Sunday, July 13, 2014

খেলার গল্প কিম্বা জীবনের...

ফুটবলের বাজারে সত্যি কথাটা প্রথমেই স্বীকার করে নি। এখনও ফুটবলের চেয়ে ক্রিকেটটাই আমি বেশী পছন্দ করি। তা, ক্রিকেটে যে দেশটাকে আমি সমর্থন করি সেটা খুব মজার দল। হ্যাঁ যদিও পৃথিবীর সবচেয়ে মজার দল এটা নয়। সেই জায়গাটা আমাদের প্রতিবেশী দেশটি নিয়ে বসে আছে। বছরে দুবার করে অধিনায়ক পরিবর্তন, খেলোয়াড়দের মধ্যে মারপিট, ফিক্সিং নিয়ে দোষারোপ কোন কিছুই সেখানে বাদ যায় না। আজকাল বাংলাদেশও মাঝে মধ্যেই বেশ ভালো খোরাক যোগায়। গত সপ্তাহের শাকিবের সাস্পেন্সানটা যেমন একটা।
কিন্তু তাই বলে ভারতকে গত ২৫ বছর ধরে সমর্থন করা মোটেই সহজ কাজ ছিল না। আমার জেতা ম্যাচ হেরেছি, কত ম্যাচে যে আমাদের বোলাররা প্রথমে দারুণ বল করেও শেষ দুটো বা তিনটে উইকেট ফেলতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে তার লেখাজোখা নেই। কালকেই তো চূড়ান্ত অসম্মানটা হয়েছে যখন জো রুট আর জিমি অ্যান্ডারসন মিলে টেস্ট ক্রিকেটের ১৩৭ বছরের ইতিহাসে দশম উইকেটের সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপের রেকর্ড বানিয়েছে ভারতের বিরুদ্ধে।
আমাকে ২৮ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে, দেখতে হয়েছে পাঁচ-পাঁচটা বিশ্বকাপ যেখানে ওই ১০-১৫ দলের মধ্যেও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হতে ব্যর্থ হয়েছে আমার দল। কিন্তু যখন শেষ অবধি জয় এসেছে ২০১১র বিশ্বকাপের সেই স্মরণীয় এপ্রিল রাত্তিরে নিজেকে মনে হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে খুশী মানুষ।
(সুত্রঃ ইন্টারনেট)
ভারত ১২০ রান তাড়া করতে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট ম্যাচ, অলআউট হয়েছে ৬৬ রানে, সাউথ আফ্রিকার বাউন্সি পিচে ধরাশয়ী হয়েছে বার বার।
কিন্তু যখন সৌরভের ভারত সিরিজ জিতেছে পাকিস্তানের মাটিতে বা সেই অ্যাডিলেডের টেস্ট জয়, ইংল্যান্ডের সিরিজ জয়, টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে হারানো, প্রত্যেকটা দিন গেঁথে গেছে আমার মনে। সৌরভ, রাহুল, অনিল, শচীন, লক্ষণকে মনে হয়েছে নিজের ঘরের লোক। ওদের একটা অসামান্য ক্যাচ বা উইকেটকে মনে হয়ে নিজের কৃতিত্ব।
দল হেরে গেলে ঝগড়া করেছি অন্যদের সঙ্গে, রাগ করে খাইনি রাতে, স্বপ্ন দেখেছি ভারত জিতে গেছে, ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসেছি। আবার জিতলে মিষ্টি খাইয়েছি অন্যদের, ধন্যবাদ জানিয়েছি আমার ইষ্টদেবতাকে। আর এই ভাবেই সাফল্য, ব্যর্থতা, উচ্ছাস, ক্রোধ এই সব মিলিয়েই সমর্থন করে চলেছি আমার টিম ইন্ডিয়াকে। ব্যস্ত হয়ে পড়েছি, সব খেলা দেখার সুযোগও পাইনা আজকাল, তাও এই দলটা আজও আমার বড় প্রিয়, আমার বড় কাছের।

