বঙ্গ জীবনের অঙ্গ শুধু
বোরলিনই নয় আনন্দবাজার পত্রিকাও। গত ৯০ বছর ধরে যে দৈনন্দিন পত্রিকা বাঙ্গালীকে
এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, এই লেখায় তারই সামান্য গুণ-কীর্তন।
১
প্রতিবেশীর ছেলে বিল্টু
ইস্কুলের পরীক্ষায় GK- তে আপনার খোকনকে
টপকে যাচ্ছে।
পাড়ার হকারকে বলে রোজ বিল্টুদের
বাড়িতে আনন্দবাজার ফেলবার ব্যবস্থা করলেন।
পরের পরীক্ষায় বিল্টু ‘নীল
তিমির ডিম ফুটে বাচ্চা হয়’ নিয়ে লিখে GK- তে ১০০-র মধ্যে
সাড়ে তিন পেল।
২
পাড়ার ক্লাবের ছেলেগুলো
সবসময় ইউরোপিয়ান ফুটবল নিয়ে আলোচনা করে আর আপনার ফুটবলের ফান্ডা নিয়ে হ্যাটা দেয়।
পাড়ার ফুটবল ক্যুইজ জেতা নিয়েও ওদের হেভি ঘ্যাম।
পাড়ার ক্লাবে রোজ শুধু
আনন্দবাজার রাখার ব্যবস্থা করলেন।
পরের মাসে পাশের পাড়ার
ক্যুইজ থেকে ছেলেগুলো মুখ চুন করে ফিরে এল। জানা গেল, মেসী চেলসির গোলকিপার আর
অ্যালেক্স ফার্গুসন ইতালির দল ডর্তমুন্ডের কোচ বলায় প্রথম রাউন্ডেই নাম কাটা গেছে।
৩
অফিসে লোকজন ক্রিকেট আর
আইপিএল নিয়ে কথা বলে বলে আপনার মাথা ধরিয়ে দিচ্ছে।
হঠাৎ আনন্দবাজার খুলে
ম্যাচ-রিপোর্ট জোরে জোরে পড়তে লাগলেন।
কয়েক মিনিটের মধ্যে ঐ
ম্যাচ-রিপোর্ট থেকে আলোচনা ভীমনাগের সন্দেশ, ক্যাটরিনা কাইফ আর রাহুল গান্ধীতে
পৌঁছে গেল।।
৪
আপনি আইপিএল টিমের
ক্যাপ্টেন। টিম ধ্যারাচ্ছে, ম্যাচের শেষে নিজের কলামে ম্যাচ নিয়ে লিখতে সাহস
পাচ্ছেন না, কিন্তু কলাম না লিখলে প্রেস্টিজ থাকে না।
আনন্দবাজারের সঙ্গে
যোগাযোগ করলেন।
আনন্দবাজারের কলামে
ম্যাচের বদলে নিজের প্রিয় হিন্দি সিনেমা, বউ-এর প্রিয় ক্রিকেটার আর পুনে এয়ারপোর্টের
টয়লেট নিয়ে লিখলেন। শেষে আগের ম্যাচ, পরের ম্যাচ নিয়ে এক লাইন লিখলেন, ‘শেষ ম্যাচ
হারার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী, তবে আমরা গতবারের চ্যাম্পিয়ন, এখনো আমাদের আশা আছে!’
৫
আপনি প্রাক্তন সিনেমা পরিচালক।
আজকাল তেমন কাজ নেই বলে bore হচ্ছেন।
আনন্দবাজারে খবর দিলেন।
আনন্দবাজার পরপর দু
সপ্তাহ আপনাকে নিয়ে খবর করল। প্রথম সংখ্যায় আপনি প্রচুর মৃত অভিনেতা, পরিচালকদের
নিন্দে করলেন। পরের সংখ্যায় তাঁদের ছেলেপুলে, আত্মীয়-স্বজন, ভক্তরা আপনাকে ‘বুড়ো
ভাম’ বলে গাল পাড়ল। আপনার চমৎকার সময় কেটে গেল।
৬
আপনি একজন বর্তমান সিনেমা
পরিচালক। কিন্তু সিনেমা আর তেমন চলে না।
আনন্দবাজারে ফোন করে চলচিত্র
সমালোচনা লিখতে আগ্রহ দেখালেন।
কদিন পরে জনপ্রিয় হিন্দি
সিনেমার সমালোচনা লিখতে গিয়ে ৭০% লেখায় নিজের আগামী সিনেমার বিজ্ঞাপন করলেন। শেষে
লিখলেন, “এই সিনেমার মত সিনেমা বানানো সম্ভব নয়, তবু আমার সিনেমা রিলিজ হলে এই
সিনেমার কতটা কাছাকাছি বানাতে পেরেছি দয়া করে দেখতে আসবেন।”
৭
আপনি একজন প্রাক্তন
ফুটবলার। মাঝে কিছুদিন কোচিং করিয়েছিলেন, কিন্তু গ্যালারির ইঁট আর সমর্থকদের থুতুর
ভয় কাটিয়ে দিয়েছেন।
আনন্দবাজারকে ধরে উয়েফা
কাপ বা ইপিএল নিয়ে বিশেষজ্ঞের কলাম লেখার সুযোগ পেলেন।
এখন নিয়মিত ব্রাজিল,
জার্মানী, বার্সেলোনা বা ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের খেলার খুঁত ধরে সময় কাটান। মাঝে
মধ্যেই লেখেন, “আজকের দিনে খেললে আমি রোনাল্ডো বা বেকহ্যামের চেয়েও বেশি জনপ্রিয়
হতাম!”
