Tuesday, October 23, 2012

মন খারাপ


আমার মাঝেমাঝে মনে হয় পৃথিবীটা বোধ হয় সত্যি সত্যি ১২ সালের ২১শে ডিসেম্বর ধ্বংস হয়ে যাবে। কখনো কখনো মনে হয় যে ধ্বংস হয়ে যাওয়াটাই বোধ হয় ভালো।
নাহলে এটা কি রকম পুজো কাটাচ্ছি?? একদিন যশ চোপড়া, দুদিন পরে সুনীল গাঙ্গুলী... আর যে নিতে পারছি না।
আজ সকালে বাবা যখন খবরটা দিল, তখন সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার পুরো ছোটবেলাটাই তো আনন্দমেলা আর সুনীল গাঙ্গুলীর লেখা পড়ে কেটে গেল। শুধু তো কাকাবাবু-সন্তু নয়, নীল মানুষ, আঁধার রাতের অতিথি, হাজার হাজার ছোটগল্প, তার তো কোন হিসেবই নেই। তার পরে পরেই সেই সময়, প্রথম আলো, পূর্ব-পশ্চিম, ছবির দেশে কবিতার দেশে, বারবার পড়েছি আর মুগ্ধ হয়েছি। যেকোনো ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে দারুণ লিখতে পারতেন সুনীল। আবার অরন্যের দিনরাত্রী, প্রতিদ্বন্দ্বী, একা এবং কয়েকজন, কোনটা ভালো লাগেনি!
কাকাবাবু তো মুখস্থ ছিল। হ্যাঁ, ১৯৯২-এর সন্তু ও এক টুকরো চাঁদ উপন্যাস এর পর আর একটাও বিশেষ ভালো লাগেনি, সেটা দীর্ঘ ২০ বছর! কিন্তু তার আগের ১০ বছর!
১৯৮৩ – খালি জাহাজের রহস্য
১৯৮৪ – মিশর রহস্য
১৯৮৫ – কলকাতার জঙ্গলে
১৯৮৬ – জঙ্গলের মধ্যে এক হোটেল
১৯৮৭ – রাজবাড়ির রহস্য
১৯৮৮ – বিজয়নগরের হীরে
১৯৮৯ – কাকাবাবু বজ্রলামা
১৯৯০ – উল্কা রহস্য
১৯৯১ – কাকাবাবু হেরে গেলেন
১৯৯২ – সন্তু ও এক টুকরো চাঁদ
কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব। শুধু এগুলো তো নয়, ভয়ঙ্কর সুন্দর, পাহাড় চূড়ায় আতঙ্ক, সবুজ দ্বীপের রাজা, ভূপাল রহস্য সবকটাই তো ভীষণ ভালো। পড়লেই মন ভালো হয়ে যায়ে।

সুনীলের মৃত্যু শুধু একজন লেখকের মৃত্যু নয়, আসলে মারা গেলেন দুজন! নীললোহিতকে কে ভুলতে পারে? দিগশূন্যপুরে যাওয়ার ইচ্ছে কার নেই? তিন সমুদ্র সাতাশ নদী পার হতে চায় না কে? সেই লেখাও আর বেরোবে না।

সুনীল কতটা ভালো লেখক ছিলেন বা তাঁর লেখায় কার প্রভাব আছে সে প্রসঙ্গে না গিয়ে শুধু তাঁর লেখার প্রভাবের কথা যদি ভাবি তা সমসাময়িক যেকোনো লেখকের চেয়ে বেশী। শেষ ৩০-৪০ বছরের বাংলা সাহিত্য নিয়ে কথা বলতে গেলে সুনীলের মত প্রভাবশালী লেখক খুব কমই আছেন।
হ্যাঁ, আনন্দ গ্রুপের অংশ ছিলেন, প্রচার নিয়ে ভাবতে হয়নি কিন্তু কৃত্তিবাস থেকে আনন্দবাজার অবধি ওনার ওই পথচলাকে অস্বীকার করার জায়গা নেই।

আমি জানি না, মৃত্যুর পর আত্মা কোথায় থাকে, কিন্তু যেখানেই থাকুক, অন্তত দুজন আজ সেখানে খুব খুশি, ৬০-এর সেই দামাল সময়ের সেই দুই ঈষৎ নেশাগ্রস্ত কবি শক্তি আর তারাপদ। সুনীল আসছে যে, খালাসীটোলার আড্ডা, মধ্যরাতের কলকাতা দাপিয়ে বেড়ানো হয়তো আবার শুরু হবে।

আপনাকে মিস করব সুনীল গাঙ্গুলী, কাকাবাবুর ক্রাচের শব্দ আর নতুন করে শুনতে পাব না, ভালো লাগছে না... সত্যি ভালো লাগছে না।

2 comments:

"It’s always very easy to give up. All you have to say is ‘I quit’ and that’s all there is to it. The hard part is to carry on”