Sunday, August 26, 2018

লন্ডনে লণ্ডভণ্ড - ১

~~যাত্রা~~

এই ব্লগ পোস্ট শুরু করব আমার পুরনো একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে। মজার ব্যাপার, সেটাও আগস্ট মাসের পোস্ট তবে ২০১৬ সালের। সময়টা ছিল রিও অলিম্পিকের ঠিক পরপরেই। সাক্ষী, দীপা, সিন্ধু নামগুলো তখনো মানুষ ভুলতে শুরু করেনি। আর এই সময়ই একদিন নিচের লেখাটা পোস্ট করেছিলাম,

আমি নিজে বিশেষ কোন খেলা খেলতে পারি না। যদিও ছোটবেলা থেকে অনেক খেলাই খেলেছি। এখনও টুকটাক ফিফা খেলে থাকি, বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারি না। কিন্তু খেলাটাকে ভালোবাসি। এটা নিয়ে আমি যে কোন লোকের সঙ্গে লড়ে যেতে পারি। আর হ্যাঁ, সব খেলাই ভালোবাসি, যদিও ক্রিকেটটা একটু বেশী।আজকাল 'Sporting Event Tourism' বলে যে জিনিসটা আছে সেটা করতে খুব ইচ্ছে করে। শ্রেয়সীর সঙ্গেও প্ল্যান বানাই মাঝেমধ্যে। ইন্ডিয়ার টেস্ট ম্যাচ দেখতে দেখতে মনে হয় নেক্সট ইংল্যান্ড ট্যুরের সময়ে লর্ডস টেস্টটা বা অস্ট্রেলিয়া ্যুরের সময় সিডনি টেস্টটা দেখতে গেলে কেমন হয়, কখনো ভেবে দেখি, ২০১৯ এর ওয়ার্ল্ড কাপে যাওয়া যাবে কিনা, এমনকি ২০১৮ বা ২০২২ এর গুলোতে গেলেও মন্দ হয় না। ওলিম্পিক্স দেখতে দেখতে আবার মনে হচ্ছে ২০২০তে টোকিওটা টার্গেট করা উচিত কিনা। বাড়ির তো কাছেই সুতরাং কদিন গিয়ে দীপা, অতনু, পুসারলা, সাক্ষীদের জন্য গলা ফাটানোই যায়। তারপর কালকে সিজনের ফার্স্ট হোম ম্যাচ দেখে মনে পড়ল 'থিয়েটার অফ ড্রিমসে' তো যেতে হবে। মনে পড়ল, কেন উম্বলডনের সময় যাওয়া যাবে না, কারণ তখন লিগ শুরু হয় না।এত কিছু কবে হবে কে জানে! কিন্তু প্ল্যান বানিয়ে যাই... একদিন না একদিন সেটাকে একজিকিউট করবই। ততদিন মন দিয়ে খেলাগুলো ফলো করি। যতগুলো খেলা সম্ভব। সেগুলোর খবর ফেসবুকে আরো ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। লোকে যাতে অলিম্পিকের সময় ছাড়াও প্রদুনোভা কী সেটা মনে রাখে!"