(সুত্রঃ ইন্টারনেট)
আমার দেশের যে ফুটবল ক্লাবকে আমি সমর্থন করি তার এ বছর বয়স হবে ১২৫ বছর। এতো দিন ধরে থাকলে যা হয়, মোহনবাগান ক্লাবও অনেক ওঠানামার মধ্যে দিয়ে গেছে। ১৯১১ সালের সেই ইস্ট ইয়র্কশায়ারের বিরুদ্ধে আইএফে শিল্ড জয়ের গল্প ছড়িয়ে গেছে বাঙ্গালীর ঘরে ঘরে। তার পরে এসেছে আরো সাফল্য, ৩টে জাতীয় লিগ, ১৩টা ফেডারেশন কাপ, ২৯টা কলকাতা লিগ সঙ্গে আরো অসংখ্য শিল্ড, ট্রফি। কিন্তু এই দলটা গত চার বছর কোন ট্রফি জেতেনি। জেতা তো দূরের কথা, ট্রফি জেতার ধারেকাছেও আসেনি। সঙ্গে কর্মকর্তাদের নোংরামি, লোভ, খেলোয়াড়দের দিয়ে দলাদলি, কোন কিছুই বাদ যায়নি।
তাও আমি, শুধু আমি কেন লাখ লাখ মোহনবাগান সমর্থক দলটাকে মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি। প্রত্যেক বছর ফুটবল মরসুম শুরু হলেই স্বপ্ন দেখি এ বছর ট্রফি আসবে বাগানে। অফিস বা পাড়ার আড্ডায় মুখের মত জবাব দিতে পারব ইস্ট বেঙ্গলের সাপোর্টারদের।

ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় টিম তার নিজের দেশের সবচেয়ে সফল ক্লাব। তাদের ১৯ নম্বর লিগ খেতাব ভেঙ্গে দিয়েছিল লিভারপুলের ১৮টা লিগ জেতার রেকর্ড। ২০১২-১৩ মরশুমে তার জিতেছিল তাদের ২০ নম্বর লিগ। আর তার পরের বছরেই স্যার অ্যালেক্সের অবসরের পর ডেভিড মোয়েসের ভুল স্ট্র্যাটেজি, খেলোয়াড়দের ব্যর্থতা আর চোট-আঘাতের দৌলতে ১৩-১৪ মরসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড লিগ শেষ করেছে সপ্তম স্থানে। প্রায় ২৫ বছর পর চ্যাম্পিয়ান্স লিগ তো দুরের কথা ইউরোপা কাপেও খেলবে না তারা।
(সুত্রঃ ইন্টারনেট)
আমি গত দশ বছরে ইউনাইটেডকে ৫ বার লিগ জিততে দেখেছি। দেখেছি কিভাবে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন একদল সাধারণ খেলোয়াড়দের নিয়ে একটা অসাধারণ দল গড়ে তুলেছিলেন। কিভাবে বেকহ্যাম বা রোনাল্ডোর মত দলের সুপারস্টাররা চলে যাওয়ার কোন প্রভাব ফেলতে দেননি দলের খেলায়। কিভাবে ইউনাইটেড বার বার শেষ মুহূর্তে গোল করে হারা ম্যাচ জিতে ফিরেছে। সাত তো দূরের কথা, ‘টপ থ্রি’-র বাইরে শেষ করতেই দেখিনি কোনদিন। তাই গত বছরের ওই অভিশপ্ত মরসুম আমার কাছে দুঃস্বপ্নের মত। কিন্তু তাও সব ভুলে আবার অপেক্ষা করছি এই মরসুমের জন্য। স্বপ্ন দেখছি ডাচ কোচ লুই ভ্যান গালের হাত ধরে ইউনাইটেড আবার ফিরবে স্বমহিমায়।

