অফিস থেকে বেশ ভয়
ভয়েই বাড়ি ফিরছিলেন অনিলবাবু। একটা চাপা টেনশান আছে সকাল থেকেই। তাই ফোনের ভরসায়
না থেকে একটা হাফ ছুটি নিয়ে দুপুর দুপুরই বেরিয়ে পড়েছেন। আজকে রোহণ-কুনালদের স্কুলের অ্যানুয়াল পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোবার দিন। রোহণ আর কুনাল
তাঁর দুই যমজ ছেলে, কলকাতার একটা নামী স্কুলে ক্লাস নাইনে পড়ে। এমনিতে দুই ছেলেকে
নিয়ে অনিলবাবুর বিশেষ চিন্তা নেই। দুজনেই বেশ শান্ত, গল্পের বই পড়তে আর টিভিতে
ক্রিকেট-ফুটবল দেখতে খুব ভালোবাসে। এই দিকটায় অনিলবাবুর সঙ্গে তাঁর দুই ছেলের
দিব্বি জমে! ঘন্টার পর ঘন্টা তিনজনের গল্প চলে শার্লক হোমস বা ডন ব্র্যাডম্যানকে
নিয়ে। সমস্যার দিকটা পড়াশুনো সংক্রান্ত। দুজনেই বেশ মাঝারি মানের ছাত্র। ক্লাসে
ফেল না করলেও প্রথম দিকে আসার খুব একটা ইচ্ছে বা মেধা কোনটাই তাদের মধ্যে তেমন
দেখা যায় না। অনিলবাবুর অবশ্য সেই নিয়ে বিশেষ মাথাব্যাথা নেই। শুধু পরীক্ষার খাতার
নম্বর দিয়ে যে কেউ শিক্ষিত হয় না সেটা তিনি বিশ্বাস করেন।
কিন্তু তাঁর স্ত্রী
সুলেখা কড়া ধরণের মানুষ। রোজ সন্ধ্যেবেলা অফিস থেকে বাড়ি ফিরে অনেকটা সময়ই তিনি তাঁর
দুই ছেলের পেছনে ব্যয় করেন এবং নিজের মনের মত রেজাল্ট না হলেই দুই ছেলের ভবিষ্যৎ
যে অন্ধকার তা জোর গলায় জানিয়ে দেন। সেই সময় নিজের স্বামীর প্রতি কিছু চোখা চোখা
বাক্যবাণও বাদ পড়ে না।
হবে নাই বা কেন! কোন
বাবা যদি নিজেই ছেলেদের কোচিং কাটিয়ে আইপিএল দেখাতে নিয়ে যান বা রবিবার সকালে
নন্দনে সোনার কেল্লার স্পেশাল শোয়ের নাম শুনে পড়াশুনো শিকেয়ে তুলে দুই মূর্তিমানকে
বগলদাবা করে বেরিয়ে পড়েন তাহলে তাদের খারাপ রেজাল্টের অনেকটা দায় তাঁর ওপরেই
বর্তায়, অন্তত সুলেখার পৃথিবীতে তো বটেই।
এছাড়া আছেন
কমলেশবাবু। তাঁর কথায় আবার পরে আসা যাবে খন।
যাই হোক, বাড়ি ঢুকেই
অনিলবাবু বুঝতে পারলেন পরিবেশ থমথমে। সুলেখা ছুটি নিয়েছিলেন। আপাতত তিনি বসার ঘরে
গম্ভীর হয়ে একটা পত্রিকা মুখে দিয়ে বসে আছেন। দুই ছেলের টিকিটিও দেখা যাচ্ছে না।
অনিলবাবু গলা খাঁকড়ি দিয়ে বললেন, “ওরা ফেরেনি?”
