প্রত্যেকবারই
জন্মদিনের দিন ব্লগে নতুন
কিছু পোস্ট করতে ইচ্ছে করে,
তা সে রবীন্দ্র জাদেজার
জন্মদিন নিয়েই হোক না কেন! তবে এবারের
জন্মদিন সত্যিই
স্পেশাল! ছুটির
দিন, সঙ্গে
শুদ্ধ এবং বিম্ববতীর বিয়ে-রিসেপশান, পিউয়ের
দেওয়া জন্মদিনের উপহার 'The
Class of '92' স্পেশাল
কালেকশন ডিভিডি! ফাটাফাটি লং উইকএন্ড।
আর এসবের মধ্যে সবচেয়ে বড় উপহার এল পাঁচ তারিখ। জন্মদিনের আগের দিন!
জীবনে কবে থেকে আনন্দমেলা পড়ছি মনে নেই। বোধ হয় সেই চার-পাঁচ বছর বয়স থেকেই, মানে পড়তে শিখেছি যেদিন সেদিন থেকে। একটা সময়ে তো প্রত্যেকটা সংখ্যা নিয়ম করে পড়তাম। যদিও খুব যত্ন করে আর তাড়াতাড়ি। ব্যাপার আর কিছুই নয়। আমার বাবা যে ভদ্রলোক কাগজ দিতেন তার সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন যে প্রত্যেক পনের দিন অন্তর আনন্দমেলা বেরোলে আমি সেটা দুদিনের মধ্যে পড়ে নিয়ে ফেরত দিয়ে দিতে হবে। সেটা তখন চলে যাবে অন্য কারোর বাড়িতে। এর সুবিধা ছিল এই যে বইগুলো পড়াও হয়ে যেত কিন্তু পয়সা লাগত না। কার লেখা না পড়েছি আনন্দমেলায়... সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, বিমল কর, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, মতি নন্দী, সমরেশ মজুমদার তো বটেই পুরনো আনন্দমেলা জমানোর অভ্যেস ছিল যেহেতু তাই সত্যজিৎ রায়, প্রেমেন্দ মিত্র, সমরেশ বসু, জরাসন্ধ এমনকি আমার প্রিয় এবং অসম্ভব গর্বের জায়গায় আছেন যিনি সেই শরদিন্দু বন্দোপাধায়ের লেখাও পড়েছি। আমার ছোটবেলা মানেই তাই আনন্দমেলা! আর তাই এই ব্লগের লোগোতেও আমার প্রিয় লেখক, চরিত্র, অভিনেতা, খেলোয়াড়দের সঙ্গে আনন্দমেলার উপস্থিতি।
আর এই অসাধারণ সব লেখকদের লেখা পড়তে পড়তেই আস্তে আস্তে নিজের ইচ্ছে হয়েছে কলম ধরার। কিছু লেখার, নিজের কথা, নিজের গল্প। ছোটবেলায় লেখালেখি করেছি, বন্ধুদের পড়িয়েছি সেইসব নিছক ছেলেমানুষির কাঁচা হাতের লেখা ফেলুদার গল্প বা ভূতের গল্প। একটা সময়ে নানা কারণে লেখালেখি বন্ধ ছিল। তারপর আবার মনের জানালা খুলে বসেছিলাম সেই ২০০৮ থেকে। শুরু করেছিলাম এই ব্লগ। তারপর কখনো 'কথা তো বলার জন্যেই' আবার কখনো cricketworld.com সাইটে লেখা বেরিয়েছে। সযত্নে সেই ওয়েবপেজগুলোকে জমিয়ে রেখেছি আমার ল্যাপটপে।
সাহস করে লেখা পাঠিয়েছিলাম আনন্দমেলায়। সেটা সেই ২০১৩-র মাঝামাঝির কথা। একটা আইডিয়াকে সাজিয়ে গুছিয়ে পিউ, কণাদ আর অভিষেকদাকে পড়িয়ে ওদের মতামত নিয়ে ঝাড়ামোছা করে পাঠানো একটা গল্প। তারপর প্রতীক্ষা। শুনেছিলাম তিন মাসের মধ্যে ওনারা জানিয়ে দেন লেখা পছন্দ হলে। তিন মাস কেটে গেল, তারপর ছ মাস... কোন ফোন-চিঠি পেলাম না... ভেবে নিলাম এ লেখা আর বেরোবে না। তারপর তো ভুলেই গেছিলাম যে আনন্দমেলায় পাঠিয়েছি লেখা। গত সপ্তাহের পুরোটাই ছিল ফিল হিউজময়, তার অকালমৃত্যু আমায় দুঃখ দিয়েছে খুব। ভালো লাগছিল না কিছুই। হঠাৎ তিন তারিখ অফিস যাওয়ার সময় একটা ফোন। আনন্দমেলা থেকে। লক্ষ্মীমন্ত, আমার লেখা গল্প বেরোচ্ছে এই সংখ্যায়।
প্রথমে কিছুটা সময় কেমন ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলাম। বুঝলামই না কী হচ্ছে! তারপর আস্তে আস্তে উপলব্ধি করলাম এর মানে কী। আসল লোকেদের জানানো হল কিন্তু তাও সন্দেহ ছিল। না আঁচালে বিশ্বাস নেই। শেষ পর্যন্ত গতকাল রাতে anandamela.in সাইটে নিজের নাম দেখে চক্ষুকর্নের বিবাদ ভঞ্জন হল। সকালে বইটাও পেলাম। আমার নাম ছাপার অক্ষরে, প্রথমবার, আনন্দমেলাতে। আমার আনন্দমেলা! সেই আনন্দমেলা, আমার ছোটবেলার সবচেয়ে ভালো বন্ধু, যে আনন্দমেলার পুরনো যেকোন সংখ্যা খুলে আজও পড়তে বসে যেতে পারি আমি।
জানি এ লেখার কোন মাথামুন্ডু নেই। হয়তো অর্থহীন নিজস্তুতির মত শোনাচ্ছে এটা। তবু এটা লিখতে চাই। ভবিষ্যতে এই লেখা দেখলেই যে মনে পড়ে যাবে, কোন স্বপ্ন খুব মন দিয়ে দেখলে সেটা কোন একদিন সত্যিও হয়ে যায়।