এমনিতে দেখতে
গেলে ভিভিএস লক্ষণ আর রবীন্দ্র জাদেজার মধ্যে খুব বেশী মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না।
শুধু খেলার ধরণে নয় মাঠের বাইরেও দুজনের মধ্যে অনেক অমিল। তবে একটা জায়গায় গিয়ে দুজনেই
যেন এক হয়ে গেছেন!
১৯৯৯ এর
পাকিস্তান সিরিজ আর এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়ানশিপের পর লক্ষণকে ভারতীয় দল থেকে
বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। হবে নাই বা কেন! তখনও অব্ধি ১৬টা টেস্টে লক্ষণের মোট রান ৬২৬।
গড় ২৮। সর্বোচ্চ ৯৫।
দল থেকে বাদ পড়ার
পরে লক্ষণ কিন্তু হতাশ হয়ে বসে ছিল না! ১৯৯৯-২০০০ সালের রঞ্জি ট্রফিতে বিপক্ষদের
ওপরে রাগ মিটিয়েছিল (যদিও লক্ষণের রেগে যাওয়াটা খুবই বিরল ঘটনা, প্রজ্ঞান ওঝা
জানে) নটা ম্যাচে আটটা শতরান সহ ১৪১৫ রান করে। এ যেন নির্বাচকদের দরজায় নিজের
অন্তর্ভুক্ততির জন্য ধাক্কা দেওয়ার বদলে দরজাটাই ভেঙ্গে ফেলা।
ফলস্বরুপ আবার
দলে ২০০০ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরে। তৃতীয় টেস্টে সিডনিতে অজিদের ঠেঙ্গিয়ে ১৬৭। আর
তার বছর খানেক পরে অস্ট্রেলিয়ার ফিরতি ভারত সফরে ইডেনে ২৮১। বাকিটা ইতিহাস।
গত বছর জাদেজাকে
দেখে লক্ষণের কথা মনে পড়ছিল। ২০১৫ সালের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া গেলেও কোন টেস্টেই
চান্স পায়নি। বিশ্বকাপের পরে তো বাদই পড়ে গেল। বাংলাদেশ, শ্রীলংকা পর পর দুটো
সিরিজে জায়গা পেল না দলে। অমিত মিশ্র দলে ফিরে এল, কর্ণ শর্মা টেস্ট খেলে ফেলল। জাদেজা তখন
শুধুই আইপিএল স্টার (শ্যেন ওয়ার্নের ভাষায় 'রকস্টার') আর স্যার জাদেজা হিসেবে
সোসাল মিডিয়ায় বিখ্যাত।
সূত্রঃ ইন্টারনেট |
২০১৫-১৬ সালের
রঞ্জিতে জাদেজা ফিরে এল। ফিরে আসার নমুনা হচ্ছে, সৌরাষ্ট্রের প্রথম তিনটে ম্যাচে
৩৭টা উইকেট, ত্রিপুরার বিরুদ্ধে ৯১, ঝাড়খন্ডের বিরুদ্ধে ৫৫। তিনটে ম্যাচেই
সৌরাষ্ট্রকে জিতিয়ে 'প্লেয়ার অফ দ্যা ম্যাচ'। প্রথম চারটে ম্যাচেই জাদেজা ৩৮টা
উইকেট আর ২১৫ রান করে বসে রইল। তখনই মনে হয়েছিল যে, এই ছোকরাও দরজা ভাঙ্গছে।
যথারীতি দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জাদেজাকে দলে ফেরাতে বাধ্য হলেন নির্বাচকেরা।
ফিরে এসে প্রথম
টেস্টেই আট উইকেট যার মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়ে ১০৯ রানে প্রোটিয়াসদের
মুড়িয়ে দেওয়া। ফলস্বরুপ ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ। তারপর সেই ফর্মই চলছে। ২০১৫ সালের
ডিসেম্বরে দলে ফিরে তার পরে ঘরে-বাইরে মিলে ১৩টা টেস্টে ৬৬টা উইকেট নিয়েছে স্যার
জাদেজা, সঙ্গে ৪৮৪ রান। নিজের প্রথম বারোটা টেস্টে জাদেজার ব্যাটিং গড় ছিল ২১.৪১
এবং বোলিং গড় ৩০.৩৭। আর শেষ তেরটা ম্যাচে সংখ্যাগুলো যথাক্রমে ৩২.২৬ আর ১৯.৭৭। এই
ইংল্যান্ড সিরিজেই জাদেজার উইকেটের সংখ্যা ২৬, রান ২২৪। এই সিরিজে আট নম্বরে নেমেও দুবার
পঞ্চাশ করে নিজের ট্রেড মার্ক ব্যাট ঘুরিয়ে দেখিয়েছে সে!
