ফরজি ততক্ষণে
একটা ঘুম-টুম দিয়ে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। আমাদের নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ঝটপট। বলে দিলাম যে,
খিদে পেয়েছে। ব্রেকফাস্ট করা দরকার। পাহাড়ী রাস্তা দিয়ে গাড়ী নিচে নামল। তারপর
সমতলে আরো কিছুটা এগিয়ে একটা স্থানীয় ছোট খাওয়ার জায়গায় গিয়ে আমরা থামলাম। সকলেই
তখন বেশ ক্লান্ত, বিশেষ করে সারা রাত জেগে থাকার ক্লান্তিটা চোখে মুখে ধরা পড়ছিল।
গিয়ে চাউমিন, অমলেট ইত্যাদি অর্ডার করে আমরা বাইরে এসে বসলাম। আরো একটি কাপলও ছিল।
তারাও তাদের খাবার অর্ডার দিয়ে আমাদের মতই বাইরে বসল। শ্রেয়সী ততক্ষণে খিদের
জ্বালায় অস্থির।
মিনিট পাঁচেক পর
ভেতর থেকে একটি মেয়ে দু প্লেট নুডলস্ সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে এল। স্থানীয় খাবার, তার
নাম নিয়ে সকলেই কনফিউজড। নাম শুনে ওই কাপলের মেয়েটি একটি প্লেট নিল। অন্য প্লেটটা
শ্রেয়সী নিয়ে খাওয়া শুরু করল। দু চামচ খাওয়ার পর বোঝা গেল, ওটাও ঐ অন্য গ্রুপটার
জন্যই ছিল। শ্রেয়সী তারপরেও ওটা অফার করেছিল কিন্তু রেস্তোরার লোকজন আরো এক প্লেট
বানিয়ে নিয়ে এল চটপট!
পরে দেবাদ্রি
ওদের সঙ্গে কোথায় কোথায় ঘুরেছে সেই নিয়ে দিব্যি গল্প জুড়েছিল। খেয়েদেয়ে আমরা আবার
যাত্রা শুরু করলাম, এবার গন্তব্য জঙ্গলের মধ্যে মাদেকারিপুরা জলপ্রপাত।
ফরজি প্রায় ঘন্টা
খানেক পর আমাদের নিয়ে এসে নামালো জঙ্গলের ঠিক বাইরের পার্কিং লটে। এরপর বোঝা গেল
যে, বাকি রাস্তা আর গাড়ী যায় না। তার বদলে স্থানীয় ছেলেরা বাইক নিয়ে ঘুরছে, সেই
বাইক ভাড়া করে জঙ্গলের মধ্যে আর দুই কিলোমিটার যেতে হয় আর তারপর বাকিটা হেঁটে। আরো
জানা গেল যে, জলপ্রপাতটা বেশ বড় এবং সেখানে গেলে জামা-কাপড় ভেজার সম্ভাবনা আছে।
সেসব শুনে এবং যেহেতু চেঞ্জ করার জায়গা ছিল আমরা ঝটপট জলে নামার মত পোশাকে রেডি
হয়ে গেলাম। সময়ের ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হচ্ছিল। তখন প্রায় বারোটা বাজে। জলপ্রপাত
দেখে মোটামুটি দুটো-আড়াইটের মধ্যে বেরোতেই হবে কারণ ফরজির মতে ওখান থেকে এয়ারপোর্ট
যেতে তিন-সাড়ে তিন ঘন্টা লাগবে। এছাড়া খাওয়ার জন্যেও থামতে হতে পারে। এদিকে আমাদের
ফ্লাইট সাতটায়।
যাই হোক, তখনকার
মত ছটা বাইক ঠিক করে ছয় মূর্তিমান যাত্রা শুরু করলাম। আমাদের চালক যারা তার সব
অল্পবয়স্ক ছেলেপুলে কিন্তু পাকা হাত, ওই জঙ্গলের মধ্যেও চমৎকার চালিয়ে এবং ভাঙা
ভাঙা ইংরেজিতে গল্প করতে করতে আমাদের পৌঁছে দিল টিকিট কাউন্টারের সামনে। আমার
বাইকটা সবচেয়ে পেছনে ছিল। নেমেছি সবে, হঠাৎ দেখি শ্রেয়সীর বাইকটা ঘিরে বেশ হইচই
হচ্ছে। গিয়ে দেখি, ভদ্রমহিলা বাইক থেকে নামার সময় কোন অজ্ঞাত (!) কারণে উল্টোদিক
দিয়ে নামতে গেছেন এবং বাইকের সাইলেন্সারে লেগে ডান পায়ের গোছের কাছে প্রায়
দুই-আড়াই ইঞ্চি মত জায়গা পুড়িয়ে ফেলেছেন!
