লেখাটার শুরুতেই মনটা
খারাপ হয় গেলো। এই যে ‘প্রবাসী’ শব্দটা ব্যবহার করতে হল সেটা খট করে কানে এসে লাগল।
তপোব্রত, শেষে তুমি কিনা
প্রবাসী হয়ে গেলে!
সত্যি বলতে দাক্ষিণাত্যে প্রায়
দুদিন কাটিয়ে ফেলেছি। পৃথিবী বিখ্যাত তাজ হোটেলের এই শাখাটিই এই অঞ্চলের একমাত্র
হোটেল আর তাই আমাদের সবাইকেই অফিসের কাছে রাখতে এই হোটেলটিতে তোলা হয়েছে।
শুনতে ভালই লাগছে জানি,
এমনকি আমার কিছু পাঠক যদি আমাকে হিংসে করতে থাকেন তাহলেও তাতে আমার কিছু করার নেই
কিন্তু সত্যি বলছি আমার মত পাতি লোকের পক্ষে এই ঝাঁ চকচকে হোটেলে থাকা বেশ চাপের
ব্যাপার!! পদে পদেই অপদস্থ হওয়ার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে আছি। সারাক্ষণই মনে হয় এই বুঝি
হাস্যকর কিছু করে ফেলব। ঘরের অতিরিক্ত জিনিসগুলোর কোনগুলো ফ্রি থেকে শুরু করে আলো
নেবানোর সুইচগুলো কোথায়? আমাদের মনে প্রশ্নের অভাব নেই।
তবে সবচেয়ে হাস্যকর করলুম
প্রথম দিন দুপুরে। আগের দিন সারা রাত ঘুমোইনি, তারপর ভোরবেলার বিমান যাত্রার ধকল
কাটাতে ঠিক করলুম যে স্নান করে ঘন্টা দুয়েক ঘুমিয়ে নেওয়া যাক। তাজ হোটেল, পুরোটাই
এসি, সেটাও বেশ ভালই চলে। শুয়েই বেশ শীত করছিল, কিন্তু অনেক খুঁজেও কোন কম্বল
পেলুম না ঘরে। ঘরের সব কম্বলই নিরুদ্দেশ! সব জায়গাই দেখলাম ভাল করে এমনকি খাটের তলা পর্যন্তও, কিন্তু কম্বল পেলুম না। কি আর করি, শেষ পর্যন্ত খাটের ওপর রাখা
একটি দেড় ফুট প্রস্থের চাদর এবং একাধিক বালিশের সাহায্যে শীত নিবারণ হল। মানে ওই
যতটুকু হয় আর কি!
বিকেল হতেই সৌম্যজিতের
ঘরে গিয়ে দেখলাম খাটের ওপর দিব্যি একটা কম্বল। মনে মনে যখন তাজের লোকেদের একচোখোমির
গালাগালি দেব ভাবছি তখনই বুঝলাম যে, ব্যাপার আর কিছুই নয়, কম্বলটা পাতা আছে
বিছানার ওপরেই আর আমি সারা দুপুর কাঁপতে কাঁপতে সেটার ওপরেই শুয়েছি, ভেতরে নয়।
সৌম্যজিৎও আমার মতই করার চেষ্টা করেছিল তবে শেষ পর্যন্ত ওর স্ত্রীই খুঁজে বের করে
কম্বলটা। অতঃপর কম্বল নিয়ে আর সমস্যা না হলেও তাজ হোটেলের রহস্যের সেই সবে শুরু। তাজে
আর দিন ১০ থাকব, জানি না শেষ অবধি এরকম আর কত অভিজ্ঞতা হতে চলেছে!!