সূত্রঃ ইন্টারনেট |
আর চেন্নাই
টেস্টের কথা তো ছেড়েই দিলাম। জাদেজা প্রথম খেলোয়াড় যে একই টেস্টে একটা পঞ্চাশ, দশ
উইকেট আর চারটে ক্যাচ নিল। শেষ দিনে জাদেজার বোলিং একটা অন্য পর্যায় চলে গেছিল! আর
তাই রবিচন্দ্র আশ্বিন উইকেট না পেলেও গোটা ইংল্যান্ড দলকে দুটো সেশনে উড়িয়ে দিতে
ভারতের অসুবিধা হয়নি।
এই মুহূর্তে
ভারতের হয়ে যারা অন্তত ২০০০ বল করেছেন তাঁদের মধ্যে টেস্টে সর্বকালের সেরা বোলিং
অ্যাভারেজ কিন্তু রবীন্দ্র জাদেজারই। ইকনমি রেটের দিক দিয়েও বেশ ওপর দিকেই আছে সে।
সুতরাং লক্ষণের
মতই স্যার জাদেজাও যে ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য আরো অনেক ইতিহাস রচনা করবে সেই আশা
করাই যায়! কারণ নির্বাচকদের দরজা ভাঙ্গার কাজটা সে করে ফেলেছে!
অনেকদিন পরে পোস্ট দেখে ভালো লাগলো। সত্যিই স্যর জাদেজা রকিং! -সৌগত
ReplyDelete:-)
Deleteক্রিকেট নিয়ে সাহিত্যিক রচনা অনেকটা সোনার পাথরবাটির মতই বিরল!
ReplyDeleteলেখাটা ভাল লাগলো!
তবে স্ট্যাটিস্টিক্যালি একটা দুটো সিরিজের নিরিখে লক্ষনের সঙ্গে জাডেজার তুলনাটা হয়ত একটু...
আপনি থাকছেন স্যার!
ধন্যবাদ! অন্য লেখাগুলো পড়েও জানাবেন কেমন লাগল!
Deleteরবীন্দ্র জাদেজার সাকসেস স্টোরিটার মধ্যে কিন্তু চমক কিছু নেই! ওয়র্কম্যানলাইক ডিসিপ্লিন আছে। বোলিঙটার দিকে ভাল করে তাকালেই দেখা যায় রবি জাদেজা কায়দা করতে যায় না! তার ডিসেপ্টিভ ফ্লাইট নেই, টেরিফিক আর্মার নেই! বিগ টার্ণও নেই। কিন্তু বিষেন বেদীর মতই এক জায়গায় এক নাগাড়ে বল ফেলে যাবার ক্ষমতা আছে! আর আছে পিচ বুঝে বল করার ক্ষমতা! এই কন্ট্রোল আর নিজের মশলা সম্পর্কে সচেতনতাই আজ আইসিসি র্যাঙ্কিং-এ দু নম্বরে তুলে দিয়েছে।
ReplyDeleteএকদম ঠিক বলেছ। যেকোন ফিল্ডেই পরিশ্রমের বিকল্প নেই।
Delete