“আমায় জিজ্ঞেস করছ
কেন? তোমার গুণধর ছেলেরা তাদের ঘরে ঢুকে বসে আছে। তুমিও যাও। তুমি তো ওদের
পার্টনার। মাথায় তুলেছ। যাও ছেলেরা কোনরকমে পাস করেছে! সেলিব্রেট কর।”
অনিলবাবু আমতা আমতা
করে ছেলেদের ঘরের দিকে এগোলেন। সেখানে গিয়ে দেখলেন দুই মক্কেল নিজের নিজের খাটে
শুকনো মুখে বসে আছে। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে স্কুল থেকে ফিরে ভালোই ঝড়-ঝাপটার
মধ্যে দিয়ে গেছে দুজন।
“কী খবর? রেজাল্ট
সুবিধার হয়নি?” অনিলবাবুর প্রশ্ন শুনে তাদের ছাপানো রেজাল্ট দুটো এগিয়ে দিল রোহণ
আর কুণাল। অনিলবাবু ভালো করে রেজাল্টটা দেখে বুঝলেন যে মোটামুটি সত্তর শতাংশের
আশেপাশে নম্বর পেয়েছে দুজনেই। তবে একজনের অঙ্কে মোটে সাতচল্লিশ। অন্যজন ছড়িয়েছে
ইতিহাসে, তেতাল্লিশ!
অনিলবাবু তবু মুখটা
হাসি হাসি রেখে বললেন, “মোটামুটি ঠিকই আছে বুঝলি। তবে ব্যাপারটা হচ্ছে, নেক্সট
ইয়ার আইসিএসই তো। তোরা তো সবই বুঝিস। ওখানে ভালো রেজাল্ট না করলে তো তোদের স্কুল
বা অন্য কোন ভালো স্কুলে চান্স পেতে অসুবিধে হবে তাই না?”
দুজনেই ঘাড় নাড়ল। অনিলবাবুরও
মনটা একটু খারাপই হয়ে গেল। আর একটু ভালো নম্বর উনিও আশা করেছিলেন। আসলে এরা দুজনেই
বুদ্ধিমান, বই পড়তে দারুণ ভালোবাসে। স্কুলে-পাড়ায় দু জায়গাতেই ক্যুইজ চ্যাম্পিয়ান।
শুধু পড়ার বই ছাড়া অন্য বইয়ের প্রতিই তাদের আকর্ষণ বেশী, আর ফাঁকি যে মারে না তা
নয়। এই কদিন আগেই সন্ধ্যেবেলা রোহণকে হাতে হাতে ধরেছিলেন। কিছুই না, সে ফিজিক্স
বইয়ের ভেতরে ‘গোরস্থানে সাবধান’ ঢুকিয়ে সুলেখার চোখে ধুলো দিচ্ছিল। অনিলবাবু
অবশ্যই কিছু বলেননি। উলটে রাতে শোওয়ার আগে ছেলেদের সঙ্গে আরেকবার ফেলুদার গল্পগুলো
নিয়ে আড্ডা মেরেছিলেন। আর ঠিক শুতে যাওয়ার আগে একবার হাল্কা করে রোহণকে
বুঝিয়েছিলেন, পড়াশুনোর গুরুত্বটা।
সেইদিন ছেলেরা শুতে
চলে যাওয়ার পর নিজের পার্স থেকে একটা চিরকুট বের করে লেখাটা পড়েছিলেন অনিলবাবু।
এদিন সন্ধ্যে থেকেই
দফায় দফায় সুলেখার বক্তব্য শুনতে হল তাঁকে। তিনি কতটা ভ্যাবা গঙ্গারাম! ছেলেরা
তাঁকে নাচাচ্ছে। পড়াশুনো না করলে কেউ মানুষ হয় না। তাঁর এইসব খেলা দেখার ঝোঁকে
ছেলেদের স্কুল বা কোচিং কামাই হলে তাতে ওদের কত ক্ষতি হয় সেটা তাঁর মাথায় ঢোকে না।
লাস্ট পয়েন্টটায়
অনিলবাবু মিনমিন করে বলেছিলেন যে, ক্লাসের বাকি বন্ধুরা যে নোটস শেয়ার করবে না
তিনি সেটা ভাবতে পারেননি। ওনাদের সময় এসব ভাবাই যেত না। ওনার প্রিয় বন্ধু রঞ্জন যে
স্কুল-কলেজের কত নোটস জেরক্স করে দিয়েছে সেটা ভেবে মাঝে মাঝে হাসি পায় অনিলবাবুর।
কিন্তু কথার মাঝখানেই
