ইন্দোনেশিয়ার ডায়রি - ১ ইন্দোনেশিয়ার ডায়রি - ২ ইন্দোনেশিয়ার ডায়রি - ৩ ইন্দোনেশিয়ার ডায়রি - ৪
কুটার পাব
স্ট্রিট খুবই জমজমাট। যদিও ২০০২ সালে ওই পাব স্ট্রিটেই বোমা বিস্ফোরণে ২০২ জন মারা
গেছিলেন। এখন সেখানে একটা মেমোরিয়াল বানানো আছে। সেটার চারদিকে বিভিন্ন বড় বড়
রেস্টুরেন্ট, পাব এবং একের পর এক রকমারি দোকান। সেগুলোর মধ্যে দিয়ে একটা সরু
রাস্তা বিচের দিকে চলে গেছে। পাব স্ট্রিটের হৈ-হট্টগোলের তুলনায় বিচটা বেশ ফাঁকা।
ভালোই লেগেছিল। তারপর আমরা টুকটাক কিছু খেয়ে নিলাম। পরের দিনের মন্দির ঘোরার জন্য
একটা গাড়ীও ঠিক করে ফেললাম। কথা হল যে, আমাদের ড্রাইভার ইয়োমান পরের দিন নটার সময়
চলে আসবে আমাদের হোটেলে। অতঃপর একটি পাবে প্রবেশ এবং লাইভ গান শুনতে শুনতে নানাবিধ
পানীয়গ্রহণ। যার মধ্যে স্মারনফ্ আইসটি আমার বেশ পছন্দ হয়েছিল। দেশে ফিরে খুঁজতে
হবে।
যখন হোটেলে
ফিরলাম তখন রাত দুটো বেজে গেছে।
পরদিনের গল্প
পুরোই বালির মন্দিরের সৌন্দর্যের কথা। তানহা লট, তামান আয়ুন, গজটেম্পল... কোনটা
বাদ দিয়ে কোনটার কথা বলব! অনন্যসাধারণ কিছু জায়গা। তানহা লট যেমন সুমদ্রের মধ্যে।
হ্যাঁ, ধারে নয় বরং সমুদ্রের মধ্যে প্রায় ১০০ মিটার দূরে এক পাথরের টিলার ওপর
দাঁড়িয়ে আছে তানহা লটের মন্দির। বিকেলবেলা সূর্যাস্তের সময় যখন ভাঁটার জন্য জল
নেমে যায় তখন পায়ে হেঁটেই সেই মন্দিরে যাওয়া যায়। কিন্তু আমরা গেছিলাম সকালবেলা।
সুতরাং তীরে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের উত্তাল জলরাশি আর তানহা লটের ছবি তুলেই আমরা ফিরে
এলাম।
এখানেই দেখলাম,
বেড়াল প্রজাতির প্রাণী লুয়াক যাদের নাম থেকেই এসেছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী এবং সুস্বাদু
(শোনা কথা) লুয়াক কফি। কেন এই নাম? কারণ এই লুয়াক কফি বীজ খেতে ভালোবাসে, তারপর ওই
কফি বীজ তাদের পেটের মধ্যে অর্ধ-পাচ্য হয়ে যখন তাদের বিষ্ঠার সঙ্গে বেরিয়ে আসে তখন
সেই বীজ দিয়েই বানানো হয় এই অসমান্য লুয়াক কফি। যার এক পাউন্ডের দাম হতে পারে
প্রায় ২০০-৩০০ আমেরিকা ডলার!
