Wednesday, November 13, 2013

পাঁচ মহারথী

১৪ নভেম্বর তারিখটা ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা যে অনেক দিন মনে রাখবেন সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। সেদিন শচীন তেন্ডুলকার তাঁর ২০০তম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামবেন। এর আগে কেউই ২০০ টেস্টের মাইলস্টোন ছুঁতে পারেননি সুতরাং সেদিক দিয়ে দেখলে এটা একটা বিশাল কৃতিত্ব কিন্তু তার থেকেও বেশী গুরুত্বপূর্ণ হল যে শচীন তাঁর ২৪ বছরেরও বেশী দীর্ঘ ক্রিকেট জীবন শেষ করবেন ঐ ম্যাচটি খেলে।
মিডিয়ার সৌজন্যে এটা আজ সবাই জানে। লাখ লাখ শব্দ এর মধ্যেই খরচ হয়ে গেছে এই ঘটনার পেছনে। শচীন কি ছিলেন, শেষ কদিন তিনি কি করছেন, কি ভাবছেন, তাঁর পরিবারের লোকজন কি করছে, তাঁর বন্ধুরা কি করছে সেটা জানতে আর বাকি নেই কারো। আমি সে সব লিখে পাতা নষ্ট করতে চাই না। তার চেয়ে বরং আমার নিজের ঠিক কি মনে হচ্ছে সেটা লিখি।
শচীন একজন দারুণ খেলোয়াড়, প্রচুর রেকর্ড, অনেক অনেক রান আর উইকেট, বেশ কিছু ম্যাচ জেতানো ইনিংস, সব মিলিয়ে আমার জীবনে শচীনের কম স্মৃতি নেই। ১৯৯১ সাল থেকে খেলা দেখছি আর এতদিন শচীনই ছিল একমাত্র constant factor. কিন্তু তবু আমার কাছে শচীনের এই অবসর আমার কাছে শুধু শচীন নয়, ভারতীয় ক্রিকেটের একটা পুরো যুগের অবসান। সেটার কথাই লিখি।

আজকে মহেন্দ্র সিং ধোনির এই দলটা গত ৪ বছর ধরে প্রচুর সাফল্য পেয়েছে, টেস্ট র‍্যাঙ্কিং-এ ১ নম্বর স্থান, বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, দেশের মাটিতে প্রচুর সাফল্য, বিরাট কোহলি, শিখর ধাওয়ানের মত কিছু অসাধারণ খেলোয়াড়ের প্রচুর ম্যাচ জেতানো ইনিংস, সব মিলিয়ে এই দলটাই ভারতীয় ক্রিকেটের ‘সোনালী প্রজন্ম’। কিন্তু এরাই কি আমাদের, মানে আমার মত যাঁরা গত ২৫ বছর যাবৎ ক্রিকেট দেখছেন তাঁদের প্রিয় দল?
আমার কাছে নয়, হ্যাঁ অস্বীকার করছি না এই দলটাও আমার খুব প্রিয় কিন্ত সবচেয়ে প্রিয় কি? সেই প্রশ্নের উত্তর না। কারণ আমার সবচেয়ে প্রিয় যে দল সেটাকে আমি বলি ভারতীয় ক্রিকেটের ‘রোমান্টিক প্রজন্ম’, হ্যাঁ এই দল হয়তো ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল নয়, অনেক অনেক অসাধারণ, মনে রাখার মত স্মৃতি সত্বেও হয়তো অনেক না পাওয়া আছে এই দলটার কাছ থেকে কিন্তু সাফল্য হয়তো সব সময় শেষ কথা নয়। অনেক অনেক মনকে ছুঁয়ে যাওয়ার মত মুহূর্ত দিয়েছে এই দল। আর শুধু শচীন নয়, আমার কাছে আমার ‘রোমান্টিক প্রজন্মের’ নিউক্লিয়াস পাঁচ জন। অনিল কুম্বলে, শচীন তেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাভিদ এবং ভেঙ্কট সাই লক্ষণ।
এই পাঁচ জনের এক একটা পারফর্মেন্স, রান, সেঞ্চুরি, উইকেট আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। মনে হয়েছে, আরে এটা তো আমার সাফল্য, আমার আনন্দ। লক্ষণের রান আউট কিম্বা কুম্বলের একটা খারাপ স্পেল দেখে যেন দিনটা খারাপ গেছে আমারও। আবার ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে যখন দেখেছি শচীনের কভার ড্রাইভ বা রাহুলের স্কোয়ার কাট মনে হয়েছে দিনটা এত ভালো শুরু হল, খারাপ যাওয়া আর সম্ভব নয়।
আর ওদের নিয়েই এই লেখা, এই পাঁচজনকে নিয়ে আমার সবচেয়ে প্রিয় কিছু স্মৃতি।

