Saturday, January 17, 2015

উত্তর বাংলার আনাচে কানাচে - 8


কালিম্পং
ভূত বাংলো

দার্জিলিং থেকে কালিম্পঙের রাস্তাটা বেশ অন্যরকম। প্রথমে কিছুটা শহরের মধ্যে দিয়ে, তারপর পাহাড়, আবার লামাহাট্টার পর কিছুটা গেলেই তিস্তা দেখতে পাওয়া যায়। এরপর তিস্তা বাজারের কাছে অনেকটা রাস্তা তিস্তার সঙ্গে সঙ্গে চলা, তারপর তিস্তার ব্রিজের ওপর দিয়ে এসে ফের পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে ঘুরে ঘুরে ওপরে ওঠা। প্রায় তিন ঘন্টার রাস্তা, তাতে আবার আমরা দুবার ব্রেক নিলাম।
দার্জিলিং থেকে হোটেলের সব হিসেব মিটিয়ে বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে আমার বেরিয়েছিলাম নটা নাগাদ। পর পর দুদিন বেশ পরিষ্কার আকাশের পর সেদিন সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। বিকাশও বলল যে, “আজ গড়বড় হ্যায়।” আজও আগের দিনের মতই ঘুম স্টেশন অবধি এসে তারপর ডানদিক না নিয়ে সোজা এগিয়ে গেলাম। তার পরেই একটা বাঁদিকের রাস্তায় গাড়ী ঘুরল। একটু পর থেকেই পাহাড়ি রাস্তা শুরু। টুকটাক গল্প করতে করতে এগোচ্ছি, আমি মাঝখানে আমার টিনটিন মার্কা নোটবুক খুলে একটু হিসেব করতে বসলাম, কিন্তু ঐ এবড়োখেবড়ো পাহাড়ির রাস্তায় চলন্ত গাড়ীতে হিসেব লেখার চেষ্টা যে খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয় সেটা বুঝে রণে ভঙ্গ দিতে হল খুব তাড়াতাড়িই।
প্রায় ঘন্টাখানেক চলার পর গাড়ী থামল একটা বেশ সুন্দর দেখতে পার্কের সামনে। বিকাশ জানালো যে, এই জায়গার নাম লামাহাট্টা। লামাহাট্টাও একটা ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম তবে এখানকার প্রধান আকর্ষণ হল পাহাড়ের ঢালে বানানো চমৎকার ঐ পার্ক। বেশ যত্ন করে বানানো এবং সেই একই যত্ন নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণও করা হয়। পুরো পার্ক জুড়ে রংবেরঙয়ের ফুল গাছগাছালির সারি। ততক্ষণে সকালের মুখ ভার কেটে গিয়ে রোদ উঠে গেছে। পার্কের একদিকে উঁচু উঁচু পাইন আর বার্চ গাছের বন, তার সামনে লাইন দিয়ে লাল-হলুদ-সবুজ-নীল রঙের পতাকা সকালের হাওয়ায় পতপত করে উড়ছে।
আকাশের অন্যদিকের উজ্জ্বল নীল রঙের মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের চেনা কাঞ্চনজঙ্ঘা। পার্কের মধ্যে জায়গায় ছোট ছোট ছাউনির মত বানানো আছে। শুধু তাই নয়, এই সবের মধ্যেই আছে একটা ওয়াচ টাওয়ার। সেখানে উঠলেই একসঙ্গে লামাহাট্টার পুরো গ্রামটা দেখা যায়। আর কাঞ্চনজঙ্ঘা তো আছেই। মনের আনন্দের প্রকৃতি এবং পিউয়ের প্রচুর ছবি তুলে ফেলা গেল।
পিউ সকালে ব্রেকফাস্টে বেশী কিছু খায়নি। তাই ওখানে একটা দোকানে গরম গরম ম্যাগি খেয়ে নিয়ে আমরা আবার যাত্রা শুরু করলাম। কিন্তু আধ ঘন্টা পরেই পরবর্তী বিরতি নিতে হল। পাহাড়ের রাস্তার বাঁকে এক জায়গায় বেশ কিছু গাড়ী দাঁড়িয়ে ছিল। সেখানে আমাদের গাড়ীটাও থামিয়ে দিয়ে বিকাশ বলল, “চলুন, তিস্তা নদী দেখবেন।”
দেখলাম, পাহাড়ের গায়ে বাঁধানো উঠোনের মত জায়গা, লোকজন সেখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে নানা রকমের। কিন্তু ওখানকার প্রধান আকর্ষণ হল দূরে পাহাড়ের নীচ দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর সঙ্গম। বিকাশ বলল, ওখানটাকে বলে ত্রিধারা, কিন্তু অন্য নদীগুলোর নাম বলতে পারল না। অবশ্য তাতে কী বা আসে যায়? নদীর সৌন্দর্য কি আর তার নামের ওপর নির্ভর করে? তিস্তা নদী ভীষণ সুন্দর। আর এই নদীর জলের রঙ সবুজ। না পান্নার মত উজ্জ্বল সবুজও নয়, কচি কলাপাতার মত চোখ ঝলছে দেওয়া সবুজও নয়। এই সবুজ হালকা, পেস্তা রঙের, সামান্য নীল রঙ ঘেঁষা। এই যাত্রায় সেই প্রথম তিস্তা দর্শন। নদী দেখে, তার ছবি তুলে, তাকে বিদায় জানিয়ে আমরা আবার এগিয়ে গেলাম আমাদের পথে।