তাঁকে থামিয়ে দিয়েছিলেন সুলেখা। আজকাল নাকি এটাই দস্তুর। ওইসব বন্ধু-ফন্ধু কিছু হয়
না। সবাই কম্পিটিটর। কেউ কাউকে এক পা ও জমি ছেড়ে দেয় না। রোহণরা স্কুলে না গিয়ে
ফুর্তি করেছে যেখানে ওদের বন্ধুরা কষ্ট করে ক্লাস করছে। ওরা ঠিকই করেছে নোটস না
দিয়ে। সুলেখা নিজেও নাকি সেটাই করতেন।
শুনে অবাক হয়ে গেলেন
অনিলবাবু। এ আবার কিরকম সংকীর্ণ মানসিকতা। পার্স থেকে চিরকুটটা বের করে পড়তে পড়তে
তিনি ঠিক করলেন এই একটা বছর বেশ ভালো করে সময় দেবেন তিনি ছেলেদের পেছনে! ছেলেদের
ভালো মানুষ করে তোলাই তাঁর লক্ষ্য। সেটার সঙ্গে পড়াশুনোটাও থাকুক।
কিন্তু তার আগে কাল
সকালটা ভালোয়ে ভালোয়ে কাটলে হয়।
২
সকালে বাজারে চারটে
বেগুন নিয়ে দরাদরির সময় কমলেশ মেহতা পাকড়াও করলেন অনিলবাবুকে।
“কি দাদা? খবর সব্
বড়িয়া?”
কমলেশ মেহতা
অনিলবাবুর পাড়াতেই থাকেন। পেশায় চার্টাড অ্যাকাউন্টেন্ট। কমলেশের ছেলে রঘুবীর রোহণদের
ক্লাসেই পড়ে। ওদেরই স্কুলে, এবং প্রতি বছরই ক্লাসের প্রথম তিনজনের মধ্যে জায়গা করে
নেয়। অনিলবাবুর জন্য সেটাই মুশকিল। কমলেশকে দেখে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে মুখে
একটু হাসি এনে অনিলবাবু বললেন, “ভালোই চলছে।”
কিন্তু ভবী ভোলবার
নয়। পরের প্রশ্ন,
“রঘুর রেজাল্ট শুনেছেন?”
“কই, না তো!”
“সেকেন্ড হয়েছে!
ভাবেন! হামি বললাম কি, স্কুলে যদি ফার্স্ট না হতে পারিস আইসিএসইতে আল ইন্ডিয়া
ফার্স্ট হবি কী করে? কী বলেন দাদা?”
“মানে ফার্স্ট হওয়ার
কি খুব দরকার?”
“বোলেন কী দাদা?
এত্ত কম্পিটিশান! ফুল লাইফ ইজ আ রেস। এখন রেজাল্ট সেই স্ট্যান্ডার্ডে না হলে এর
পরে বাইরে গেলে তো পিছিয়ে পড়বে না দাদা। রঘু নিডস্ টু ইম্প্রুভ।
অনিলবাবু মাথা
নাড়লেন। কেটে পড়তে যাচ্ছেন, তখন প্রশ্নটা এল। যেটা নিয়ে ভয় পাচ্ছিলেন তিনি।
“তা আপনার ছেলেদের
কী হাল? রঘু বলছিল কি ওদের নাম্বার খুব ইম্প্রেসিভ নয়।”
“না না, ঠিকই আছে।
আরো একটু মন দিয়ে পড়লে আরো বেটার হত।”
“না না দাদা। ইউ নিড
টু বি স্ট্রিক্ট। ইয়ে সব্ ক্রিকেট ম্যাচ-ফুটবল ম্যাচ বন্ধো করে দিন। উন চিজোকে
লিয়ে তো পুরা জওয়ানি পড়ি হ্যায়।”
আরো কিসব বলছিল
কমলেশ। অনিলবাবু কায়দা করে, অফিস যাওয়ার দেরী হয়ে যাচ্ছে বলে কেটে পড়লেন। এসব নতুন কিছু নয়। প্রত্যেকবার রেজাল্টের পর এবং এমনিতেই সারা বছর কমলেশের
কাছে পুত্রদের মানুষ করা নিয়ে উপদেশ শুনতে হয় অনিলবাবুর। প্রত্যেকবারই মনে মনে
কমলেশের কথাগুলোর সঙ্গে একমত হন না অনিলবাবু। কথাগুলো হয়তো প্র্যাক্টিকাল, তাও।
বাড়ি ফেরার পথে পার্স
থেকে চিরকুটটা বের করে আবার একবার পড়লেন তিনি। দেখা যাক!
