Sunday, July 7, 2013

মাচো মুভি অথবা মস্তানা মুভি! Yo!!!

সিনেমার সমালোচনা লেখা খুবই বীরত্বের কাজ। এই কাজ যাঁরা করে থাকেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা আমার বেড়ে গেছে এবং তাঁদের শ্রীচরণে আমার শত-সহস্র প্রণাম!
ভাবছেন যে, এতদিন পরে কেন এটা খেয়াল হল! আসলে গতকাল ইউটিউবে একটা সিনেমা দেখলাম। প্রথম ১৫ মিনিট দেখেই মনে হল যে, এই অসাধারণ সিনেমা নিয়ে ব্লগে পোস্ট না করলে পুরো জীবনটাই বৃথা। সুতরাং বসে পুরো ২ ঘন্টা ১১ মিনিটের সিনেমাটি দেখতে হয়েছে এবং তার পরেই আমার এই চরম উপলব্ধি!

সিনেমাটির নাম মাচো মস্তানা’, নায়ক হিরণ, নায়িকা পুজা। না না নাম শুনেই ঘাবড়াবেন না! মানে, ঘাবড়াতে পারেন তবে শেষ অবধি পৌঁছতে হলে আপাতত সামলে-সুমলে থাকুন।

সিনেমাটিতে হিরণ খুবই মাচো, সিক্স-প্যাক ছাড়িয়ে এইট-প্যাক বানিয়ে বসে আছে! সেই এইট-প্যাক আবার দাদা মানে সৌরভ গাঙ্গুলীর নিজস্ব জিমে গিয়ে বানানোমস্তানিও সে করেই থাকে, তবে সে যে মস্তানি করছে এটা যদি দর্শকরা বুঝতে না পারেন সেই ভয় পরিচালিকা (হুঁ হুঁ বাওয়া!!) মাঝে মধ্যেই ব্যাকগ্রাউন্ডে মাস্তানা... মাস্তানা...শব্দ ভেসে আসার ব্যবস্থা করেন। হিরণ হি-ম্যানের মত যখন-তখন যাকে তাকে ক্যালায়! শুধু ক্যালায় না ক্যালাবার মাঝখানে আবার নিজের বিদেশী বাইকের গুপ্ত তাক থেকে ফার্স্ট-এড বক্স বের করে গুণ্ডাদের শুশ্রূষা করে আবার ক্যালায়! গোটা সিনেমায় হিরণ কতজন কে কেলিয়েছে তার হিসেব নেই তবে তাঁর মধ্যে ল্যাকপ্যাকে আলুভাতে খাওয়া চেহারার বাঙ্গালী গুণ্ডা থেকে শুরু করে ড্যানি ট্রেহোর ম্যাসাটের জমজ ভাই গুণ্ডা কেউ বাদ যায় না! নিচের ছবিতে দেখে নিনঃ

মস্তানা মারে ম্যাসাটেকে!!
এছাড়া হিরণ বাড়িতে দাদা দেবদূত এবং দাদু বিভুবাবুর আদর খায়! সঙ্গে আছেন এক প্রচন্ড ভার্সেটাইল বৌদি যিনি কোন দৃশ্যে আদর্শ গৃহকর্মে নিপুণা ঘরোয়া সন্তানসম্ভবা লাজুক বউ-র ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেন আবার একই সঙ্গে একটি দৃশ্যে দেওরের প্রেমের কথা শুনেই লাফিয়ে উঠে সিটি মারেন (এত কষ্ট করে ভার্সেটাইল কি আর শুধু শুধু লিখেছি!)। ছোট বোন, যে নিজে বেশ ছোট এবং তার পোষাকগুলোও বেশ ছোট!
আর আছেন হিরণের বাবা! রজতবাবু প্রথমে কিছুক্ষণ হিরণের দায়িত্ববান বাবা হিসেবে গম্ভীর থাকেন এবং বাকি সময়টা গুন্ডাদের হাতে মার খেয়ে অথর্ব হয়ে থাকার অভিনয় করে যান!