ব্যাপারটা নিয়ে
বেশ সাড়া পড়ে গেল। আমাদের বাইকের ছেলেগুলোই নানাভাবে পিউয়ের যত্ন নিতে লাগল। জলের
বদলে একরকম তেল এনে ওর পায়ে দিতে লাগল। আমদের কয়েক জন, যেমন ঈশিতা উত্তেজিত হলেও
বাকিরা বিশেষ করে শ্রেয়সী তেমন পাত্তা দেয়নি। সে এরকম কান্ড করেই থাকে! এইসব
তালেগোলে আবিষ্কার হল যে, আমরা নাচতে নাচতে এসে গেছি বটে, কিন্তু জলপ্রপাতের কাছে
যেতে যে টিকিট লাগে সেই টিকিটের ২১,০০০ করে এক লাখ ছাব্বিশ হাজার রুপিয়া আনা হয়নি।
দেবা আবার গেল বাইকে করে টাকা আনতে। আমরা ওখানেই বসলাম। শ্রেয়সী পায়ের পরিচর্যার
নামে কঙ্কনার সঙ্গে 'পা পোড়া সেলফি' তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল!
ইন্দোনেশিয়ার
লোকজন বেশ ফ্রেন্ডলি, ওখানেও একটা ছেলে এসে আমাদের সঙ্গে গল্প করতে শুরু করল। এই
প্রসঙ্গে একজন গ্লোবাল ইন্ডিয়ান সুপারস্টারের কথা লিখে ফেলি। এই ইন্দোনেশিয়া ট্রিপ
না করলে কোনদিন জানতে পারতাম না শাহরুখ খান আমাদের দেশের বাইরে কতটা জনপ্রিয়।
গাড়ীর চালক, দোকানদার বা রেস্টুরেন্টের রাঁধুনি, যেই হোক ভারতীয় শুনলেই তাঁদের
একটাই পয়েন্ট অফ রেফারেন্স, 'শারুক খান'... এমনকি দোকানদাররা রীতিমত 'কুছ কুছ হোতা
হ্যায়'' আর 'দিল তো পাগল হ্যায়'র গান গেয়ে শুনিয়েছে। এছাড়া দেবার গানের গল্পেও পরে
আসব। যাই হোক সেই ছেলেটির সঙ্গে শাহরুখকে নিয়ে আড্ডা মারতে মারতে দেবা টাকা নিয়ে
এসে হাজির হল এবং আমরা এগিয়ে পড়লাম মাদেকারিপুরা জলপ্রপাতের উদ্দেশ্যে।
জঙ্গলের মধ্যে
হলেও কংক্রিটের বাঁধানো রাস্তা, যদিও কিছুটা এগোনোর পর লোহার ব্রিজ এমনকি বাঁশের
ছোট ব্রিজের ওপর দিয়েও যেতে হয়েছে। তবে সে অনেকটা ভেতরে। পা চালিয়ে আমি আর ড্যুড
সামনে যাচ্ছিলাম, বাকিরা পেছনে। মাঝে সকালের সেই ভদ্রমহিলা, শ্রেয়সী যাঁদের খাবার
খেয়ে নিয়েছিল তাঁদের সঙ্গে দেখা হল। তাঁরাও বললেন যে জলপ্রপাত এখনো ভেতরে কিন্তু
দৃশ্য নাকি দুর্দান্ত! সেই শুনে আরো কিছুটা পা চালিয়ে শেষ অবধি পৌঁছলাম।
জলপ্রপাতের সামনে গিয়ে বুঝলাম কেন এটা এত বিখ্যাত। কারণ জলপ্রপাত একটা নয়। উঁচু
পাহাড় একটা লম্বা দেওয়ালের মত বানিয়েছে আর সেই দেওয়াল থেকে পাঁচ-ছটা ধারায় জল ঠিক
আমাদের সামনে নেমে আসছে বিভিন্ন গতিবেগে। সেটা একটা দেখা মত জিনিস!শুধু তাই নয়,
জলটা যেখানে এসে পড়ছে পাথর-টাথর টপকে সেখানে যাওয়া যায়। অতঃপর সবাই মিলে নানাভাবে
ভিজে মাদেকারিপুরা জলপ্রপাত এনজয় করা হল। ওই জলের মধ্যেও প্রচুর ছবি তুলে ভিজে
জবজবে হয়ে আবার আধ ঘন্টা পর রওয়ানা দিলাম ফেরার পথে।
তারপর আবার সেই
বাইকে করে গেটে। সেখানে ভিজে জামা-কাপড় চেঞ্জ করে চললাম এয়ারপোর্টের পথে। খুব একটা
দেরি হয়নি, সঙ্গে স্ন্যাক্স ছিল, তাই খাওয়াটাও কাটিয়ে দিয়ে চললাম এয়ারপোর্টের
উদ্দেশ্যে। খাওয়া-দাওয়া হল এয়ারপোর্টে। পরের গন্তব্য বালি!
Cholbe guru. Darun hochche. Abar phire jachchi seikhane!
ReplyDeleteVery attention-grabbing diary. lots of blogs I see recently do not extremely give something that attract others, however i am most positively fascinated by this one. simply thought that i'd post and allow you to apprehend.
ReplyDeleteI am extraordinarily affected beside your writing talents, Thanks for this nice share.
ReplyDelete