত্ব দেননি কিন্তু সিরিজ শেষ হলে দেখা গেল, ৪ টেস্টের সিরিজে রামাধিন এবং ভ্যালেন্টাইন মিলে বল করেছেন ৮০০ ওভার। সেই ৮০০ ওভারে তাঁরা নিয়েছেন ৫৯ উইকেট ২১.৬৬ গড়ে এবং তাঁদের বলে প্রতি ওভারে রান উঠেছে গড়ে ১.৫৯। রাতারাতি নায়ক হয়ে যান রামাধিন-ভ্যালেন্টাইন আর সূচনা হয় ক্যালিপ্সো ক্রিকেটের।
এরপর আমরা এক লাফে এগিয়ে আসব দশ বছর। সেই মোহময় ১৯৬০-৬১ সালের অস্ট্রেলিয়া ট্যুর, ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা সিরিজ। ফ্র্যাঙ্ক ওরেলের অসম্ভব জনপ্রিয় দলের প্রধান হীরকখণ্ডটি ছিলেন গ্যারি সোবার্স, ক্রিকেটের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা অল-রাউন্ডারদের মধ্যে প্রথম তিনে থাকবেন যিনি, কিন্তু শঙ্করীপ্রসাদের লেখা পড়ার সময় আমার মন কেড়ে নিয়েছিলেন ওয়েস হল। দীর্ঘকায়, আমুদে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্টবোলার, যিনি দলের জন্য ১০০ শতাংশ দেওয়ার পাশাপাশি নিজের ব্যাটিং নিয়ে অবলীলায় ইয়ার্কি মারছেন, আবার টাই টেস্টের শেষ ওভারে নিজের বলে অসম্ভব ক্যাচ নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছেন। সব মিলিয়ে এক চরম আকর্ষনীয়ভাবে ওয়েস হলকে নিজের লেখায় তুলে ধরেছিলেন শঙ্করীবাবু। আর ওয়েস হল পেয়েছিলেন এক নতুন ভক্তকে, খেলা ছাড়ার প্রায় ২৫ বছর পরে।
হলের মতই পড়েছিলাম রয় গিল্ক্রিস্টের কথা। সেই সহজ সরল মানুষটি যিনি বল হাতে পেলেই হয়ে উঠতেন আগুনে, প্রায় উন্মাদ এক ফাস্টবোলার। যদিও নিজের আগুনে মেজাজের জন্য খুব বেশীদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেননি গিল্ক্রিস্ট কিন্তু এই বিতর্কিত মানুষটির খেলা দেখার ইচ্ছেও আমার অনেকদিনের।
১৯৭০ সালের পর থেকে অধিকাংশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সুপারস্টারদের খেলার ভিডিওই ইউটিউবে এবং অন্যান্য ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। তাই ক্লাইভ লয়েডের ১৯৭৫ সালের ফাইনালের সেঞ্চুরি বা ভিভ রিচার্ডসের অসামান্য সব ইনিংসই চাইলেই দেখা যায় এখন। তবে হ্যাঁ, রিচার্ডসের চ্যুইংগাম চিবোতে চিবোতে ঠ্যাঙ্গানি লাইভ দেখার মজাটা অন্যরকম হত বলেই মনে হয়। বিশেষ করে যদি প্রতিপক্ষ ভারত না হত।