আলোকোজ্জ্বল ইডেন গার্ডেন থেকে বলছি...
১৯৯৩ সালে সিএবির ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজন করা হয় হিরো কাপ, ভারত সহ আরো পাঁচটি দেশ নিয়ে। এই প্রথম ইডেন গার্ডেনের ফ্লাড লাইটের মায়াবী আলোয় খেলা হয় সেমি ফাইনাল আর ফাইনাল।
প্রথম সেমিফাইনালে যখন শেষ ওভারে যখন ৬ রান করলেই দক্ষিণ আফ্রিকার জয় নিশ্চিত, কপিল দেব বা জাভাগল শ্রীনাথের বদলে বল করতে এসে মাত্র ৩ রান দিয়ে ভারতকে জয় এনে দেয় শচীন।
ফাইনালে অবশ্য এতটা কষ্ট করতে হয়নি ভারতকে। অনিল কুম্বলের ১২/৬ (একদিনের ক্রিকেটে এখনো ভারতীয়দের মধ্যে সেরা বোলিং হিসেব) এর দৌলতে সহজেই ১০২ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে কাপ যেতে ভারত।

ভারতের নতুন ওপেনার
১৯৯৪ সালের ২৭শে মার্চ তারিখে ভারত আর নিউজিল্যান্ডের অতি সাধারণ একটা ক্রিকেট ম্যাচ আজও স্মরনীয় আছে শচীন তেন্ডুলকারের জন্য। প্রথমবার একদিনের ক্রিকেটে ওপেন করতে নেমে শচীন ৪৯ বলে ১৫টা চার আর ২টো ছয়ের সাহায্যে অবিশ্বাস্য ৮২ রান করে। সেই শুরু, শচীনের মোট ১৮,৪২৬ রানের মধ্যে ১৫,৩১০ রানই করা ওপেন করতে নেমে করা।

লর্ডসের সেই টেস্ট ম্যাচটা...
ভারত বিশ্বকাপ জিতেছিল ১৯৮৩র জুন মাসে। ১৯৯৬ সালের আর এক জুন মাস থেকে বদলে গেল ভারতীয় ক্রিকেটের গতি-প্রকৃতি যখন, আমার মতে ভারতের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান এবং সর্বকালের সেরা অধিনায়ক শুরু করল তাদের টেস্ট যাত্রা। সৌরভ প্রথম টেস্টেই শতরান করলেও রাহুল আটকে যায় ৯০-র ঘরে। তবে এইভাবে দুই বন্ধুর একসঙ্গে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের জাত চেনানো আমার সবচেয়ে প্রিয় দিনগুলোর মধ্যে একটা।


শচীনের গুপ্ত অস্ত্র
আমি যখন খেলা দেখা শুরু করি তখন পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা মানের ভারতের জেতার সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি। ছবিটা আস্তে আস্তে বদলেছে, এখন ভারত-পাকিস্তান খেলা হলে ভারতের দিকেই পাল্লাটা ভারী থাকে। আর পরিবর্তনের প্রথম ধাপ ছিল ১৯৯৭ সালের সাহারা কাপ। টরেন্টোতে হওয়া ৫ ম্যাচের সিরিজে ভারত জেতে ৪-১। টানা ৪টে খেলায় ম্যান-অফ-দ্যা-ম্যাচ হওয়ার রেকর্ড করে সৌরভ। সে রেকর্ড এখনও অক্ষত। গোটা সিরিজে সৌরভ করে ২২২ রান, সঙ্গে ১৫টা উইকেট। শচীন প্রেস কনফারেন্সে বলে, “সৌরভ আমার দলের গুপ্ত অস্ত্র!”

শারজার মরুঝড়
আমার অত্যন্ত প্রিয় দুটো ইনিংস। পর পর দুদিন ধরে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের নিয়ে ছেলে খেলা করে শচীন। শুধু তাই নয়, দুটো ম্যাচেই একা লড়াই করেছিল শচীন। প্রথম দিন না জিতলেও ফাইনালে যাওয়ার রাস্তা খুলে গেছিল রানরেটের ভরসায়। ফাইনালে জয় আর তারপর শচীনের পাওয়া গাড়িতে চড়ে গোটা দলের মাঠ প্রদক্ষিণ এখনো চোখের সামনে ভাসে।