ইপিএল থেকে এবার আসি আইপিএলের কথায়। যদিও আইপিএলকে আমি খুব একটা সিরিয়াসলি নিইনা, তবু এখানেও আমার একটা প্রিয় দল আছে। আর এই দলের গল্পটাই বোধ হয়ে সবচেয়ে মজার। কেকেআর মানে কলকাতা নাইট রাইডার আইপিলের সবচেয়ে চর্চিত দল। প্রথম তিন বছর কেকেআর যা খেলেছিল তাতে দলের নাম কেকেআর নয় কেকেহার মনে হচ্ছিল। ব্র্যান্ডন ম্যাকুলামের বিস্ফোরক ১৫৮ দিয়ে শুরু করলেও সাফল্য খুব তাড়াতাড়ি চলে গেছিল কেকেআরের ঘর থেকে। প্রথম বছর আট দলের মধ্যে ষষ্ঠ, তৃতীয় বছরও তাই। আর দ্বিতীয় বছরের কথা না বলাই ভালো। কেকেআর আইপিএল শেষ করেছিল টুর্নামেন্টের শেষ দল হিসেবে, সঙ্গে সৌরভের সঙ্গে কোচ বুকানানের সমস্যা, ফেক আইপিএল প্লেয়ার নামক ব্লগ লেখক নিয়ে বিতর্ক... এক এক সময়ে মনে হয়েছিল কলকাতার নাম নিয়ে এই ধাষ্টামোর চেয়ে টিমটা উঠে যাওয়াই হয়তো ভাল।
(সুত্রঃ ইন্টারনেট)
আর তারপর... খেলোয়াড় নিলামের জন্য সুনির্দিষ্ট প্ল্যান, সঠিক খেলোয়াড় চয়ন আর প্লেয়ারদের দায়বদ্ধতা। প্রথম তিন বছরের বাকিদের হাসির খোরাক কেকেআর শেষ তিনটে আইপিএলের দুটোতে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। এ বছরের ফাইনালের জয় জায়গা পেয়েছে রেকর্ডবইয়ের পাতায়। আজ নাইট রাইডার চেন্নাই সুপার কিংসদের সঙ্গে সঙ্গে আইপিএলের সবচেয়ে সফল দল। আর যতই মুখে বলি যে, আইপিএল সিরিয়াসলি নিইনা কিন্তু কলকাতার দল জিতলে ভালো তো লাগেই।

এতগুলো কথা কেন লিখলাম? কারণ আমি মনে করি যে জীবনের মত খেলাতেও উত্থান-পতন আছে। জীবনের মত খেলাও অনেক সময় অন্যায্য। জীবনের মত খেলাও সব সময় বলিউডের সিনেমার ছক মেনে চলে না। খেলাধুলোয় তাই ‘হ্যাপি এন্ডিং’-র সঙ্গে সঙ্গে ‘হার্টব্রেক’-এরও জায়গা আছে। এই ধরুন ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট খেলার কথা। আমার তো সব সময় নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। আমি ১৯৯০ থেকে ক্রিকেট দেখছি। আমার সময়ে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের রেজাল্টে ভারতই হয়তো সামান্য এগিয়ে আছে। কিন্তু আমি যদি আমার চেয়ে বছর দশেক বড় ভারতীয়দের কথা ভাবি। তাদের দেখতে হয়েছে শারজায় মিয়াঁদাদের ম্যাচ জেতানো শেষ বলে মারা ছয়। শুধু ওই একটা ম্যাচ তো নয়, ওই সময়ে একের একের পর এক ম্যাচ হেরেছে লড়াই না করে, নিজেদের মনোবলকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে হেরে গেছে ভারত। আজ যখন বিরাট কোহলিরা হাসতে হাসতে হারিয়ে দেন তখন কি তাদের সেই পুরনো দিনগুলো মনে পড়ে। আবার আমি এটাও জানি হয়তো আজ নয়, কিন্তু পাঁচ-দশ বছর পরে আবার পাকিস্তানের সুদিন আসতেই পারে। তখন হয়তো আবার একের পর এক ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হারবে ভারত। ভারতের ফ্যান হিসেবে ভেতরে ভেতরে ক্ষত-বিক্ষত হব আমরা।