৩
মাস ছয়েক পরের কথা। আবার একটা রেজাল্টের দিন। ক্লাস টেনের টেস্ট। সুলেখার
জোরাজুরিতে অনিলবাবু রোহণ আর কুণালকে নিয়ে স্কুলে এসেছেন। প্রথমে বাড়াবাড়ি মনে
হচ্ছিল তারপর ভেবে দেখলেন যে, একদিক দিয়ে ভালোই। ছেলেদের রেজাল্ট সুবিধার না হলে
সুলেখার মুখোমুখি হওয়ার আগে একটু সময় পাওয়া যাবে।
এবার পরীক্ষার আগে অনেকটাই সময় দিয়েছিলেন অনিলবাবু। ছেলেদের অনেক করে বুঝিয়ে
শেষ কিছুদিন গল্পের বই- খেলা বন্ধ রেখেছিলেন। সুলেখাও বিশেষ সুযোগ পাননি কিছু
বলার।
রেজাল্ট কিন্তু সেই তুলনায় তেমন ভালো হল না। মোটামুটি আগের বারের মতই। বরং
দু-একটা সাবজেক্টে নম্বর একটু কমেছে। অনিলবাবুদের সময় স্কুলগুলো টেস্টে ভীষণ চেপে
নম্বর দিত। উনি নিজে তো বোধ হয় দু একটা সাবজেক্টে কোনরকমে পাস করেছিলেন। আজকাল
অবশ্য স্কুলগুলো সেরকমই করে কিনা সেটা ওনার জানা নেই।
ছেলেদের চিয়ার আপ করার জন্য ওদের সঙ্গে নিয়ে কিছুটা হাঁটবেন বলে ঠিক করলেন
অনিলবাবু। কমলেশ মেহতাও স্কুলে গেছিল। রঘুবীর বোধহয় সায়ন্সের সব কটা সাবজেক্টেই
স্কুলের মধ্যে হায়েস্ট পেয়েছে। সুতরাং কমলেশের লেকচারও শুনতে হয়েছে তাঁকে। ছেলেদের
সঙ্গে টুকটাক কথা বলতে বলতে একটা গলির মধ্যে দিয়ে হাঁটছিলেন। হঠাৎ একটা প্রচণ্ড অপ্রীতিকর ঘটনা চোখে পড়ল
অনিলবাবুর। রাস্তার এক ধারে চার-পাঁচটা ছেলে একটা মেয়েকে ঘিরে ধরেছে। দু একটা
মন্তব্য কানে আসতেই ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন অনিলবাবু। ইভ টিজিং নিয়ে এই অঞ্চলের
বদনাম তিনি শুনেছিলেন কিন্তু কোনদিন ভাবেননি যে দিনের আলোয় এই জিনিস হতে পারে।
কি মনে হল, অনিলবাবু ছেলেদের নিয়ে এগিয়ে গেলেন।
“কী ভাই? কী হয়েছে? অসভ্যতা করছ কেন?”
ওনার গলার আওয়াজ শুনে ছেলেগুলো ঘুরে দাঁড়াল। চোখ গুলো দেখলেই বোঝা যাচ্ছে ভালই
নেশা করেছে ছেলেগুলো। ভাঙা ভাঙা গলার আওয়াজে একজন বলল, “আবে বুঢ্ঢা! কাহে টেনশান
লেতা হ্যায়! ফোট ইহাঁসে!”