চেন্নাই, ১৯৯৯
পাকিস্তানের কাছে হারলে খারাপ লাগাই স্বাভাবিক, তার ওপর সেটা যদি আবার জেতার মত জায়গা থেকে হঠাৎ করে মাত্র ১২ রানে হার হয়। তার সঙ্গে পিঠে যন্ত্রনা নিয়ে করা শচীনের অসাধারণ ১৩৬ রানের ইনিংস। একটা অদ্ভুত মন খারাপ করা রোমান্টিসিজম আছে এই ম্যাচটার।


দশ উইকেটের ম্যাজিক
ঐ সিরিজেরই দ্বিতীয় টেস্টে ইতিহাস তৈরী করে অনিল কুম্বলে। জিম লেকারের পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে টেস্টে এক ইনিংসে দশ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড তাও আবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ২১ বছর পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ যেতে ভারত। চেন্নাইয়ের হারের পর দারুণ আনন্দ দিয়েছিল এই ম্যাচটা।

সব ম্যাচের সেরা
২০০১ সালের ইডেন টেস্ট ম্যাচটা যে ভারতের ৮ বছরের টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ম্যাচ তা নিয়ে খুব বেশী লোক হয়তো দ্বিমত হবেন না। একটানা ১৬টা টেস্ট জেতা স্টিভ ওয়ার অশ্বমেধের রথকে মাটিতে নামিয়ে দেয় সৌরভের দলের ছেলেরা। তাও আবার ফলো-অন করার পর। হরভজনের হ্যাট্রিক সহ তেরটা উইকেট, ম্যাচের চতুর্থ দিনে সারাদিন লক্ষণ-রাহুলের যুগলবন্দী, শেষদিন টি এর পর শচীনের তিন উইকেট আর দিনের শেষে ভারতের জয়। এই ম্যাচের তুলনা কোথায়! 


ভাঙ্গা চোয়াল তো কি, লড়াই চলবে...
অনিল কুম্বলে ভারতীয় ক্রিকেটের সেরা ম্যাচ উইনার। উপমহাদেশের পিচে পনেরো বছর ধরে  ভারতকে একের পর এক টেস্ট জিতিয়েছে অনিল। কিন্তু ২০০২-র ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে চতুর্থ টেস্টে অ্যান্টিগাতে অনিল সাহসের যে নিদর্শন দেখিয়েছিল তা বিশ্ব ক্রিকেটে বিরল। মারভিন ডিলনের বাউন্সারে চোয়াল ভেঙ্গে যাওয়া অবস্থায় ব্যান্ডেজ বেঁধে মাঠে ফিরে এসে একটানা ১৪ ওভার বল করে ব্রায়ান লারার উইকেট। এর চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে!

যুবশক্তির উত্থান
সৌরভ অধিনায়ক হওয়ার পর থেকেই ভারতীয় দলে অল্প-বয়স্ক খেলোয়াড়দের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ম্যাচ-ফিক্সিং বিতর্ক, খারাপ ফর্ম আর চোট-আঘাতের দৌলতে দলে আসে হরভজন সিং, জাহির খান, বীরেন্দ্র সেহবাগ, যুবরাজ সিং, মহম্মদ কাইফের মত তরুন-তুর্কির দল। তারা আস্তে আস্তে নিজেদের নিয়মিত করে তোলে ভারতীয় দলে।
ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনালে ৩২৫ রান তাড়া করে সৌরভের দ্রুত ৬০ রানের ওপর ভর দিয়ে ভালোই শুরু করে ভারত। কিন্তু নিয়মিত উইকেট পড়তে পড়তে ১৪৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে যখন ভারতের করুণ দশা তখন হাল ধরে কুড়ি বছরের যুবরাজ আর একুশ বছরের কাইফ। অসাধারণ স্ট্রোক-প্লে আর দ্রুত সিঙ্গলসের ওপর ভর দিয়ে ভারতকে নিয়ে যায় জয়ের দোরগোড়ায়। আর শেষ ওভারে জেতার পর উত্তেজনায় লর্ডসের ব্যালকানিতেই সৌরভের নিজের জার্সি খুলে ওড়ানো, সে তো ভারতীয় ক্রিকেটের লোকগাথার অংশ হয়ে গেছে!