আর সেই জন্যেই ব্রাজিলের শেষ দুটো হার নিয়েও বেশী ভাবছি না আমি। হ্যাঁ, এই লেখাটা লেখার প্রধান কারণ হয়তো ব্রাজিলের গত সপ্তাহের ১-৭ হার কিন্তু আমিও জানি এটা ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের শেষ নয়। আমার নিজের দেখা প্রথম তিনটে বিশ্বকাপের ফাইনালের একটা দল ছিল ব্রাজিল। তার মধ্যে ব্রাজিল কাপ জিতেছিল দু বার। রোনাল্ডো, রিভাল্ডো, রবার্টো কার্লোস, কাফু, রোনাল্ডিনহোর সেই ব্রাজিল ম্যাজিক দেখাতে পারতো। হয়তো সেই ম্যাজিক ৭০-৮০ দশকের ব্রাজিল দলগুলোর কাছে কিছুই নয়। কিন্তু তখনো বাকি দলগুলো ব্রাজিলকে ভয় পেত। তারা জানতো একজন রোনাল্ডো বা একজন রোনাল্ডিনহো হাসতে হাসতে তাদের দলের কাঁপন ধরিয়ে গোল করে দিয়ে চলে যাবে।
(সুত্রঃ ইন্টারনেট)
আজ ব্রাজিল হয়তো একটা মধ্যবিত্ত ফুটবল দল। আগের মত আজ আর ব্রাজিল যেকোন টুর্নামেন্ট ফেভারিট হিসেবে শুরু করে না। আজ ব্রাজিলের মাঝ মাঠে দৃষ্টিনন্দন ফুটবলের চেয়ে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলার লোক অনেক বেশী। কিন্তু আজও ব্রাজিলের একটা নেয়েমার আছে, যার চোট সেমিফাইনালে দলের মনোবলকে শেষ করে দিয়েছিল, বিক্ষিপ্ত করে দিয়েছিল। যে নেয়েমার চোট সারিয়ে ফিরে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হওয়ার সম্ভবনা রাখে। আছে অস্কার, লুকাস মউরার বা কৌটিনহোর মত তরুণ খেলোয়াড় যাদের পেছনে ইউরোপের ক্লাবগুলো যেকোন মুহূর্তে কোটি কোটি টাকা ঢালতে প্রস্তুত থাকে। আর তাই জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলতে পারি ব্রাজিলিয় দল আবার সাফল্য পাবে, আর এখানে সাফল্য মানে প্রদর্শনী ম্যাচ বা কোপা জেতা নয়, আমি বলছি বিশ্বকাপ জেতার কথা। হয়তো চার বছর পরেই বা হয়তো আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু বছর।



কিন্তু ওই যে বললাম, আমি ২৮ বছর অপেক্ষা করেছি ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য, মোহনবাগানের ট্রফির জন্য অপেক্ষা করছি গত চার বছর। ব্রাজিলের প্রত্যাবর্তনের জন্য কয়েকটা বছর অপেক্ষা করা আর এমনকি। আর যখন তারা ফিরবে... সেটার কথা ভেবে বাকিরা হয়তো এখন থেকেই ভয় পেতে শুরু করেছেন।

2 comments:

  1. আসবে, ব্রাজিল আবার ফিরে আসবে। সপ্তকোটি বঙ্গসন্তানের প্রার্থনা বৃথা যাবেনা। তবে কয়েক বছর টাইম লাগবে, এটা ঠিক।

    ReplyDelete
  2. আশা করি নেইমার, অস্কার, কুটিনহোদের হাত ধরে ব্রাজিল খুব তাড়াতাড়িই ফিরবে।

    ReplyDelete

"It’s always very easy to give up. All you have to say is ‘I quit’ and that’s all there is to it. The hard part is to carry on”