সপ্তাহখানেক হল
কুয়ালালামপুরে এসে আস্তানা গেড়েছি। অফিসের চক্করেই। আপাতত মাস তিনেক থাকার কথা।
এক-দেড় মাস বাড়তেও পারে। পার্ক রয়্যাল কোম্পানির সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টে একটা
সুইটে বেশ গুছিয়ে বসেছি।
বেশ ভালো জায়গা
এই কেএল। অনেক রকমের মানুষ। আসলে মালয়শিয়া দেশটাই বিভিন্ন জনজাতির সম্বনয়ে তৈরি।
ধরুন তিনটি মানুষের নাম যথাক্রমে চে চুন লিম, মহম্মদ বিন আসলাম, নাগাশেখরন
জালাকাট্টি। এরা তিনজনেই কিন্তু মালয়শিয়ার আদি বাসিন্দা হতে পারেন। এর সঙ্গে
কর্মসূত্রে এবং ভ্রমণের কারণে একপাল ভারতীয়, পাকিস্তানি, বাংলাদেশী, মধ্য এশিয়ার
লোক, আমেরিকান এবং ইউরোপীয়রা এই শহরে ঘুরে বেরাচ্ছেন। একেবারেই কসমোপলিটন এবং সেইজন্যেই রেস্তোরা, কারেন্সি
কনভার্টার আর স্যুভেনির স্টোরের প্রাচুর্য্য।
এশিয়ার অন্যতম
চকচকে শহর হওয়ায় এখানে সময় কাটানোর ব্যবস্থার অভাব নেই। যদিও সকালে কিছু করার সময়
থাকে না। আটটায় ঘর থেকে নেমে ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে যাই। রাজা চুলান স্টেশন থেকে
মনোরেলে করে যাই হাংটুয়া। সেখানে লাইন চেঞ্জ করে কেএলআরে চেপে যাই মসজেদ জামেক।
সেখানে স্টেশন থেকেই বেরিয়েই আমার অফিস। সব মিলিয়ে গোটা পাঁচেক স্টেশন। ঠিকঠাক
ট্রেন পেয়ে গেলে বারো-তের মিনিট লাগে। এখানকার এই মনোরেল এবং এলআরটির কভারেজ
ভালোই। যেকোন জায়গায় যেতে গেলে শুধু বুঝে নিতে হয় যে কোন স্টেশনে গিয়ে লাইন চেঞ্জ
করতে হবে। বাকিটা খুব সহজেই হয় যায়।
সাড়ে আটটা নাগাদ অফিসে ঢুকি। বেরোই সাতটা
নাগাদ। তখন আমার ঘোরার সময়। কখনো হেঁটে ফিরি। আসলে আমার অফিস থেকে পার্ক রয়্যাল
সোজা রাস্তা। মিনিট কুড়ি লাগে হেঁটে। আর ট্রেন লাইনটা ঘুরে যায়।
কিন্তু দিনের
বেলা অত সময় থাকে না হাঁটার। জায়গাটা বেশ গরম, সেটাও একটা কারণ, সকালে না হাঁটার।
যদিও গত সপ্তাহে প্রায় রোজই সন্ধ্যের দিকে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। তবে আমি যেখানে
থাকি তার চারদিকে এত শপিং মল যে বৃষ্টি পড়লেই টুক করে কোথাও একটা ঢুকে পড়া যায়। আর
এখানকার মলগুলো বিশাল জায়গা জুড়ে বানানো তাই কিছুক্ষণ টাইম-পাস হয়েই যায়।
আমি যে রাস্তায়
থাকি তার নাম জালান নাগাসারি। জালান মানে রাস্তা তাই এখানকার ঠিকানায় জালানের
ছড়াছড়ি। আর জালান নাগাসারি থেকে দু মিনিট হাঁটলেই বুকেত বিনতাং। বুকেত বিনতাং হল
পাতি কথায় কুয়ালালামপুরের পার্ক স্ট্রিট যদিও অনেক বেশী ঝাঁ-চকচকে। সেখানে গাদা
খানেক শপিং মল, গুচ্ছ গুচ্ছ খাবার জায়গা, দোকান-পাট, ফুড স্ট্রিট সব আছে! ফুড
স্ট্রিটের নাম হল জালান আলোর। গত শনিবার সন্ধ্যেবেলা গেছিলাম। রাস্তার ওপর সারি
সারি চেয়ার-টেবিল পেতে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। তাতে ভ্যারাইটির অভাব নেই।
খাবারের প্রসঙ্গে
বলে রাখি, আপাতত দোকানে-রেস্টুরেন্টেই খেয়ে বেরাচ্ছি এবং যেটা বুঝেছি যে, এখানকার
ভারতীয় খাওয়ার জায়গার তুলনায় পাকিস্তানি (দেশদ্রোহী বলবেন না প্লিজ) এবং অন্যান্য
মধ্য এশিয়ার (যেমন লেবানিজ, ইরানিয়ান) দোকানগুলোই আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে। কারণ
এখানকার অধিকাংশ ভারতীয় হোটেলই দক্ষিণ ভারতীয় স্টাইলে রান্না করে এবং
কারিপাতাযুক্ত খাবারের প্রতি আমার বিতৃষ্ণার কথা সর্বজনবিদিত। বাংলাদেশী রেস্তোরাই
দেখেছি, যার নাম 'ESO KHAI', এখনও খেতে যাওয়া হয়নি।
গত রবিবার গিয়ে
সামনে থেকে বড়বাড়ি এবং জোড়াবাড়ি (বন্ধু দেবাদ্রির ভাষায়) দেখে এসেছি। এগুলো আর
কিছুই নয়, যথাক্রমে কুয়ালালামপুর টাওয়ার আর পেট্রোনাস টাওয়ার। পেট্রোনাস টাওয়ারের
নীচের সুরিয়া মল এখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত মলগুলোর একটা। গত রবিবার সেখানে ঘুরে
নান্দোজে দিব্যি পর্তুগিজ চিকেন খেয়ে এসেছি!এছাড়া প্রায় ১৩০ বছরের পুরনো সেন্ট্রাল মার্কেটও একটা বেশ দেখার মত জায়গা এবং
সেটা আবার আমার অফিসের ঠিক পেছনেই।
আপাতত এই অবধিই।
আগামী তিনমাসে আরো বেশ কিছু জায়গা ঘোরা হয়ে যাবে আশা করছি। সেগুলোর ছবিও ঠিক সময়
মত ব্লগে চলে আসবে!
Babu-dar nijer kahini theke kora ekmatro chhobi Hit-list er shooting spot na dekhle kintu wishlist puro hobe na ;) :p
ReplyDeleteDibyi lagchhe porte.
ReplyDeletedibbi lekha..besh laglo
ReplyDeleteDhonyobaad! :)
Delete