যেমন লিখেছিলাম, তখন থেকেই মাথার মধ্যে ২০১৮ সালের দুটো ইভেন্ট মাথার মধ্যে ঘুরছিল। রাশিয়ার ফুটবল বিশ্বকাপ আর ভারতীয় ক্রিকেট দলের ইংল্যান্ড সফর। শেষ অবধি অবশ্য দ্বিতীয়টাই জিতল। মস্কোর চেয়ে লন্ডনের চার্মটা অনেক বেশী আর ক্রিকেট বনাম ফুটবলেও পছন্দটা সহজ। যদিও অন্তত একটা ফুটবল বিশ্বকাপে যেতে চাই। সম্ভবত ২০২৬ সালের আমেরিকা-কানাডা-মেক্সিকোরটা। দেখা যাক!
এবার ইংল্যান্ডে খেলা দেখা নিয়েও একটা দোনামোনা ছিল। আঠেরোর টেস্ট সিরিজ না উনিশের বিশ্বকাপ। শেষ অবধি আমার এবং আমার সঙ্গিনীর ভোট আঠেরোতেই পড়ল। বিশ্বকাপের সময় হোটেলের ভাড়া ও অন্যান্য খরচা বাড়ার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া লর্ডস স্টেডিয়াম আর মিউজিয়াম ট্যুর লিস্টে ছিল। সেগুলোও হয়তো বিশ্বকাপের সময় বন্ধ থাকবে। আর ইংল্যান্ডে টেস্ট ম্যাচ দেখতে হলে প্রথম পছন্দ অবশ্যই লর্ডস, ‘হোম অফ ক্রিকেট’! সুতরাং অপেক্ষা ভারতের ইংল্যান্ড সফরের আর টেস্ট ম্যাচগুলোর তারিখ ঘোষণার। এর মধ্যে ২০১৭ সালের গোড়ার দিকে আমি চলে গেলাম কুয়ালালামপুর। সেখানে একদিন ঘুরে এলাম কিনরারা ওভালে। ভিরাটদের ২০০৮ এর বিশ্বকাপ জেতার মাঠ। পরে শ্রেয়সীও গেছিল।
যাই হোক, ওখানে থাকতে থাকতেই সিরিজের দিনক্ষণ  ঘোষণা হল। মোটামুটি সব দিক দিয়ে খরচ হিসেব করে লর্ডস টেস্ট টার্গেট করা হবে ঠিক হল। ৯-১৩ই আগস্ট টেস্ট ম্যাচ, সুতরাং ২-৩ তারিখ যাত্রার দিন ঠিক হল। টেস্ট ম্যাচের দু-একদিন আগেই লর্ডস ট্যুর বন্ধ হয়ে যেতে পারে, তাই দিন হাতে রাখা।
আমি যথারীতি একটা এক্সেল ফাইল খুলে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের লিস্ট করতে শুরু করে দিলাম। সঙ্গে একটা রাফ দিনের হিসেব। এদিক ওদিক থেকে লিংক যোগাড় করা ইত্যাদি। কিন্তু তখনো টিকিট ইত্যাদি অনেক দূরের কথা। এর মধ্যে ফিরে এলাম মালায়শিয়া থেকে। ফিরে অক্টোবারে গেলাম দিল্লী। সেখানে একদিন দেখা হল সত্রাজিৎ আর বিম্ববতীর সঙ্গে। ওরা ২০১৬তেই লন্ডন ঘুরে ফিরেছিল। ওদের কাছ থেকে টিপস নেওয়া হল। বিশেষ করে পাবলাভ হোস্টেলের কথা ওরাই বলেছিল। তাই একটা বড় চকোলেট ওদের পাওনা।
তক্কে তক্কে ছিলাম লর্ডস টেস্টের টিকিটের জন্য। তারপর যা হয়, মাঝখানে কদিন দেখিনি। হঠাৎ দেখি প্রথম তিনদিনের টিকিট ইন্টারনেটে হাওয়া। চতুর্থ দিনের মাত্র কয়েকটা টিকিট পড়ে আছে। সে ঝটপট বন্ধু সর্বজিতকে বলে কেটে ফেলা হল। সর্বজিৎ কিছুদিন লন্ডনে আছে। তাই ওকে দিয়েই টিকিট কাটিয়ে ওর ওখানকার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হল। টিকিট পেলাম মিডিয়া সেন্টারের বাঁদিকের এড্রিচ স্ট্যান্ডে।
এরপর শুরু করলাম একে একে হোস্টেলের খোঁজ এবং বুকিং। তার আগে অবশ্য পুরো ভ্রমণটাই ছকে ফেলেছি। মাঝে কিছু বিতর্ক হয়েছিল স্কটল্যান্ডে না প্যারিস বা ব্রাসেলসে এক দিনের ট্রিপ ইত্যাদি নিয়ে। শেষ অবধি শুধু ইংল্যান্ড আর স্কটল্যান্ডই ঠিক হল। তারপর আমার এবং শ্রেয়সীর রিসার্চের ফলে পুরো ট্যুরটা দাঁড়ালো এরকম,
২-৮-২০১৮ – কলকাতা ত্যাগ
৩-৪ – লন্ডন
৫ – স্টোনহেঞ্জ এবং বাথ
৬ – টনটন
৭ – ম্যাঞ্চেস্টার
৮-৯ – এডিনবার্গ
১০ – ফোর্ট উইলিয়াম
১১-১৪ – লন্ডন
১৫ – লন্ডন ত্যাগ
একে একে বুকিং শুরু হল। অনেকগুলো হোস্টেল এবং হোটেল। সেগুলোর কথায় যথাসময়ে আসা যাবে। তবে সব বুকিংগুলোই হয়েছে বুকিং.কম থেকে। সেই লাঙ্কাওয়ির সময় থেকেই এরা আমার ভরসা। ফ্লাইট বুক হল জেটের। এছাড়া জ্যাকোবাইট ট্রেন, লর্ডস ট্যুর, ওভাল ট্যুর, ম্যাঞ্চেস্টার স্টেডিয়াম ট্যুর, স্টোনহেঞ্জ ট্যুর একে একে সবই হল। এ বছর এপ্রিল-মে মাসের অধিকাংশ শনি-রবি আমার কেটেছে প্ল্যানিং করে। শেষ অবধি সবই হল। মাঝে মনে হয়েছিল সপ্তর্ষি আমাদের সঙ্গী হবে। কিন্তু সে ছোকরা এদিক-ওদিক নানারকম ঘুরে এটা আর ম্যানেজ করে উঠতে পারলো না। সুতরাং শেষ অবধি ১ তারিখ রাত্তিরে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম আমি এবং আমার সঙ্গিনী শ্রীমতি শ্রেয়সী দ্রাভিড। তাঁর বিভিন্ন কীর্তিকলাপের কথা এই লেখায় মাঝে মাঝেই আসবে।
তাহলে আর কী! ঊঠে বসলাম প্লেনে। প্রথম গন্তব্য মুম্বাই!




(চলবে... মানে ইয়ে সেটা না বললেও চলে তবু ছোটবেলায় আনন্দমেলায় এই ব্যাপারটা আর ‘আগে কী ঘটেছে’ বেশ মজার লাগত তাই...)

No comments:

Post a Comment

"It’s always very easy to give up. All you have to say is ‘I quit’ and that’s all there is to it. The hard part is to carry on”