অনিলবাবু তাও এগিয়ে গেলেন। মেয়েটা দাঁড়িয়ে কাঁপছিল। তাকে উদ্দেশ্য করে
বললেন, “তুমি এদিকে চলে এসো তো। আমার পাশে এসে দাঁড়াও।”
ছেলেগুলো আর থাকতে না পেরে হঠাৎ এসে একটা ধাক্কা মারল অনিলবাবুকে। অনিলবাবু
এটা ভাবতে পারেননি। ছিটকে পড়লেন রাস্তায়। দেখতে পেলেন ছেলেগুলো আসতে আসতে এগিয়ে
আসছে তাঁর দিকে।
রোহণ আর কুণাল কিন্তু দাঁড়িয়ে ছিল না। যদিও এভাবে রাস্তায় মারপিট কোনদিন করতে
হয়নি, তাও পিছু না হটে কুণাল গিয়ে একটা ধাক্কা মারল সবচেয়ে সামনের ছেলেটাকে। তার
যদিও কিছু হল না। বরং ছেলেগুলো ঘিরে ধরল কুণালকে। কেউ একটা পকেট থেকে একটা লম্বা
ছুরি বের করে চালিয়ে দিল ধস্তাধস্তির মধ্যে। অনিলবাবু দেখতে পেলেন কুণালের ডান হাত
থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ছে।
ভাইয়ের ওই অবস্থা দেখে রোহণ কোত্থেকে একটা গাছের ডাল জোগাড় করে খ্যাপা ষাঁড়ের
মত লাফিয়ে পড়ল ছেলেগুলোর ওপর। এই আচমকা আক্রমন ছেলেগুলো আশা করেনি। হঠাৎ রোহণের
একটা লাথি খেয়ে ছিটকে পড়ল ওই ছেলেগুলোর লিডার। কুণালও তার রক্তাক্ত হাত নিয়েই
দু-এক ঘা দিচ্ছিল। কিন্তু লিডারকে পড়ে যেতে দেখে বাকি ছেলেগুলো বেশ ঘাবড়ে গেল।
তারপর রোহণ ডাল নিয়ে তেড়ে যেতেই পালটা মারের ভয়ে লিডার সুদ্ধু দ্রুত পালিয়ে গেল
দলটা।
অনিলবাবু উঠে গিয়ে দেখলেন কুণালের হাতের অবস্থা। ক্ষতটা বেশ গভীর। রক্ত
বেরোচ্ছে। কোনরকমে বড় রাস্তায় এসে একটা ট্যাক্সি নিয়ে হসপিটালের দিকে চললেন
অনিলবাবু। সঙ্গে দুই ছেলে এবং ওই মেয়েটি।
৪
হসপিটালে কুণালের হাতটা ভালো করে ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিলেন একজন
ডাক্তার। পুরো ঘটনা শুনে দুই ভাইয়ের পিঠ-টিঠ চাপড়ে দিতেও ভুললেন না। অনিলবাবুকে
ডেকে বললেন, “ইউ আর আ লাকি ম্যান। ছেলেদের যথার্থ শিক্ষিত করে তুলতে পেরেছেন।
আজকালকার দুনিয়ায় এরকম বেশী দেখা যায় না। সবাই তো নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত!”
সঙ্গের মেয়েটি, শিপ্রাও অনেক করে ধন্যবাদ দিচ্ছিল অনিলবাবুদের। তাকে একটা
ট্যাক্সিতে তুলে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন অনিলবাবু।
এবার ট্যাক্সিতে বাড়ির পথে। দুই ছেলেকে পেছনে বসিয়ে ড্রাইভারের পাশে বসলেন
অনিলবাবু। মাঝপথে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন, গল্প করতে করতেই কুণালের হাতের ব্যান্ডেজের
ওপর আস্তে আস্তে হাত বোলাচ্ছে রোহণ। দুজনের মুখেই একটা খুশীর হাসি।
সামনে ফিরে নিজের পার্স থেকে চিরকুটটা বের করলেন অনিলবাবু, আরো একবার পড়লেন
লেখাটা,
‘It’s always very easy to give up. All you have to say is
‘I quit’ and that’s all there is to it. The hard part is to carry on.’
ট্যাক্সির সামনের সিটটাকেই লর্ডসের ব্যালকনি ভেবে মনে
মনেই নিজের জার্সিটা খুলে উড়িয়ে দিলেন অনিলবাবু।