৮
বাড়িতে ৩ দিনের জন্য বড়
মেসো এসেছেন। আপনাকে দেখলেই ধরে চাকরির বাজার কত খারাপ সেই নিয়ে জ্ঞান দেবেন।
নিজের ঘরে ঢুকে আনন্দ
প্লাস বা পত্রিকা খুলে পড়ার ভান করে বসে রইলেন।
মেসো আর ঘরে ঢোকার সাহস
পেলেন না। আপনার হাতের কাগজে সানি লিওনি, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া আর স্বাস্তিকা
মুখার্জীর অন্তর্বাস পরা ছবি, সঙ্গে হেডলাইন, “চোলি কে পিছে ক্যা হ্যায়?”
এটা কি হল? তোমার বাংলা লেখায় না আমাদের চিরকালীন বরাত দেওয়া আছে? এক্ষুনি লেখাটা পাঠিয়ে প্রায়শ্চিত্ত কর বলছি!
ReplyDeleteএটা অসাধারণ হয়েছে। শেয়র করছি।
ReplyDeleteতবে, আনন্দবাজারের মুন্ডপাত করলেই চলবে শুধু? কত কাজে লাগে তো দেখাই যাচ্ছে।
ReplyDeleteআমার ইনবক্সে প্রতিদিন আনন্দবাজার আসে। কেন আসে, কে জানে। ওই ছোটবেলার জিয়া নস্ট্যাল টাইপের ব্যাপার আর কি। কিন্তু সেটা মাঝে মাঝে খুলে থাকি বলেই এই লেখাটা যে কতটা স্পট অন, সেটা নিমেষেই বোঝা গেল। সাধ্য, সাধু।
ReplyDeleteতবে তপোব্রত বোধহয় একটা ছোট্ট ভুল লিখেছেন। আনন্দবাজারের আলোচনা রাহুল গান্ধীতে পৌঁছয়না, যায় "গাঁধী" তে!!
Anandabazar-er moto hasi-r kagoj khub kom-i achhe!!
ReplyDelete@ SUIRAUQA.
ReplyDeleteগাঁধী তো লেখে আনন্দবাজার, সাধারণ লোকে আড্ডায় গান্ধীই বলে থাকে!
tapa! too good!! eta ami sharadin ghure phire aaro ko bar porbo ebong lokjon ke porabo! :D
ReplyDeleteThank You! Thank You!! Jotobar ichche poro ar jake paro dhore dhore porao!! :D :P
ReplyDeleteআনন্দবাজার কে feedback এ আপনার লেখা গুলি পাথিয়ে দিয়েছি। তার বদলে তারা একটি ম্যাসেজ দিয়েছে।
ReplyDeleteThank you!
Your feedback will help us to improve this site.
We will get back to you.
তাই তাড়া সত্বর আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
Vivekবাবু, শুধু এই লেখা দিয়ে কি আর আনন্দবাজারকে বদলানো যাবে! মনে হয় না! তবে এটাও ঠিক, আনন্দবাজার বদলে গেলে রোজ সকালে আমাদের মনোরঞ্জন করবে কে?!
ReplyDeleteDarun lekha... jomechhilo, ar ektu likhle parten...
ReplyDeleteDhonyobaad Amitabhababu... ei kotai besh jompes mone holo!! :-)
ReplyDeleteSabaash!! :-D
ReplyDeleteBoss ki likhechile :D kintu sokale Ei lekhagulo ekhon boddo miss kori
ReplyDeleteKeno? ABP theke Khobor 365 din e shift kore gechho?
ReplyDeletepuro 'lol' post :P can't stop laughing. Byapok likhecho :D
ReplyDeleteDhonyobaad!! Dhonyobaad!! :D
ReplyDelete