তিন মূর্তির শতরান
শচীন, রাহুল এবং সৌরভের মধ্যে যেকোন দুজনের যুগলবন্দীর অভাব নেই। খুঁজলে ওরকম অনেক অনেক ম্যাচই পাওয়া যাবে। কিন্তু ২০০২এর হেডিংলি টেস্টই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একমাত্র উদাহরণ যেখানে ঐ তিন জনেই সেঞ্চুরি করেছিল।
ম্যাচটাও আমার বেশ পছন্দের। নিজেদের শক্তিতে খেলার জন্য ভারত কুম্বলে আর হরভজন দুজনকেই দলে নেয়। সঙ্গে মাত্র দুজন মিডিয়াম পেসার। তাই টসে জিতেও হেডিংলির পেস-বোলিং সহায়ক পিচে ব্যাটিং নিতে বাধ্য হয়ে ভারত। প্রথম দিনে রাহুল আর সঞ্জয় বাঙ্গারের আসাধারণ ব্যাটিং-এর ওপর ভিত্তি করে দ্বিতীয় দিন হাত খোলে শচীন-সৌরভ। ভারতের মোট রান দাঁড়ায় ৬০০ র বেশী। শেষ পর্যন্ত অনিলের ৭ উইকেটের ওপর ভর দিয়ে ইনিংসে ম্যাচ যেতে ভারত। স্পিনাররা নেয় মোট ১১ উইকেট।

বিশ্বকাপ মানেই পাকিস্তান বধ...
২০০৩ এর বিশ্বকাপ অনেক কারণেই স্মরনীয়। খুব সাধারণ শুরু, গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বিশাল হার, খেলোয়াড়দের বাড়িতে ইঁট বর্ষণ, আর তারপরেই চমকপ্রদ ঘুরে দাঁড়ানো। ফাইনাল অবধি টানা ৮ ম্যাচে জয়। সবচেয়ে মনে রাখার মত ম্যাচ ছিল সেঞ্চুরিয়নে পাকিস্তানের সঙ্গে। পাকিস্তানের ২৭৩ রান তাড়া করতে নেমে আক্রমের প্রথম ওভারে ৯ রান করে ভারত। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভার মানে শোয়েবের প্রথম ওভারের শেষ তিন বলে শচীন ৬, ৪, ৪ মেরে ওভারে মোট ১৮ রান করে। শচীন শেষ অবধি ৯৮ রানে আউট হলেও যুবরাজকে সঙ্গে নিয়ে সহজেই রান তাড়া করে ফেলে রাহুল।
শচীনের ঐ ৯৮ একদিনের ক্রিকেটে আমার প্রিয় শচীন ইনিংস!

স্টিভের বিদায়বেলায়...
গত পঁচিশ বছরে আমার সবচেয়ে পছন্দের বিদেশ সফর। ৪ টেস্টের সিরিজে যে কতগুলো মনে রাখার মত মুহূর্ত ছিল গুনে শেষ করা যায় না। তবু বলতে হলে সৌরভের ব্রিসবেনের ১৪৪, অ্যাডিলেডে রাহুলের ডাবল সেঞ্চুরি, লক্ষণের শতরান, তারপর আগারকরের ৬ উইকেটের দৌলতে জেতার সুযোগ, চতুর্থ ইনিংসে রাহুলের অনবদ্য ইনিংস, সিডনি টেস্টে শচীনের অসামান্য ২৪১ আর লক্ষণের ১৭৮ আর বাকিদের সাহায্যে ভারতীয় দলের প্রথমবার টেস্ট ক্রিকেটে ৭০০ র বেশী রানের ইনিংস এগুলো বলতেই হয়। স্টিভের শেষ সিরিজে ১-১ ফলেই খুশী থাকতে হয় তাঁকে। তাঁর চোখের সামনে বর্ডার-গাভাসকার ট্রফি নিজের কাছে রেখে দেয় ভারত অধিনায়ক সৌরভ।

পাকিস্তানে প্রথম জয়
২০০৪ সালের আগে অবধি ভারতীয় ক্রিকেটে একটা অভিশাপ ছিল। কোন ভারতীয় অধিনায়ক পাকিস্তান সফরের পর নিজের অধিনায়কত্ব বাঁচিয়ে রাখতে পারেননি। এমনকি পাকিস্তানের মাটিতে একটাও টেস্ট জয় ছিল না ভারতের। কিন্তু সবই বদলে যায় ভারতের ২০০৪র পাকিস্তান সফরে।

