Saturday, June 22, 2013

মৃত্যু

মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান...

শুধু ওপরের ঐ লাইনটাই নয়, রবীন্দ্রনাথ মৃত্যু নিয়ে বহু লেখা লিখে গেছেন
আচ্ছা, আপনারাও কি আমার মত মাঝেমধ্যে মৃত্যু নিয়ে ভাবেন? আমার যেমন সেই ছোটবেলা থেকেই অনেক সময় মনে হত! খুব অদ্ভুত না? যেন একদিন ঘুমোতে গেলাম, তারপর আর ঘুম ভাঙল না। সেই যাকে বলে চিরনিদ্রা। ওদিকে অ্যাকসিডেন্ট হলে আবার অন্য রকম গল্প। নিজে যেহেতু একবার গাড়ির গুঁতো খেয়েছি তাই জানি, বেশ একটা জলজ্যান্ত লোক কীভাবে হঠাৎ তার সমস্ত চেতনা হারিয়ে ফেলতে পারে। আবার ধরুন সেইসব প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যেখানে হঠাৎ করে কয়েক হাজার লোক কয়েক মুহূর্তে শেষ হয়ে যেতে পারে।
গত কয়েক বছরে পর পর এত জন বিখ্যাত, বিখ্যাত বললে কম বলা হবে, এতজন কিংবদন্তী মারা গেছেন যে আমি অনেক সময়ে ভেবে অবাক হয় যাই। শুধু গত বছরেই দেখতে গেলে দারা সিং, রাজেশ খান্না, সুনীল গাঙ্গুলি, রবিশঙ্কর, জসপাল ভাট্টি... আমার পুরো ছোটবেলাটাই যেন হঠাৎ করে অনেকটা শেষ হয়ে গেল এক বছরে। পুজোর নবমীর দিন যখন বাবা ফোন করে সুনীলের মৃত্যুর খবরটা দিয়েছিল তখন কতটা খারাপ লেগেছিল বলে বোঝানো যাবে না। হঠাৎ করে একটা প্রচন্ড মন খারাপ। তার একটু পরে কান্না পেল, হাউ হাউ করে কেঁদেছিলাম, অনেক দিন পর। একের পর এক কাকাবাবুর গল্প, নীল মানুষের গল্প, সেই সময়ের কথা মনে পড়ছিল আর কান্না চেপে রাখতে পারছিলাম না।
এই বছরেও প্রথম ছ মাসের মধ্যে দুটো মৃত্যু দাগ কেটে গেল, ঋতুপর্ণ ঘোষ আর জিয়া খান। তারপর তো জিয়ার মৃত্যু নিয়ে অনেক নাটক ও হয়ে গেল মিডিয়ায়ে।
২০১২-র আর একটা মৃত্যু আমার মনে গভীর দাগ কেটে গেছে। খুব অদ্ভুতভাবে, এনার সঙ্গে আমার দেখা হয়নি কোনদিন। কিন্তু সেটা আমার দুর্ভাগ্য। আমি মনে করি যে তাঁর সঙ্গে আমার দেখা করা উচিত ছিল, প্রয়োজন ছিল।
কিন্তু তাঁকে না দেখা সত্বেও তাঁর কতটা প্রভাব ছিল খুব পরিষ্কার ভাবেই সেটা বুঝতে পারি। বুঝতে পারি কিভাবে একটা মানুষ তাঁর কাজ দিয়ে, ব্যবহার দিয়ে এতগুলো মানুষকে কাছে টেনে শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন। দেখতে পাই, তাঁর মৃত্যুর জন্য কতটা শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তাঁর কাছের মানুষগুলোর দৈনন্দিন জীবনে।
আমি কি মরতে ভয় পাই? পাই। তবে ভয় নয়, সত্যি বলতে মৃত্যুকে অপছন্দ করি আমি। সবাই, সব কিছু থাকবে পৃথিবীতে আর আমি থাকব না এই চিন্তাটাই খুব বিরক্তিকর। তবে যারা মৃত্যুকে ভয় পায়, আমার মনে হয় যে, ভয়টা আসে মৃত্যুর অজানা, অচেনা ব্যাপারটার জন্য। মানুষ চিরকালই অজানা জিনিসকে ভয় পায়। তাই অন্ধকার মানুষের চিরকালের ভয়ের জায়গা। মৃত্যুও আমার মনে হয় তাই। আজকে আমি মরে গেলে ভূত হয়ে থাকব না পুনর্জন্ম নেব নাকি শুধু একটা শবদেহ হয়ে পড়ে থাকব এটা যতদিন না আগে থেকে জানতে পারছি মৃত্যু নিয়ে আমাদের অস্বস্তি থাকবেই। কিন্তু ধরুন, আজ যদি জানতে পারি যে, মৃত্যুর পরের জীবনে ভূত হয়ে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতে পারব, ডন ব্র্যাডমানের ব্যাটিং দেখতে পাব, রবিশঙ্করের বাজনা শুনতে পাব তাঁর সামনে বসে বা পড়তে পারব শরদিন্দুর নতুন ব্যোমকেশের উপন্যাস, তাহলে মনে হয় না এই মৃত্যু ব্যাপারটা সবার কাছে খুব একটা অপছন্দের হবে।
আর সেটা জানতে যতদিন পারব না ততদিন মানুষ তার বুকের ভেতর মৃত্যুভয় নিয়ে ঘুরে বেড়াবে।
সত্যজিৎ রায়ের ‘কম্পু’ গল্পের সুপার-কম্পিউটার ধ্বংস হওয়ার আগে সেই চরম সত্য খুঁজে পেয়েছিল। তাই ধ্বংস হওয়ার চরম মুহূর্তে তার অপার্থিব, ধাতব কন্ঠে বলে উঠেছিল, “মৃত্যুর পরের অবস্থা আমি জানি!”

মানুষ কি কোনদিন সেটা বলতে পারবে?

1 comment:

  1. এইজন্যই আমি জন্মদিনে বিশেষ উত্তেজিত হই না। জন্মদিন মানেই মৃত্যুর দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।

    ReplyDelete

"It’s always very easy to give up. All you have to say is ‘I quit’ and that’s all there is to it. The hard part is to carry on”