Saturday, February 15, 2014

বিবাহ অভিযান... [৩] ...আইবুড়ো ভাত ও অন্যান্য


১৫ই ফেব্রুয়ারী, রাত ১টা
... বিয়ের লগ্ন আর ১৮ ঘন্টা দূরে...

এসেই গেল দিনটা। কাল সকালে সেই অন্ধকার থাকতে উঠে দধিমঙ্গল থেকে শুরু করে একের পর এক নান্দীমুখ, গায়ে হলুদ, আশীর্বাদ ইত্যাদির পরেই বিয়ে! The Countdown has started!

কিন্তু তার আগে আমার আইবুড়ো ভাতের গল্পগুলো বলে ফেলি। আমার আইবুড়ো ভাত শুরু হয়েছিল সেই ডিসেম্বর মাসে। মৃন্ময়দের বাড়ীতে। কাকিমা আর মৃন্ময় খুব যত্ন করে আমাকে পোলাও, মাংস, ফিসফ্রাই, মিষ্টি খাইয়েছিলেন। পরেরটা হল  গত মাসে ব্যাঙ্গালোরে। সেই যে অর্কবতী নদীর ধারে পিকনিকের গল্প লিখেছিলাম তাঁর পরের উইকেন্ডেই কাকিমা্রা মানে প্রশান্ত, সায়ন্তন এবং বুধাদিত্যর মা খুব আদর করে আমাকে আইবুড়ো ভাত খাইয়েছিলেন। ব্যাঙ্গালোরে হচ্ছে বলে কিন্তু কোন রকম ফাঁকি ছিল না তাতে। শুক্তো, ডাল, মাছ, ডিম, চাটনি, পায়েস... সব মিলিয়ে জম্পেস মেনু। সে এক মজার ব্যাপার। আর সেদিন আড্ডাটাও হয়েছিল দারুণ।
ব্যাঙ্গালোরের আইবুড়ো ভাত
এর পর কণাদ আমার আইবুড়ো ভাত সহ ব্যাচেলার পার্টির আয়োজন করে। সেখানে কি কি খেয়েছিলাম সেগুলো লিখে আমার সুরসিক পাঠক/পাঠিকাদের ঈর্ষার কারণ হতে চাই না। তবে এটা বলতে পারি, রাতে দুজনে মিলে টরেন্ট থেকে TMK অর্থাৎ তিস মার খান নামক সিনেমাটি নামিয়ে দেখার চেষ্টা করেছিলাম। এমনকি কণাদ পরদিন সকালে সেটা দেখে শেষ করেছিল যেটা আমি একাধিকবার চেষ্টা করেও পারিনি। কণাদকে অভিনন্দন!

এর পরের আইবুড়ো ভাতগুলো হয়েছে কলকাতা আসার পর। পরশু দিন দিয়েছিল আমার মাসি আর গতকাল মা। সে প্রচুর খাবার, তাঁর ফিরিস্তি দেওয়ার বদলে বরং কিছু ছবি দিয়ে দিলাম আইবুড়ো ভাতের। তবে এটুকু বলতে পারি, দুদিনই বেশ পেট এবং মন ভর্তি করে খেয়েছিলাম। 
প্রথম দিন - মাসিমনি
দ্বিতীয় দিন - মা
যাই হোক, অবিবাহিত জীবনকালের পরিসমাপ্তি ঘটতে চলেছে কাল। আমার সবচেয়ে প্রিয় এবং ঘনিষ্ট বন্ধুর সঙ্গেই বাকি জীবনটা কাটাব, এর চেয়ে ভালো কি হতে পারে। বেশ অদ্ভুত লাগছে বুঝছেন, বুঝতে পারছি জীবনে বেশ পরিবর্তন আসছে তবে সেটা নিয়ে বেশী ভাববো না বলেই ঠিক করেছি আপাতত। দেখা যাক, এই নতুন অভিযান কেমন হয়।
পায়েস দিয়ে শুরু!

কালকে একটা লম্বা দিন, ঘন্টা তিনেক ঘুমিয়ে নেওয়াই ভালো হবে। আজকের ছোট্ট ব্লগ পোস্ট এখানেই শেষ। ছবিগুলো কেমন হয়েছে বলবেন।

পুনশ্চঃ লেখা শেষ করার আগে দুজনের কথা বলে যাই।

১. আমার দশ বছর বয়স্ক পাটনাবাসী এবং হিন্দিভাষী ভাগ্নে মাটোল, যে নিতবর হতে চলেছে। ছোকরা এমনিতে মন্দ নয় তবে সকাল সাতটার সময় সে দাবী জানিয়েছিল সন্ধ্যেবেলা মামাজীর সঙ্গে ম্যাকডোনাল্ডস্‌ যাবে। তাকে বোঝানো হয়েছে যে মামাজী কি শাদি কে শুভ অভসর পে ম্যাকডোনাল্ডস্‌ বন্ধ্‌ হ্যায়। প্রথমে সে ব্যাপারটা খেয়ে গেছিল তবে এরপর যখন তার সব বায়নার জবাবেই এই একই কারণটা দেখানো হতে থাকে তখন বেলা দশটা নাগাদ সে বিরক্ত হয়ে বলে, আপ ক্যা প্রাইম মিনিস্টার হো? সাব কুছ কিঁউ বন্ধ্‌ হ্যায় আপকে শাদি কে লিয়ে?
আমিও বললাম, আরে ম্যায় সচমুচ প্রাইম মিনিস্টার হুঁ! দেখ নেহি রহে হো ম্যায় কুর্তা পহেনকে ঘুম রহে হ্যায়!
এহেন অকাট্য যুক্তির সামনে সে আর কোন বক্তব্য রাখতে পারেনি, আর যতক্ষণ সে না পারছে ততক্ষণ আমারও তেমন কোন চাপ হবে না বলেই আশা করছি!



২. এবং মৃন্ময়! আগের ব্লগে মৃন্ময়কে নিয়ে সামান্য খিল্লি করলেও এটা স্বীকার করে নেওয়াই ভালো যে, আমার বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ সুষ্ঠভাবে হওয়ার জন্য প্রধান প্রশংসা প্রাপ্য যার সে হল মৃন্ময়। আমার বিয়ের প্রায় সব কিছুরই প্রধান উদ্যোক্তা সে। সমস্ত রকম প্ল্যানিং এ তো মৃন্ময় ছিলই এখন একের পর এক সেগুলোর একজিকিউশান ও হচ্ছে মৃন্ময়ের হাত ধরে! আজ সন্ধ্যেবেলাতেও আমার ছোটমামা, মাসতুতো দাদা, কাকিমা (মৃন্ময়ের মা) এবং মৃন্ময়ের ঘন্টা তিনেকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হল ফুল দিয়ে সাজানো ছবির মত বিয়েবাড়ির প্রবেশদ্বার আর তার সামনের অসাধারণ আলপনা!


সাধে কি আর বলি, আমাদের বাড়ীর যেকোন ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী যেটা গুরুত্ব পায় সেটা হল মা এর মতামত, কিন্তু তার পরেই হল মৃন্ময়ের মতামত। তারও পরে আসি আমি আর বাবা! যদিও মৃন্ময়ের আশংকা যে তার সাধের দু নম্বর জায়গাটা যে কদিন পরে নিয়ে নেবে সে এখন গোকুলে... ইয়ে মানে বেলগাছিয়ায়ে বাড়ছে!! 
আলপনা

শ্রী
ক্রমশ...

3 comments:

"It’s always very easy to give up. All you have to say is ‘I quit’ and that’s all there is to it. The hard part is to carry on”