তামান আয়ুন ছিল বালির
রাজপরিবারের মন্দির। শহরের মধ্যিখানে অসাধারণ স্থাপত্যময় মন্দিরের সারি। শুধু তাই
নয়, ওখানে গিয়ে মনে হয়েছিল যেন, ছোটবেলার ইতিহাস বইয়ে পড়া বালির মন্দিরের ছবিগুলো
জীবন্ত হয়ে উঠেছে চোখের সামনে।
তামান আয়ুনে
কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আমরা গেলাম জঙ্গলের মধ্যে গজমন্দিরে। গুহার মধ্যে এই মন্দির
আর চারদিক জঙ্গলে ঘেরা। যেতে যেতে সন্ধ্যে হয়ে গেছিল বলে বেশীক্ষণ থাকা হয়নি তবে
এই মন্দিরও সুন্দর।
সমুদ্রের ধারের
উলুয়াতু মন্দির রেখে দেওয়া হল পরের দিনের জন্য।
হোটেলে ফিরে
ইয়োমানের কথা মত আমরা গেলাম জিম্বারান বিচে ডিনারের জন্য সেখানে সমুদ্রের ধারে
উন্মুক্ত আকাশের নীচে অ্যাকোরিয়াম থেকে নিজেদের পছন্দ মত বেঁচে নেওয়া মাছ, কাঁকড়া,
চিংড়ি, ঝিনুক এবং বিয়ার সহযোগে রাতের খাওয়াটা ভালোই হল। যদিও বালির সব জিনিসের
সঙ্গে তাল মিলিয়ে পকেট কাটলো ভালোই। ভারতীয় মূদ্রায় প্রায় ১৪,০০০। ভাগ্যিস ক্রেডিট
কার্ড ছিল! এর মধ্যে কিছু স্থানীয় গায়করা এসে আমাদের 'কুছ কুছ হোতা হ্যায়'র গান
শোনালেন। দেবাও গলা মেলালো তাঁদের সঙ্গে!
হোটেলে ফিরে
ঘন্টাখানেকের সাঁতার ক্লাসও হয়েছিল আমার আর ঈশিতার জন্য। শিক্ষক দেবা এবং ড্যুড!
পরের দিন বালির
শেষ দিন। প্ল্যান ছিল, সকালে উঠে ব্রেকফাস্ট করে যাওয়া হবে বিকিকিনিতে। তারপর ফিরে
সব মালপত্র নিয়ে বারোটা নাগাদ ইয়োমেনের গাড়ী করে উলুয়াতু, সেখান থেকে সোজা
এয়ারপোর্ট।
সেইমত দশটা নাগাদ
পাব স্ট্রিটে পৌঁছে প্রথমে টাকা তোলা হল। শুধু কঙ্কনার কার্ডেই টাকা তোলা যাচ্ছিল।
টাকা তুলে সেটাকে মোটামুটি সমানভাবে ভাগ করে দিলাম আমি। তারপর সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে
পড়লাম কেনাকাটার জন্য। কেউ নিজের জন্য কিনছে, কেউ বাড়ির লোকের জন্যে, কেউ আবার এই
গ্রুপের কমন বন্ধুদের জন্য। সব মিলিয়ে বেশ ভজঘট অবস্থা। তার সঙ্গে বালির দোকানদারদের
অবাস্তব দাম! একটু পরেই বুঝে গেলাম, যে টি-শার্টের দাম দোকানদার ২০০,০০০ রুপিয়া
মানে ভারতীয় টাকায় ১০০০ টাকা চাইছে, সেগুলোর দরদাম করা উচিত, ২০,০০০ বা ৩০,০০০
রুপিয়া থেকে এবং মোটামুটি পাওয়া যাবে ৭০-৮০ হাজারের মধ্যে।
যাই হোক, এর
মধ্যে একটি কাকিমার দোকানে বেশ সস্তায় জামাকাপড় পাওয়া যাচ্ছে বলে সবাই মিলে প্রায়
তেইশ-চব্বিশটা আইটেম কিনে ফেলল। মহিলা বেশ হাসিখুশি আর মাঝে মাঝেই এসে ফিসফিস করে
বলে যাচ্ছিলেন, "এতো সস্তায় হয়না, নেহাত মালিক স্টক ক্লিয়ার করতে বলেছে তাই
দিয়ে দিচ্ছি।"
এছাড়া অন্যান্য
মেমেন্টো ইত্যাদি যখন কেনা হল, তখন দেখা গেল টাকা-পয়সা সব শেষ। শেষ অবধি বিভিন্ন
ক্রেডিট কার্ডে পেমেন্ট মিটিয়ে হোটেল ফেরা হল সাড়ে-বারোটায়।
ইয়োমেন আগেই চলে