হিরণ আরও যেটা করে সেটা হল পুলিশের হাতে মার খায়, অত্যাচারিত হয় আর পাগলের অভিনয় করে। সে খুবই জটিল ব্যাপার-সাপার! পুলিশ তাকে ঠিক কি করে ধরল সেটা বুঝিনি তারপর চিরকালীন সিনেমার মত তাকে জলে ভিজিয়ে মারধোর করা হয়। এই সিনেমায় আবার হিরণকে নগ্ন করেও রাখা হয় দীর্ঘ সময় (পরিচালিকাকে ধন্যবাদ পুরকিখেয়ে হিরণের ফ্রন্টাল বা ব্যাক ন্যুডিটি দেখানোর চেষ্টা করেননি!) আর তার পরেই সেই অসাধারণ দৃশ্য, ব্যাপারটা ভাবুন কেমন, পুলিশ হিরণকে নগ্ন করে রেখে অত্যাচার করছে। হিরণের বাবা আর বৌদি (মানে ততক্ষণে বাকিরা পটল তুলেছে কিনা!) এসেছে দেখা করতে। তারপরেই সেই মনে রাখার মত সংলাপ, “বাবার সামনে তাও ঠিক আছে, কিন্তু বৌদির সামনে তো তুই এই অবস্থায় দাঁড়াতে পারবি না! এই একে কিছু পড়ানোর ব্যবস্থা কর!!
কিন্তু এতেই কি মাচোর অপমানের শেষ! না!! পুলিশ একটা বস্তা জাতীয় কিছু দিল হিরণকে পড়বার জন্য আর তার আগে তার মধ্যে ছেড়ে দিল কিছু ডেঁয়ো পিঁপড়ে!! পরের দৃশ্য, হিরণের ক্রন্দনরতা বৌদি, হুইলচেয়ারে অথর্ব বাবা আর তাঁদের সামনে বস্তা সজ্জিত হিরণের ‘Ants in pants’ অভিব্যক্তি! উফ্‌... বলুন এর পরেও চোখের জল ধরে রাখতে পারে এমন পাষন্ড কেউ আছে দুনিয়ায়??

আরো অনেক কিছুই আছে এই সিনেমায়। অরুণ ব্যানার্জী, যিনি সমাজসেবীর মুখোসের আড়ালে একজন খলনায়ক যার ওপর ওনার নিজের ভাষায়, “আইএসআই থেকে পুরো ইস্টার্ন জোনের দায়িত্ব দেওয়া আছে!শান্তিলাল যিনি একজন উগ্রপন্থী নেতা যিনি সাপের মত জিভ বের করেন, মেদিনীপুর বা বাঁকুড়ার উচ্চারণে বাংলা বলেন, হিরণের বোনকে ধর্ষণ করেন এবং শেষে হিরণের কারসাজীতে ইলেকট্রিক শক খেয়ে মারা যান! দোলন রায়, যিনি হঠাৎ করে থানার মধ্যে ঢুকে পুলিশের ইলেকট্রিক শক্‌ দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে ঘোষণা করেন, “আমি মানবাধিকার কমিশন থেকে এসেছি!

আর একটা ঘটনার কথা না বললে তো চলবেই না। তা হিরণ একটা দুষ্টু লোককে নানাভাবে ক্যাল-ট্যাল দিয়ে অরুণবাবুদের রাখা বোমার কথা জানতে পেরে পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছে। তাই এখন আইএসআই কে খুশী করতে তাঁরা আবার বোমা রেখেছেন এক রক্তদান শিবিরে। সেই বোমার কথা আবার অরুনবাবু এবং পুলিশেরই ডিএসপি রাণা রায় (যার গোঁফটা দেখলে মনে হয় যে পরিচালিকা দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ভদ্রলোককে ঐ গোঁফটি দিয়ে!) একটি আইটেম নাম্বার দেখতে দেখতে খোলা আকাশের নীচে আলোচনা করছিলেন ঠিক সেই সময়ে যখন হিরণ একটি নীল আফগানি স্যুট, নীল পাজামা আর নীল পাগড়ি পরে তাঁদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল, অনেকটা নিচের ভিডিওটির মতঃ