তিস্তা নদী তখনকার মত বিদায় নিলেও একটু পর আবার আমাদের পথের সঙ্গী হল। জায়গাটার নাম তিস্তা বাজার। বুঝতেই পারছেন এখানে এসে দেখলাম আমাদের রাস্তার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে তিস্তা নদী। সেই নদীর সঙ্গে খানিকটা পথ চলার পর তিস্তা নদীর ওপরের ব্রিজ টপকে ওপাশে গিয়ে আমরা আবার পাহাড়-জঙ্গলের পথে ফিরে গেলাম। বিকাশ জানাল, কালিম্পং পৌঁছতে আর ঘন্টা খানেকের বেশী লাগবে না।

এই ফাঁকে কালিম্পঙে আমাদের থাকার ব্যবস্থা সম্বন্ধে বলে নি। আমি যখন হোটেল বুক করছিলাম তখন সব জায়গাতেই আগে দেখছিলাম যে সরকারী থাকার জায়গাগুলোতে জায়গা আছে কিনা এবং সেগুলো অনলাইন বুক করা যাচ্ছে কিনা। দুটি ক্ষেত্রে দুটো প্রশ্নের উত্তরই হ্যাঁ হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের টুরিস্ট লজে থাকার ব্যবস্থা করি। সত্যি বলতে কি WBTDC-এর ওয়েবসাইটটা বেশ ভালোই। সেখানেই দেখেছিলাম যে, কালিম্পঙে তিনটি সরকারী অতিথিশালা রয়েছে যেগুলোর মধ্যে আমি পছন্দ করেছিলাম মর্গান হাউস। বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে জেনেছিলাম যে, ওটা একটা ব্রিটিশ আমলের বাংলো, যেটা এখন সরকার অধিগ্রহন করে টুরিস্ট লজ বানিয়েছে। মর্গান হাউসের ছবি দেখে সঙ্গে সঙ্গেই পছন্দ হয়ে গেছিল আর যতই হোক সত্যজিৎ রায়ের গল্পের চরিত্রদের মত পুরনো বাংলোতে থাকার লোভ সামলানোও সহজ কাজ নয়। যেটা পরে জানলাম তা হল, মর্গান হাউসের নাকি ভূতের বাড়ী বলে কিঞ্চিৎ নাম আছে... (“নাম বলছেন কেন? বদনাম বোলেন...”) বাড়ীর প্রাক্তন মালকিন মিসেস মর্গানকে নাকি মাঝেমধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। আমার সঙ্গিনী সেটা শুনে আসার আগেই আমাকে বলে রেখেছিলেন যে ওখানে গিয়ে ভূতের সামান্য নামগন্ধ পেলেই তিনি ঘর ছেড়ে রিসেপশনে গিয়ে থাকবেন। যদিও ওনাকে সাহস করে জিজ্ঞাসা করা হয়নি যে, ভূতেদের রিসেপশন এড়িয়ে যাওয়ার কারণ কী হতে পারে!