এসেছিল। সব গুছিয়ে-টুছিয়ে একটার পর বেরোনো হল। তারপর লাঞ্চ করে উলুয়াতুর জন্য যাত্রা
শুরু হল দুটোর পর। উলুয়াতু যখন পৌঁছলাম তখন চারটে বেজে গেছে। অসাধারণ বললেও কম বলা
হয় এই মন্দিরের সৌন্দর্য। সমুদ্রের ধার দিয়ে সোজা উঠে গেছে একটা খাড়াই পাহাড় আর
সেখানেই উলুয়াতু মন্দির। বিভিন্ন মূর্তি, কারুকার্য আর পাহাড়ের ধার দিয়ে উঠে যাওয়া
পাঁচিল। সেটা একটা অসাধারণ জায়গা।
সেখানেই হয়
ইন্দোনেশিয়ার বিশেষ বৈশিষ্ট্য কেচাক নৃত্য। যদিও প্লেনের যা সময় তাতে পুরোটা দেখা
হবে না, তাও ইন্দোনেশিয়ায় এসে এই জিনিস মিস্ করার কোন মানে হয় না। তাই সবাই মিলে
বসলাম কেচাক নাচের আসরে।
এই নাচের
বৈশিষ্ট্যই হল যে, প্রায় কুড়ি-পঁচিশ জন শিল্পী গোল হয়ে বসে মুখ দিয়ে 'কেচাক' ধ্বনি
তুলছেন আর তার মধ্যে বাদ্য সহযোগে অভিনীত হচ্ছে সেই রামায়ণের গল্প 'সীতাহরণ"।
একটু আগে থেকেই
ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছিল। কেচাক নাচ শুরু হওয়ার পর একেবারে ঝমঝম করে নেমে পড়ল বৃষ্টি।
সকলকে প্লাস্টিকের কভার দেওয়া হচ্ছিল বটে কিন্তু ওই বৃষ্টি রুখতে তা বড়ই অপ্রতুল।
যাই হোক, ঐ বৃষ্টির মধ্যেও ঘড়ির দিকে নজর রেখে বেরোনো হল এবং ওই বিশাল পার্কিং
লটের মধ্যে শেষ অবধি গাড়ী খুঁজে আমরা রওয়ানা দিলাম বালি এয়ারপোর্টের দিকে। আমাদের
বালি-ট্রিপ এবারের মত শেষ।
বাকি আর বিশেষ
কিছু হয়নি। এয়ারপোর্টে জিনিসপত্র আটকে দিয়ে কেবিন লাগেজের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়াকে
তখন আর পাত্তাই দিচ্ছি না। ফ্লাইটেই খাওয়া-দাওয়া হল। যখন কুয়ালালামপুরে নামলাম তখন
ঘড়ির কাঁটা পরের দিনে চলে গেছে। আমাদের দুমাসের পরিকল্পনার বালিভ্রমণ এখানেই শেষ।
আবার দেখতে হবে, পরের বছরের ঘোরার প্ল্যান কবে বানানো যায়!
আগের চারটে পার্টের মত এটাও দারুণ হয়েছে, আন্করভাট নিয়ে লেখাটা আসুক এরপর|
ReplyDeleteAmazing web log and really fascinating stuff you bought here! I positively learned plenty from reading through a number of your earlier posts in addition and set to drop a discuss this one!
ReplyDeleteHi, extremely nice effort. everybody should scan this text. Thanks for sharing.
ReplyDeleteThanks for kind words!
ReplyDeleteWhat you are spoken communication is totally true. i do know that everyone should say a similar factor, however I simply assume that you simply place it in an exceedingly method that everybody will perceive. i am positive you may reach such a lot of folks with what you've to mention.
ReplyDeleteVery informative, keep posting such sensible articles, it extremely helps to grasp regarding things.
ReplyDeleteHi thanks for possting this
ReplyDelete