যাই হোক, পরের দিন ঠিক ১২টায় বোমা ফাটবে, প্ল্যান মত ডিএসপি সাড়ে এগারোটার সময় আর একজনও পুলিশ না নিয়ে রক্তদান শিবিরে ঘুরতে গেলেন। সেখানে আবার একটা বেডে শুয়ে ছিল হিরণ (কেন ঠিক জানি না!) এবং তার পর মুহূর্তেই ডিএসপি যখন তাঁর নিজের গাড়িতে ফিরে গেলেন ততক্ষণে তার মধ্যে ঢুকে বসে আছে... কে আবার? হিরণ!
তারপর ডিএসপি কে জানানো যে ঐ বোমা তাঁর নিজের গাড়ির ইঞ্জিনেই লাগানো আছে এবং তারপর তাঁকে গাড়িতেই বন্দী রেখে তাঁকে শুদ্ধু গাড়ি উড়িয়ে দেওয়া যে হিরণের বাঁ হাতের কাজ সেটা তো বুঝতেই পারছেন।

সিনেমায় পূজাও আছেপূজা মানে পূজা বোস, বেশ কিছু হিন্দি সিরিয়াল করার পর এটাই ছিল ওর প্রথম বাংলা সিনেমা, এর পরে পূজা চ্যালেঞ্জ-২ এবং রকির মত কালজয়ী সিনেমাতেও কাজ করেছে।
পূজার প্রথম দৃশ্যে পুজা শার্ট-প্যান্ট-টুপি পরে নকল গোঁফ লাগিয়ে বাড়ি থেকে পালাচ্ছে। তারপরেই হিরণের বিদেশী বাইকের সঙ্গে বিশাল ধাক্কা! যদিও ধাক্কা লাগার পর পূজার নাকের নিচের নকল গোঁফটা একটু আলগা হয়ে যাওয়া আর তার মৃত মায়ের দেওয়া লকেট পরে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই হয় না। আর তারপরেই ঐ লকেট ফেরত দিতে গিয়ে চলন্ত বাস এবং লরিতে হিরণের সামান্য গুন্ডা-ধোলাই এবং তারপর বাস থেকে পরে গিয়ে দুজনে মিলে জঙ্গলে হন্টন এবং রাত কাটানো।
আইআইটিতে পড়ার সময় আমার চেনা একটি ছেলে একবার আমাকে বলেছিল যে, সে দুর্গা পুজোর ছুটিতে বাড়ি থেকে স্নান করে আসে আর তার পরে আবার স্নান করে ডিসেম্বর মাসে বাড়ি গিয়ে! কিন্তু সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের কাছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খুবই জরুরী তাই জঙ্গলে ঘুরতে ঘুরতেও স্নান না করলে তাদের চলে না। সুতরাং সেই চিরকালীন দৃশ্য, হিরণকে চোখ বন্ধ করিয়ে গাছের পেছনে রেখে, সে যেন পূজাকে না দেখে এইসব প্রমিস করিয়ে পূজা একটা সাদা জামা পরে স্নান করে এল। তারপর দেখা গেল পূজা ঐ সাদা জামা এবং জিন্স খুলে একটা কালো স্লিভলেস গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট পরে হিরণের সঙ্গে ঘুরছে। তাই তার স্নান করা দেখলে ঠিক কি মহাভারত অশুদ্ধ হত সেটা এখনো আমার মাথায় ঠিক ঢোকেনি।
এর পরে পূজার বেশি রোল নেই, কয়েকটা গানের সঙ্গে নাচ, মাঝেমধ্যে কান্না এবং শেষ দৃশ্যে পুলিশ নিয়ে এসে নিজের বাবাকে ধরিয়ে দেওয়াতেই পূজার কাজ শেষ!