যাই হোক, কালিম্পং শহরে ঢুকে রাস্তায় লোকজনকে জিজ্ঞেস করতে করতে আমরা মর্গান হাউসের দিকে এগিয়ে চললাম। যাকেই জিজ্ঞেস করি, সে বলে আরো সামনে যেতে হবে। সে এক মজার ব্যাপার। আমরা পাহাড়ের ওপরে উঠেই চলেছি কিন্তু মর্গান হাউস আর আসে না। যাকেই জিজ্ঞেস করি সে মাথা নেড়ে বলে, “আগে”। এইভাবে দোনামোনা করতে করতে এগোতে এগোতে দেখি আমাদের গাড়ী প্রায় একটা মিলিটারি ক্যাম্পে ঢুকে পড়ছে। ততক্ষণে আমি ধরেই নিয়েছি যে, কোন অজ্ঞাত কারণে কালিম্পঙের জনগণ আমাদের সঙ্গে খিল্লি করে আমাদের পাহাড়ের চূড়ায় পাঠিয়ে দিয়েছে! কিন্তু ঐ মিলিটারি ক্যাম্পের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা এক ভদ্রলোককে আমতা আমতা করে যেই বলেছি, “ইয়ে... মর্গান হাউস যানা থা...” ভদ্রলোক মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বাঁদিকে একটা রাস্তা দেখিয়ে বললেন, “উধার চলে যাইয়ে!”
বোঝো কান্ড! সেই রাস্তা দিয়ে আরো মিনিট দুয়েক ওপরে ওঠার পর অবশেষে মর্গান হাউস খুঁজে পাওয়া গেল। ছবি দেখা ছিল তাই দূর থেকে দেখেই চিনে ফেললাম। বিকাশও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। তার আগে অবধি ও ভাবছিল, আমরা ভুল রাস্তায় এসেছি, আর ওকে এখন আমাদের ওর গাড়ী করে নিয়ে ঠিক হোটেল খুঁজে বের করতে হবে!
অত কষ্ট করে খুঁজে পেতে হলেও মর্গান হাউসের সামনে গিয়ে মন ভালো হয়ে গেল। চমৎকার দেখতে, পুরনো ধাঁচের বাড়ী, তার চারদিকে বাগান, শুধু তাই নয় সামনের বারান্দার নীচেই সারি দিয়ে রাখা টবে ফুলগাছ। এমনকি বাড়ীটার বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তারও বাইরের দেওয়াল বেয়ে গাছের শিকড় নেমেছে। কিন্তু সেটা পুরোটাই বাড়ীটার সৌন্দর্যের একটা অংশ, বাড়ীটা ভাঙ্গাচোরা মোটেই নয়।
বিকাশ আমাদের মালপত্র নামিয়ে দিয়ে, টাকা-পয়সা নিয়ে ‘টা টা’ বলে ফিরে গেল দার্জিলিং। আমরা চেক ইন করেই হোটেলে কথা বলে কালিম্পং ঘোরার জন্য একটা গাড়ীর ব্যবস্থা করে ফেললাম। কথা হল গাড়ী আসবে ঠিক পনেরো মিনিট পর। আমরা ততক্ষণে ঘরে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নেব। আর ঠিক এই সময়ে, মাঝ দুপুরে আমরা ভূতের খপ্পরে পড়লাম!!

