প্লেনযাত্রা
ঘটনাবিহীন ছিল। নতুন দেশ ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়ার সময় রাত সাড়ে দশটায় নেমে দেখা হল
আমাদের ড্রাইভার এবং গাইড ফরজির সঙ্গে!

পরিকল্পনা মত
মোটামুটি ঠিকঠাক একটা খাবার জায়গায় নিয়ে যেতে বলে আমরা রওনা দিলাম। রাতে ভালোই
ডিনার হল। নাসি গোরেং, ওখানকার স্থানীয় বিফ কারি এবং ভাত ইত্যাদি। এখানে একটা মজার
অভিজ্ঞতা হল। লম্বা যাত্রার আগে আমরা সকলেই একবার বাথরুমটা ঘুরে যাবো ভাবছিলাম।
ওখানকার বাথরুমটা ছিল পেয়িং টয়লেট। তা সেখানে ঘুরে আসার দক্ষিণা ২০০০ রুপিয়া!
ব্যাপারটা কিছুই নয়, বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার রুপিয়ার ক্রয়মূল্য খুবই কম। ভারতীয় এক
টাকা ওখানকার ২০০ টাকা। দেশের সবচেয়ে ছোট নোট ১০০০ রুপিয়ার, সেখান থেকে ১ লাখ
রুপিয়া অবধি আছে। সঙ্গে ৫০০ আর ১০০০ রুপিয়ার কয়েন!
অতঃপর রাতের
অন্ধকারে গাড়ীর ফ্রি ওয়াইফাইতে গান চালিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম ব্রোমো পাহাড়ের
উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শহরের রাস্তা ছেড়ে গাড়ী ফাঁকা রাস্তা ধরল। দুদিকে
গাছপালা, ছোট ছোট বাড়ীঘর। কথামত তিনটে নাগাদ ভিড়ে-ভিড়াক্কার একটা জায়গায় পৌঁছলাম।
জানা গেল, এখান থেকেই জিপ নিতে হবে। গাড়ী থেকে বেরিয়ে বুঝলাম ঠাণ্ডা ভালোই। সেটা
মাথায় রেখে গরম কাপড় যথেষ্ট আনা হয়েছিল। সেগুলো ভালো করে চড়িয়ে আমরা উঠে বসলাম
আমাদের লাল রঙের জীপে।
![]() |
দেবাদ্রির ক্যামেরা থেকে |
ঘুটঘুটে অন্ধকারে
হালকা কুয়াশার মধ্যে দিয়ে গাড়ী চলল। আমি তখন প্রায় ঘুমন্ত। ওই জিপেই চট করে একটা
পাওয়ার ন্যাপ মেরে নিলাম। জিপ এসে থামল এক
পাহাড়ের নিচে। ঐ রাত তিনটেও সেখানে কী ব্যস্ততা! একের পর এক জীপ থেকে আমাদের মত
অন্য দলবল এসে নামছিল। সঙ্গে টর্চ হাতে গাইডের দল, চা-কফি-সিগারেট বিক্রেতার দল।
সেরকম এক গাইড ঠিক করে মিনিট পাঁচসাত অন্ধকারের মধ্যে পেনানজাকান পাহাড়ে উঠে একটা
সুবিধামত জায়গায় ঘাসের ওপর মাদুর পেতে বসিয়ে দিয়ে গাইড বাবাজি কেটে পড়ল। যাওয়ার
আগে চা-কফিওয়ালা ডেকে আনবে বলেছিল, কিন্তু সেটা শেষ অবধি আসেনি।
চারদিক তখনও
অন্ধকার, সামনে পাহাড়ের ঢাল নেমে গেছে। তার সামনে অনেকটা ধোঁয়া ধোঁয়া জায়গা আর আরো
সামনে জমাট অন্ধকার। বুঝলাম ঐ ধোঁয়াগুলো কুয়াশা আর জমাট অন্ধকারগুলো পাহাড়। কোনটা
ব্রোমো সেটাও দেখিয়ে দিয়ে গেল আমাদের গাইড।
তারপর বসেই আছি।
আশেপাশে বিভিন্ন দেশের আরো মানুষ আসছেন। কেউ আমাদের পাশেই বসছেন। কেউ আরো এগিয়ে
যাচ্ছেন। দেবা আর ড্যুডও ঘুরে দেখে এল সামনে বেটার ভিউপয়েন্ট আছে কিনা। বসে ঠাণ্ডায়
কাঁপতে কাঁপতে গুলতানি চলছে। আস্তে আস্তে অন্ধকার হালকা হচ্ছিল। দূরে ব্রোমো পাহাড়
আর তার ওপরে একটা মেঘের স্তর মনে হচ্ছিল। তারপর আস্তে আস্তে বুঝলাম ঐ মেঘ/ধোঁয়ার
গঠনটা খুব ধীরে ধীরে চেঞ্জ হচ্ছে। যাইহোক আস্তে আস্তে ভোরের আলো ফুটলেও কুয়াশার
জন্য সূর্যের দেখা পাওয়া গেল না। কুয়াশার মধ্যে ব্রোমো পাহাড়ের ধোঁয়া দারুণ লাগছিল
কিন্তু সূর্যোদয় দেখার মজাটা পাওয়া গেল না। যাই হোক শ খানেক ছবি এবং দুশ-আড়াইশো
সেলফি তোলার পর পাহাড় থেকে নামা হল।
![]() |
দেবাদ্রির ক্যামেরা থেকে |
পরবর্তী গন্তব্য
কোথায় জানতাম না। একটু পরে দেখি একটা বিশাল বড় মাঠের ধারে গাড়ী এসে নামিয়ে দিয়েছে।
গাড়ী থেকে নেমে দেখি পুরো মাঠটার রঙ কালো এবং সেটা গিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার পর
থেকে ব্রোমো পাহাড় উঠে গেছে যার মাথা থেকে একটানা ধোঁয়া বেরিয়ে চলেছে এবং সেটা সেখান থেকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। বুঝলাম ঐ আগ্নেয়গিরির লাভা আর ছাইয়ের কারণেই
মাঠটা পুরো কালো। নেমে, মেয়ের দল টুক করে ফ্রেশ হয়ে এলো। আমরা এলোমেলো ঘুরছিলাম
তারপর বুঝলাম ঐ মাঠের মধ্যে দিয়ে হেঁটে গিয়ে পাহাড়ের গায়ে বানানো সিঁড়ি দিয়ে উঠলে
একবারে আগ্নেয়গিরির মুখ অবধি পৌঁছনো যাবে। কিন্তু সেই পাহাড়ের সিঁড়ি অবধি হেঁটেও
যাওয়া যায় বা ঘোড়ায় করে যাওয়া যায়। সবাই মিলে শেষ অবধি ঘোড়াই নেওয়া হল। ছটি ঘোড়া
এবং ঘোড়ার মালিকদের সঙ্গে আমরা চললাম ঘোড়ায় চলে।

![]() |
দস্যু সর্দারনী |
একে একে বাকিরাও
এল, শ্রেয়সীর কাছ থেকে জানা গেল যে, শ্রেয়সীর ঘোড়া খুবই দুষ্টু এবং মাঝে মাঝেই
নাকি বেগরবাঁই করেছে তবে সেটা আরোহীর সঙ্গদোষে কিনা জানা গেল না!

![]() |
দেবাদ্রির ক্যামেরা থেকে। অগ্নুৎপাতের ফলে তৈরি খাঁজ! |