সবার শেষে বলি সিনেমার গানগুলোর কথা। যা বুঝলাম, সিনেমার পরিচালক এবং সঙ্গীত পরিচালক খুবই খোলা মনের মানুষ! তাই বাংলা সিনেমার গান শুধু বাংলা হতে হবে এতে ওনারা বিশ্বাস করেন না। তাই সিনেমায় হিন্দি-ইংরেজি-বাংলা মেশানো মাচো মস্তানাগানটা ছাড়াও গোটা একটা হিন্দি গান আছে, বাংলা সুফি গান আছে, আর হিন্দি এবং আফ্রিকান র‍্যাপ মিশিয়ে আর একটা গান আছে যেখানে নায়ক-নায়িকা নেচে নেচে গাইছে,
চল না চল না বায়লামো
চল না চল না বায়লামো
চল না চল না বায়লামো
লেটস্‌ রোমান্স!

যাই হোক, সবার শেষে একটা কথাই বলি, এই লেখাটা হালকা চালে মজার জন্য লেখা, ‘মাচো মস্তানাসিনেমার সঙ্গে জড়িত কেউ বা ঐ সিনেমাটির ভক্তদের খারাপ লাগলে আমি আগাম ক্ষমাপ্রার্থী। কাউকে অপমান করার কোন উদ্দেশ্যই আমার নেই।

আর লেখায় একাধিক বার গুণ্ডাশব্দটি ব্যবহারের কারণ আর কিছুই নয়... এই সিনেমার কিছু কিছু জায়গা দেখলে শ্রদ্ধেয় কান্তি শাহ্‌ মহাশয়েও হয়তো সেগুলো তাঁর পরবর্তী সিনেমায় ব্যবহার করতে চাইবেন আর তাই তাঁর অমর সৃষ্টি গুণ্ডার প্রতি ওইটুকুই আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য!


8 comments:

  1. Jaah, tumi golpota puro banale mone hochhe! Ekhono Bangla cinema erokom banay!?! 90s-er make toh puro! Gaan-e oboshyo reetimoto globa(a)lization ghotechhe...ekdikey bhalo theko, anuranan, aosheshe, aami ar amar girlfriends aar onyodikey I love u awara, pagloo, challenge, romeo...eta nischoy-i dwitiyo category-te porbe! Kintu addiney dekhle? :D

    ___________________________________
    Jhinka

    ReplyDelete
  2. Na re Jhhinka! Erokom goppo bananor moto Macho ami noi!! Puro cinema r golpoi bollam... 90s theke khub beshi egoeni!! Ar ei cinema dekhar jonyo sahos sonchoy korte giyei 1 bochhor kete gelo!!

    ReplyDelete
  3. আমি এটা দেখতে চাই। এটা না দেখলে জীবন বৃথা।

    ReplyDelete
  4. Youtube e achhe... tomar dekha uchit!!

    ReplyDelete
  5. Phatiye diyechhish.

    Ami Hironer bosta pora, pniprer kamor khawar jaygata porte giye apisher modhyei jorey jorey heshechhi. :D

    ReplyDelete
  6. Lojja kore na!!! tor chokhe jol asa uchit chhilo!! Tui khub i nishthur!! :P

    ReplyDelete
  7. apnar blog e natun.......aaj i prothom.......darun laglo ei lekha ta pore baki gulo o porbo.......mvi ta ami o dekhechhi.......onyo sab kichhu bad dileo majhe majhe 'mastana mastana' background sound ta just neoa jai na.......

    ReplyDelete
  8. Dhonyobaad Sombabu (naam ta thik jani na)... blog e suswagatam... anyo lekhao porun, motamot din... bhalo lagbe!!

    ReplyDelete

"It’s always very easy to give up. All you have to say is ‘I quit’ and that’s all there is to it. The hard part is to carry on”