গাড়ী আসার তাড়া ছিল। পিউ যথারীতি তার মধ্যেও ল্যাধ্‌ খাচ্ছিল, সুতরাং আমিই আগে বাথরুমে গেলাম ফ্রেস হওয়ার জন্য। হাত-মুখ ধুয়ে-টুয়ে বেরিয়ে দেখি, পিউ ঘরের মধ্যে এক জায়গায় চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। মুখ গম্ভীর, কপালে ভ্রূকুটি, আমাকে দেখে বলল, “এই, একটা খট্‌ খট্‌ করে আওয়াজ হচ্ছে মাঝে মাঝে!”
বুঝলাম পিউয়ের কল্পনায় মিসেস মর্গানের ভূত হাই হিল জুতো পরে হাঁটতে বেরিয়ে আওয়াজ করছেন। পিউয়ের আরো নাকি মনে হয়েছিল যে, ও যখন ঘরের পুরনো ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজের মুখ দেখছিল তখনই আওয়াজটা প্রথম হয়। মানে মিসেস মর্গানের ভূতের বোধহয় পছন্দ নয় পিউ ওনার ড্রেসিং টেবিল ব্যবহার করে। মনে মনে একমত হতেই হল, হাজার হোক, ভূত বা পেত্নি যাই হোন না কেন মিসেস মর্গান তো মহিলাই বটে! এইসবের মাঝেখানেই আমি শুনতে পেলাম ‘খট্‌’ আওয়াজটা। পিউ চোখ বড় বড় করে বলল, “শুনলে?”
নিজের কানে শোনা শব্দকে অস্বীকার করি কী করে? বলতেই হল যে, শুনেছি। তারপর সেই শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়েই পেয়ে গেলাম... কী আবার? রুম হিটার!!
আরে হয়েছে কী, পুরনো দিনের বাংলোর রুম হিটারও পুরনো দিনের, সেটা আমাদের বেয়ারা, আমাদের ঘরে রেখে চালিয়ে দিয়ে গেছিল। সেই হিটার যখন মাঝে মাঝে গরম হয়ে যাচ্ছে, তখন সেটা নিজে থেকেই আওয়াজ করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং আবার একটু পরে চালু হয়ে যাচ্ছে। আর ওই চালু-বন্ধের চক্করেই ঐ ‘খট্‌ খট্‌’ শব্দের উৎপত্তি! ভূতের রহস্য সেই যে সমাধান হয়ে গেল তারপর রাতের দিকে হোটেলের বাইরে ঘোরাঘুরি করেও ভূতের নামগন্ধ পর্যন্ত দেখা গেল না। পিউ পরে বলেছিল যে, ঐ খট্‌ শব্দটা যদি শুধু ও শুনত আর আমি শুনতে পেতাম না, তাহলে নাকি ঐ ঘর তো বটেই এমনকি ঐ হোটেল ছেড়েই নাকি ও চলে যেত।

তার আগে তো আমরা সাঙ্গের গাড়ী করে কালিম্পং ঘুরতে বেরোলাম। হ্যাঁ, আমাদের গাড়ীর চালক ভদ্রলোক তাঁর নাম ‘সাঙ্গে’ ই বলেছিলেন, অন্তত আমি সেটাই শুনতে পেয়েছিলাম। কালিম্পঙে মোটামুটি নটা দেখার জায়গা আছে। তার মধ্যে মন্দির, মনস্ট্রি, স্ট্যাচু, নার্সারি, কলোনিয়াল বাড়িঘর, প্রকৃতি... কোন কিছুই বাদ নেই!

