ডিসেম্বর মাসটা
সবসময়ই স্পেশাল। স্যার জাদেজার জন্মদিন তো বটেই, মা-র জন্মদিন, আমার নিজের জন্মদিন,
আমার প্রথম চাকরি পাওয়া, শ্রেয়ার সঙ্গে প্রথম দেখা, সব মিলিয়ে ডিসেম্বর মাস মানেই হৃদয়ের
খুব কাছের অনেকগুলো ঘটনা। আর তার সঙ্গেই ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসকে মনে রাখার আরো
একটা কারণ হল ‘কথা তো বলার জন্যেই’ তে প্রকাশিত আমার প্রথম লেখা।
২০১১ সালের ১লা
ডিসেম্বর ‘কথা তো...’ ওয়েব ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় আমার লেখা গল্প ‘সেই লোকটা’।
আমার জীবনের অন্যতম সেরা আর মনে রাখার মত দিন সেটা।
ছোটবেলা থেকে
লিখতে ভালোবাসি। দীর্ঘদিন ধরে স্বপ্ন দেখেছি আমার লেখা ছাপা হচ্ছে শুকতারা,
আনন্দমেলা বা দেশ পত্রিকায়। সেই স্কুলে পড়তেই নিজের অপটু, কাঁচা হাতের লেখা গল্প,
উপন্যাস, কবিতা বন্ধুদের পড়িয়ে তাদের হাসি-ঠাট্টা, পেছনে লাগার পাত্র হয়েছি
অনেকবার। শেষপর্যন্ত নিজে ব্লগ লেখা শুরু করেছি ২০০৮ সালে।
কিন্তু ‘সেই
লোকটা’ আমার প্রথম গল্প যেটা আমার নিজের ব্লগের বাইরের অন্য এক সাইটের মাধ্যমে অন্তর্জালের
এই বিশাল জগতে জায়গা পেয়েছিল। আমার প্রথম লেখা যেটা আমার নিজের বন্ধু-বান্ধবের গণ্ডী
পেরিয়ে পৌঁছে গেছিল আমার অচেনা পাঠকদের কাছে।
এখনও মনে আছে,
প্রথম লেখা পাঠানোর আগে সুনন্দকে আমি চিনতাম না। ফেসবুকে কোন এক বন্ধুর দেওয়ালে
‘কথা তো বলার জন্যেই’-র নানা রকমের লেখা দেখে আমি ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে ‘সেই
লোকটা’ সুনন্দকে মেল করি। সেই সময় আমি বাংলাওয়ার্ড ব্যবহার করে লিখতাম। প্রায় কুড়ি
দিন পর সুনন্দ জানায় যে, গল্পটা তার পছন্দ হলেও অভ্রয়ে লেখা না পাঠালে তা প্রকাশ
করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। সুনন্দর কথা মত গল্পটা আবার অভ্রতে টাইপ করে পাঠাই আমি,
আর তার পরেই প্রকাশিত হয় ‘সেই লোকটা’ ‘কথা তো...’-র সাইটে।
সেই শুরু, তারপর
থেকে সুনন্দ প্রকাশ করেছে আমার অনেকগুলো লেখা। কিছুদিন লেখা না পাঠালেই এসে তাগিদা
দিয়ে গেছে নতুন লেখার জন্য। এমনকি আমার ব্লগের পোস্ট পড়ে সেই লেখা ওকে না দিয়ে
নিজের ব্লগে বের করে দিয়েছি কেন সেই নিয়ে ছদ্ম কলহ করেছে আমার সঙ্গে।
আমি একের পর এক
পাঠিয়ে গেছি ‘মাংস’, ‘বর্ণময় পর্নো’, ‘বৃষ্টিমঙ্গল’ মত নানা ধরণের লেখা। সেগুলো
বেড়িয়েছে ‘কথা তো...’-র সাইটে। অচেনা-অজানা জনগণের সঙ্গে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক
হয়েছে লেখার গুণাগুণ নিয়ে।
সুনন্দ আর সংহিতার
সঙ্গেও কথা হয়েছে লেখা নিয়ে, ওদের মতামত, প্রশ্নোত্তরের মধ্যে দিয়ে লেখার মান
উন্নতি করার চেষ্টা চলেছে, এখনও চলছে।
এই সপ্তাহে ‘কথা
তো বলার জন্যেই’-র সাইটে প্রকাশিত হয়েছে আমার নতুন লেখা ‘প্যাঁচাকাহিনী’। এই
পত্রিকায় প্রকাশিত এটা আমার দশম লেখা!! আমার কাছে এটা একটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার!
যখন প্রথমবার লেখা পাঠিয়েছিলাম তখন দশটা তো দূরের কথা, আমার আর একটা লেখাও আর
কোথাও কোনদিন প্রকাশিত হবে বলে ভাবিনি। কিন্তু পৃথিবীর আরো হাজারটা অত্যাশ্চর্য্য
ঘটনাগুলোর মত এই জিনিসটাও ঘটেছে। আমার ব্লগ ছাড়া আরো একটা ঘর তৈরী হয়েছে আমার
লেখাগুলোর।
আমি এখনও স্বপ্ন
দেখি নানা ধরণের পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে আমার লেখা। হয়তো একদিন বইমেলার আসরে আরো
১০০-২০০ বইয়ের সঙ্গে বেরোচ্ছে আমার লেখা গল্পের বই। জানি না সে স্বপ্ন আদৌ কোনদিন
বাস্তবায়িত হবে কিনা, কিন্তু আমি জানি ‘কথা তো...’ আমার পাশে আছে সব সময়, আমার কোন
রকম দরকারে-অদরকারে ‘কথা তো...’-র পরিবার এগিয়ে আসবে সব সময়, আবার হয়তো ওদের
দরকারের সময় বন্ধুর মত হাত বাড়িয়ে দেব আমি।
তবু একবার, হয়তো
কিছুটা অকারণেই, আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই ‘কথা তো বলার জন্যেই’-কে। ভগবানের কাছে
প্রার্থনা করি আরো বেশি, বেশি পাঠকদের কাছে পৌঁছে যাও তোমরা। অবশ্য তাতে আমার
লাভের ভাগটাও কম নয়, ‘কথা তো...’ নতুন পাঠকরা কি আর আমার দু-একটা লেখায় ক্লিক করে দেখবেন
না!
আর সুনন্দ, নতুন
লেখা মাথায় ঘুরছে, আর কদিনের মধ্যেই হয়তো এগারো নম্বরটাও পেয়ে যাবে।
No comments:
Post a Comment