১৪ বছর পর পাকিস্তান যায় ভারতীয় দল, তাদের সঙ্গে বিশেষ ক্রিকেট-ভিসায় পাকিস্তান যায় প্রচুর সংখ্যক ভারতীয় সমর্থক। উৎসাহের কোন কমতি ছিল না এই সিরিজ নিয়ে। এই সিরিজেও অনেক গুলো মনে রাখার মত ম্যাচ ছিল। করাচিতে রাহুলের ৯৯, কাইফের অসাধারণ ক্যাচ, রাওয়ালপিন্ডিতে শচীনের শতরান সত্বেও ভারতের হার, শোয়েবের বলে বালাজীর ছক্কা, শেষ ম্যাচে শচীনের অসাধারণ ক্যাচ! ভারত একদিনের সিরিজ জেতে ৩-২। টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচেই সেহবাগের ৩০৯, সঙ্গে শচীনের ১৯৪। পাকিস্তানে প্রথম টেস্ট জেতে ভারত। আর শেষ টেস্টে আমার রাহুলের ২৭০-এর ওপর ভর দিয়ে ২-১ সিরিজ জেতে ভারত। পাকিস্তানে সেই প্রথম।

মহারাজের রাজধানীতে
১৯৯৩-এর ইডেন গার্ডেন দিয়ে শুরু করেছিলাম, ২০০৭-এর ইডেন গার্ডেন দিয়ে শেষ করি। বিপক্ষ ছিল পাকিস্তান, আর ঘরের মাঠে নিজের একমাত্র টেস্ট শতরান করে সৌরভ। আমি ভাগ্যবান, সেদিনের সত্তর হাজার ইডেনমুখো জনতার মধ্যে আমিও ছিলাম। নিজের চোখে দেখেছিলাম, সৌরভের শতরান আর তার পরের উচ্ছাস! সঙ্গে লক্ষণের কাব্যিক শতরান। সেটা তো একটা বাড়তি পাওনা!

ভারতীয় ক্রিকেটে এই পাঁচ জনের অবদান শুকনো পরিসংখ্যান দিয়ে মাপা যায় না। ভারতীয় ক্রিকেটের বিবর্তণ আর আধুনিকীকরণের প্রধান স্থপতি এই পাঁচ জন। আমি ভাগ্যবান যে আমার ক্রিকেট মুগ্ধতা এসেছে এই পাঁচ মহারথীর হাত ধরে। ধন্যবাদ শচীন, আমার ছোটবেলাকে এত স্মরনীয় করে রাখার জন্য। কিন্তু শুধু শচীন নয়, অনেকটা ধন্যবাদ তোলা থাক অনিল, রাহুল, লক্ষণ আর সৌরভের জন্যেও।

[এই লেখার সমস্ত ছবি Cricinfo ও অন্যান্য ক্রিকেট সংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া।]

9 comments:

  1. nostalgic kore dili. bhalo lagle lekha tay statistics nei....ami bhison bhabe mone kori statistics die cricket analysis kora jayna

    ReplyDelete
  2. ekdom thik bolechis... shudhu mone rakhar moto koyekta ghotona... hoeto morar din porjonto bhulbo na...

    ReplyDelete
  3. bhari bhalo lekha,anekangshei ekmowt bigato dashok er shurutei bharotyo cricket er punorutthan shuru..prakron adhinayok er abodan tate anoswikarjo..e kotha bolchi,dirghodin banglar baire katabar sujoge,kattor theke kattortaro anti ganguly lok keo bolte dekhechi,"he single handedly brought about the change"

    ReplyDelete
  4. ekebare ekmot... ami 2005-2007... Sourav er sobcheye kothin somoye banglar baire thekechhi... kintu Sourav er jonyo abangalider ekta mridu support sob somoyi chhilo... tarpor Greg Sachinke 'Mafia' bolar por seta bohu ongshe briddhi pae!

    ReplyDelete
  5. pancho pandob alada class chilo..still believe,Kohli chara ekhon kar kono wannabe eder samogotryo hote parbe na

    ReplyDelete
  6. আমি বিতর্ক এড়াতে কমেন্ট করিনি। যেহেতু নাম তুই বাছছিস্‌, কাজেই আমার কিছু বলা উচিত নয়।

    লেখাটা সুন্দর হয়েছে খুব।

    ReplyDelete
  7. Abhishekda... Ok... jodio thik bujhlam na! mane tomar 5 jonke equal important lage na... ba serokom memory nei... seta bolchho ki?

    ReplyDelete
  8. না, ঠিক তা নয়। আমার মতে এখানে চার মহারথী আসার কথা, পাঁচ নয়। পঞ্চম যদি কেউ থেকেই থাকে সে সেহওয়াগ।

    কিন্তু আবার, তোর লিস্ট।

    ReplyDelete
  9. Exactly... Sehwag 1ta legend... kintu Indian cricket ba amar smriti te Sourav er jaega or anek opore...

    ReplyDelete

"It’s always very easy to give up. All you have to say is ‘I quit’ and that’s all there is to it. The hard part is to carry on”