সাঙ্গের সঙ্গী হয়ে আমরা প্রথমে গেলাম দুরপিন ডেরা মনস্ট্রি। পাহাড়ের আরো ওপরে সুসজ্জিত একটা বৌদ্ধ মঠ। যখন গেলাম, তখন প্রধান মন্দির বন্ধ থাকলেও চারপাশ ঘুরে দেখায় কোন বাধা নিষেধ নেই। এমনকি মঠের তিনতলাতেও উঠে গেলেও কেউ কিছু বলছে। অন্য যেকোন বৌদ্ধ মঠের মত এই মঠের রঙও উজ্জ্বল। আর ওপর থেকেই দেখা যায় পাশের মিলিটারি স্কুলের মাঠ, চারপাশের পাহাড় এবং কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য। খুব ভালো লেগেছিল ঐ দুরপিন ডেরা। সেখান থেকে বেরিয়ে আমরা গেলাম পাইন ভিউ নার্সারি। কালিম্পঙে এরকম নার্সারি অনেকগুলোই আছে কিন্তু পাইন ভিউয়ের বৈশিষ্ট্য হল এখানকার ক্যাকটাস। এত বিভিন্ন রকমের ক্যাকটাস আর অন্য কোন নার্সারিতে নাকি নেই। অন্যান্য ভ্রমনার্থীদের মত আমরাও দশ টাকার টিকিট কেটে ঘুরে এলাম, ভালোই লাগলো।
সেখানে থেকে বেরিয়ে একটা মন্দিরে ছোট্ট করে দর্শন সেরে আমরা চলে এলাম ডেলো পাহাড়ে। এখন ব্যাপারটা হল, ডেলো পাহাড়ের ডাকবাংলো যে গত কয়েক মাস ধরে সব খবরের কাগজের পাতায় স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে সেটা আমাদের ঠিক মনে ছিল না। নাহলে সেটাও নাহয় দর্শন করা যেত। আপাতত আমাদের গাড়ী ডেলো পাহাড়ের ওপরের একটা পার্কের সামনে আমাদের নামিয়ে দিল। ততক্ষণে প্রায় চারটে বেজে গেছে। কিন্তু ততক্ষণে তাপমাত্রা নামতে শুরু করেছিল। সেই কনকনে ঠাণ্ডায় পিউ তো হাত-পা-দাঁত কেঁপে অস্থির। আমিও সেরকম জুত পাচ্ছিলাম না। সুতরাং মিনিট দশেক ঘুরে, ছবি-টবি তুলে, ফুচকা আর বাদাম ভাজা খেয়ে আমরা ফেরার রাস্তা ধরলাম।
সেখান থেকে বেরিয়ে সাঙ্গে আমাদের পরপর তিনটে বিশাল মূর্তি দেখাতে নিয়ে গেল। দুটো বুদ্ধ মূর্তি, আর একটা হনুমানের। আর সঙ্গে একটা দুর্গা মন্দিরেও নিয়ে গেছিল, কিন্তু সেটা ছিল বন্ধ। সব দেখে যখন মর্গান হাউসে ফিরলাম তখন চারদিক অন্ধকার হয়ে গেছে। ঠাণ্ডাও সেরকমই জমাটি।

গরম গরম কফি, ভেজ পাকোড়া আর এগ পাকোড়া খেতে খেতে সান্ধ্য আড্ডা চলল আমার আর পিউয়ের। মধ্যে অবশ্য সামান্য টেনশন হয়েছিল। কারণটা ছিল আমাদের বাকি ট্রিপের গাড়ী। আসলে, পরদিন সকালে কালিম্পং থেকে বাকি ট্রিপ মানে লাভা, লোলেগাঁও, গরুমারা আর জলদাপাড়ার জন্য আমাদের একটা গাড়ী ঠিক করা ছিল। কিন্তু সারা সন্ধ্যে চেষ্টা করেও তার মালিকের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করতে পারিনি। মনে মনে ঠিক করেই ফেলেছিলাম যে, গাড়ি থেকে ফোন না এলে কাল সকালে আবার রিসেপশনে কথা বলে এই সাঙ্গের গাড়ী নিয়েই লাভা চলে যাবো। যাই হোক, রাত প্রায় এগারোটা নাগাদ গাড়ীর মালিকের ফোন এসে গেল। জানিয়ে দিলেন কাল সকাল নটার মধ্যে ড্রাইভার গাড়ী নিয়ে মর্গান হাউসে উপস্থিত থাকবে।
রাত্তিরে চাঞ্চল্যকর কিছুই ঘটল না। মিসেস মর্গানও এলেন না আমাদের সঙ্গে দেখা করতে। বরং টিভিতে ‘বিগ বস’ আর ম্যান ইউনাইটেডের খেলার মধ্যে কোনটা দেখা হবে সেই নিয়ে তর্ক করতে করতেই পিউ ঘুমিয়ে পড়ল। তার আগে অবশ্যই পেট পুরে ফ্রাইড রাইস, চিলি চিকেন আর ক্যারামেল কাস্টার্ড দিয়ে নৈশাহার হয়ে গেছিল।

পরের গন্তব্য লাভা, ভুটানি ভাষায় যার মানে, ‘Heavenly abode of the Gods’, মানে আমার সঙ্গী গাইডবুকটি অন্তত তাই বলছিল!
(চলবে)

                                                                                                                                                   

No comments:

Post a Comment

"It’s always very easy to give up. All you have to say is ‘I quit’ and that’s all there is to it. The hard part is to carry on”